দ্রুত হজমশক্তি বাড়ানোর ১০টি কার্যকরী উপায়
দ্রুত হজমশক্তি বাড়ানোর ১০টি কার্যকরী উপায়
দ্রুত হজম শক্তি বাড়ানোর ১০টি কার্যকরী উপায় এ বিষয় নিয়ে আমাদের আজকের আর্টিকেল। আপনি যদি আর্টিকেলটি সম্পুর্ণ পাঠ করেন তাহলে হজম শক্তি বৃদ্ধির যে সব কার্যকরী পদক্ষেপ রয়েছে সেগুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
এই কন্টেন্টে আমরা হজম শক্তি কি,হজমশক্তির গুরুত্ব কি, হজমশক্তি কমে যাওয়ার কারণ কি, হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায় ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা পেশ করেছি। আপনি আমাদের সাথে থেকে দ্রুত হজম শক্তি বাড়ানোর কার্যকরী উপায় বিষয়ে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। আমাদের সাথেই থাকুন।
পেজ সূচিপত্রঃ দ্রুত হজমশক্তি বাড়ানোর ১০টি কার্যকরী উপায়
হজম শক্তি কি, হজম শক্তির গুরুত্ব কি
হজম শক্তি কমে যাওয়ার কারণ
হজমশক্তি বাড়ানোর ১০ টি কার্যকারী টিপস
শিশুদের হজমশক্তি বৃদ্ধির উপায়
লিভারের হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায়
হজমশক্তি বৃদ্ধির দু'আ
লেখকের শেষ মন্তব্য
দ্রুত হজমশক্তি বাড়ানোর ১০টি কার্যকরী উপায়
বর্তমান ব্যস্ত জীবনে অনিয়মিত খাওয়া, অল্প ব্যায়াম ও মানসিক চাপের কারণে হজম সমস্যায় ভোগেন বহু মানুষ। গ্যাস, বদহজম, পেট ফুলে থাকা বা অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা এখন ঘরে ঘরে সাধারণ ব্যাপার। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন ও কিছু ঘরোয়া কৌশল অনুসরণ করলে সহজেই হজমশক্তি বাড়ানো যায়। আজকের এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করবো দ্রুত হজমশক্তি বাড়ানোর ১০টি কার্যকরী উপায়।
হজম শক্তি কি, হজম শক্তির গুরুত্ব কি
হজম শক্তি হলো আমাদের দেহে খাওয়া খাবারকে ভেঙে পুষ্টিকর উপাদানে রূপান্তর করার ক্ষমতা। এই শক্তির মাধ্যমে খাবার হজম হয় এবং তার উপাদানগুলো রক্তে শোষিত হয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে পুষ্টি সরবরাহ করে। হজম প্রক্রিয়ায় মুখ, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র এবং বিভিন্ন এনজাইম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরো পড়ুনঃ
১. পুষ্টি শোষণ: হজম শক্তি ভালো হলে খাবার থেকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সহজেই রক্তে শোষিত হয়।
২. শরীরের শক্তি বৃদ্ধি: সঠিক হজমের ফলে খাবার থেকে প্রাপ্ত গ্লুকোজ ও অন্যান্য উপাদান শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, যা দৈনন্দিন কাজে শরীরকে সক্রিয় রাখে।
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: ভালো হজম শক্তি দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলে, কারণ হজমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত গাট বা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে ইমিউন সিস্টেমও উন্নত থাকে।
৪. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা: হজম শক্তি ভালো থাকলে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ সরবরাহ হয়, যা মনোযোগ ও স্মরণশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
৫. চর্ম ও ত্বকের সৌন্দর্য: সঠিক হজমের ফলে রক্ত পরিষ্কার থাকে, যার প্রভাব ত্বকের ওপর পড়ে। এটি ব্রণ, র্যাশ বা অন্যান্য ত্বকের সমস্যাও কমায়।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণ: হজম শক্তি ভালো থাকলে অতিরিক্ত চর্বি জমে না এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হজম শক্তি কমে যাওয়ার কারণ
হজম শক্তি কমে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। নিচে কয়েকটি সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হলোঃ
১. খাদ্যাভ্যাসের অনিয়মঃ অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, বেশি তেল-মসলা বা ভাজাপোড়া খাওয়া হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। খুব দ্রুত বা অতিরিক্ত খাওয়া হজমে সমস্যা করে।
২. জল কম খাওয়াঃ শরীরে পানির ঘাটতি হলে হজমের এনজাইমগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, ফলে হজম শক্তি কমে যায়।
৩. মানসিক চাপ ও উদ্বেগঃ মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা পাকস্থলীর কার্যকারিতা ব্যাহত করে। এটি হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম ও অ্যাসিড নিঃসরণে বাধা সৃষ্টি করে।
৪. ঘুমের অভাবঃ নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর ক্লান্ত থাকে এবং হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
৫. অব্যবস্থাপনায় জীবনযাপনঃ শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের অভাব। এক জায়গায় বসে থাকা বা অলস জীবনযাপন হজমে বাধা সৃষ্টি করে।
৬. বয়সজনিত কারণঃ বয়স বাড়ার সাথে সাথে হজমের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু এনজাইমের উৎপাদন কমে যেতে পারে।
৭. অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণঃ অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক বা অ্যাসিডিটি প্রতিরোধক ওষুধ বেশি খেলে হজমে ব্যাঘাত ঘটে।
৮. পেটের রোগঃ গ্যাস্ট্রিক, আলসার, লিভার সমস্যা, ইনটেস্টাইন ইনফেকশন ইত্যাদি রোগ হজম শক্তি কমিয়ে দিতে পারে।
৯. অ্যালকোহল ও ধূমপানঃ অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপান হজমতন্ত্রের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।
হজমশক্তি বাড়ানোর ১০ টি কার্যকারী টিপস
১। সকালের শুরু হোক এক গ্লাস গরম পানিতেঃ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা গরম পানি পান করলে হজমশক্তি দ্রুত বাড়ে। এটি পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং হজমের রস নিঃসরণে সহায়তা করে। গরম পানি অন্ত্রের গতি সচল রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পেট হালকা রাখে।
২। আদা ও লেবুর মিশ্রণঃ আদা একটি প্রাকৃতিক হজমকারক উপাদান। এক কাপ গরম পানিতে কয়েক টুকরো কাঁচা আদা ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে পেটের অস্বস্তি দূর হয়। এটি অ্যাসিডিটি ও গ্যাস কমায় এবং হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম সক্রিয় করে।
৩। অতিরিক্ত তেল-মশলা এড়িয়ে চলাঃ অতিরিক্ত তেল, ঝাল ও ভাজা খাবার হজমে বাধা দেয়। এই ধরনের খাবার পেট ভারি করে এবং হজমপ্রক্রিয়াকে ধীর করে তোলে। যতটা সম্ভব রান্নায় কম তেল ব্যবহার করুন এবং ভাজাপোড়া খাবার থেকে বিরত থাকুন।
৪। ফাইবারযুক্ত খাবার খানঃ ফাইবার (আঁশ) হজম প্রক্রিয়াকে সচল রাখে। এটি অন্ত্রে পানি ধরে রাখে এবং মলত্যাগ সহজ করে। ফাইবারযুক্ত খাবার যেমনঃ- সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, ওটস, দানাশস্য ইত্যাদি নিয়মিত খেলে হজমশক্তি অনেকগুণ বেড়ে যায়।
৫। প্রোবায়োটিক খাবার গ্রহণ করুনঃ দই, ছানা, ঘোল, কিমচি, আচার ইত্যাদি প্রোবায়োটিক খাবার অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলি হজমে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করে। প্রতিদিন অন্তত একবার প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।
৬। পর্যাপ্ত পানি পান করুনঃ হজমশক্তি বাড়াতে পানি অপরিহার্য। পানি পেটে খাবার ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের গতি সচল রাখে। দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন। খাওয়ার আগে বা পরে হালকা গরম পানি খাওয়াও উপকারী।
৭। নিয়মিত ব্যায়াম করুনঃ নিয়মিত ব্যায়াম হজমের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। হাঁটা, যোগব্যায়াম বা হালকা দৌড় অন্ত্রের চলাচল বাড়ায়, গ্যাস ও ফোলাভাব দূর করে। বিশেষ করে খাওয়ার পর অন্তত ১৫-২০ মিনিট হেঁটে নিলে হজম সহজ হয়।
৮। চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুনঃ খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে না খেলে তা পেটে সঠিকভাবে ভাঙে না, ফলে হজমে সমস্যা দেখা দেয়। প্রত্যেক কনো খাবার কমপক্ষে ২০-২৫ বার চিবিয়ে খাওয়া উচিত যাতে মুখের লালায় এনজাইমের কাজ সঠিকভাবে হয়।
৯। চিন্তা ও মানসিক চাপ কমানঃ হজম ও মস্তিষ্কের মাঝে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। মানসিক চাপ হজমকে বাধাগ্রস্ত করে। নিয়মিত মেডিটেশন, ভালো ঘুম এবং চাপমুক্ত জীবনযাপন হজমের উন্নতিতে সহায়ক।
১০। খাবার গ্রহণের সময় ও নিয়ম মেনে চলুনঃ একই সময়ে প্রতিদিন খাওয়া শরীরকে অভ্যস্ত করে তোলে এবং হজমের প্রস্তুতি নেয়। অনেক সময় না খেয়ে থাকা বা অতিরিক্ত খাওয়াও হজমের ব্যাঘাত ঘটায়। অতএব, নির্দিষ্ট সময়ে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
শিশুদের হজমশক্তি বৃদ্ধির উপায়
শিশুদের হজমশক্তি ভালো রাখা ও বৃদ্ধি করার জন্য কিছু প্রাকৃতিক ও কার্যকর উপায় আছে। নিচে শিশুদের হজমশক্তি বৃদ্ধির কিছু উপায় দেওয়া হলোঃ
১. সঠিক খাবার দেওয়াঃ শিশুকে বয়স অনুযায়ী সহজপাচ্য খাবার দিন যেমনঃ ডাল-ভাত, সেদ্ধ শাকসবজি, সেদ্ধ ফল। অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত বা প্যাকেটজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। আঁশযুক্ত খাবার যেমন পেঁপে, আপেল, ওটস হজমে সহায়তা করে।
২. পর্যাপ্ত পানি পান করানোঃ শিশুর শরীরে পানি ঘাটতি থাকলে হজমে সমস্যা হয়। দিনে কয়েকবার পানি পান করানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৩. খাওয়ার পর পর হাঁটাহাঁটিঃ খাবারের পর শিশুকে কিছুক্ষণ হাঁটাতে সাহায্য করুন। এতে খাবার সহজে হজম হয়।
৪. নিয়মিত খাবারের সময়সূচিঃ একেকদিন একেক সময়ে খাওয়ালে শিশুর হজমব্যবস্থা ব্যাহত হয়।প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৫. দই খাওয়ানোঃ দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিকস হজমে সহায়তা করে। প্রতিদিন একটুখানি দই শিশুর হজমশক্তি বাড়াতে সহায়ক।
৬. আদা ও জিরার পানি (১ বছর বয়সের পর)ঃ অল্প করে জিরা ফুটিয়ে বা সামান্য আদার রস দিয়ে পানি বানিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে (চিকিৎসকের পরামর্শে)।
৭. পরিপূর্ণ ঘুমঃ শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম না হলে হজমের সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুমানো নিশ্চিত করুন।
৮. শারীরিক সক্রিয়তাঃ ছোট ছোট খেলাধুলা বা নড়াচড়া শিশুর হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। সারাদিন বসে থাকলে হজমশক্তি কমে যায়।
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া কবে প্রয়োজন?
যদি শিশুর নিয়মিত পেট ব্যথা হয়।যদি প্রতিনিয়ত কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া বা বমি হয়। যদি ওজন কমে যায় বা খাবার খেতে চায় না। পরামর্শ: শিশুর বয়স, স্বাস্থ্যের অবস্থা ও পুষ্টির প্রয়োজন অনুযায়ী হজম সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।
লিভারের হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায়
লিভার আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা হজম প্রক্রিয়ায় বড় ভূমিকা পালন করে। লিভারের হজম শক্তি ভালো রাখতে এবং বৃদ্ধি করতে কিছু কার্যকরী উপায় নিচে তুলে ধরা হলোঃ
১. সুষম ও হালকা খাবার গ্রহণ করুনঃ অতিরিক্ত তেল, চর্বি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করুন। লিভারকে সুস্থ রাখতে তাজা শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, ডাল ও পূর্ণশস্য খাবার খান। খাবার যেন সহজপাচ্য হয় সে দিকেও খেয়াল রাখুন।
২. প্রচুর পানি পান করুনঃ প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করলে লিভার ডিটক্সিফাই হয়। হজমে সহায়তা করে এবং অতিরিক্ত বর্জ্য বের করে দেয়।
৩. শরীরচর্চা করুনঃ প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করলে হজম প্রক্রিয়া সচল থাকে এবং লিভারের কার্যকারিতা বাড়ে।
৪. প্রাকৃতিক ডিটক্স খাবার খানঃ লিভার পরিষ্কারের জন্য উপকারী কিছু খাবারঃ লেবু পানি: প্রতিদিন সকালে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খান। আদা ও রসুন: লিভারের এনজাইম উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে। আলুবোখারা ও বিট: লিভার পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
৫. অ্যালকোহল ও ধূমপান পরিহার করুনঃ এই অভ্যাসগুলো লিভারের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে এবং হজমে সমস্যা তৈরি করে।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ স্থূলতা লিভারে চর্বি জমার ঝুঁকি বাড়ায় (Fatty Liver) যা হজমশক্তি কমিয়ে দেয়।
৭. পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ মুক্ত জীবনযাপনঃ রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। মানসিক চাপ কম থাকলে হজমও ভালো হয় এবং লিভার তার কাজ ঠিকভাবে করতে পারে।
৮. নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিনঃ যদি হজমে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হয় বা লিভার নিয়ে কোনো জটিলতা থাকে, তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ
লিভারের হজমশক্তি উন্নত করতে হলে আমাদের খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করলে লিভার সুস্থ থাকবে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
হজমশক্তি বৃদ্ধির দু'আ
হজমশক্তি বৃদ্ধির জন্য কোরআন ও হাদিসে কিছু দোয়া ও আমল রয়েছে, যেগুলো নিয়মিত পাঠ করলে উপকার পাওয়া যায়। নিচে কয়েকটি সহিহ দোয়া ও আমল তুলে ধরা হলোঃ
১. সূরা কুরাইশ (সুরা ১০৬):
এই সূরাটি খাওয়ার পর পাঠ করলে খাবার হজমে সহায়তা করে।
আরবি: لِإِيلَافِ قُرَيْشٍ... (সম্পূর্ণ সূরা)
উপকার: খাবার পর নিয়মিত সূরা কুরাইশ পড়লে হজমের সমস্যা কমে যায়।
২. খাওয়ার আগে ও পরে দু'আঃ
খাওয়ার আগে: بِسْمِ اللَّهِ وَعَلَى بَرَكَةِ اللَّهِ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
অর্থ: “আল্লাহর নামে ও আল্লাহর বরকতে খাচ্ছি।”
খাওয়ার পরে: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا، وَرَزَقَنِيهِ، مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلَا قُوَّةٍ
উচ্চারণ: Alhamdulillahilladhi at'amani hadha, wa razaqanihi min ghayri hawlim minni wa la quwwah
অর্থ: “সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে এই খাবার দিলেন ও রিজিক দিলেন, আমার কোনো শক্তি বা সামর্থ্য ছাড়াই।” আরও কিছু আমল ও টিপসঃ
১. দু'আ ইউনুসঃ
لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
এ দোয়াটি কষ্টের সময়, শারীরিক সমস্যা বা দুর্বলতা থাকলে পাঠ করলে উপকার পাওয়া যায়।
২. সকালে ৭টি আজওয়া খেজুর খাওয়া:
হাদিস অনুযায়ী আজওয়া খেজুর খেলে বিষ ও যাদু থেকে নিরাপদ থাকা যায় এবং এটি হজমে সহায়ক।
৩. যিকিরঃ প্রতিদিন ১০০ বার "سبحان الله وبحمده" (সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি) পাঠ করলে অন্তর ও শরীর সুস্থ থাকে।
"يا حي يا قيوم برحمتك أستغيث" – এই দোয়াটি ক্লান্তি ও দুর্বলতার সময় হজমের সহায়ক হতে পারে।
চিকিৎসা পরামর্শসহ করণীয়ঃদু'আর পাশাপাশি নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করলে হজম শক্তি আরও ভালো হবেঃ একবারে বেশি খাবেন না, অল্প অল্প করে খান। পানি খাওয়ার ক্ষেত্রে ভারসাম্য রাখুন, খাবারের মাঝখানে খুব বেশি পানি খাবেন না। ঘুমের আগে হালকা হাঁটাহাঁটি করুন। চর্বি ও ভাজাপোড়া খাবার কম খান। আদা, জিরা, পুদিনা পাতার রস ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপায়ে হজমের জন্য ভালো।
বদহজমের লক্ষণ গুলি কি কি
বদ হজম বা ডাইজেশন সমস্যার বেশ কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে। নিচে বদ হজমের প্রধান লক্ষণগুলো উল্লেখ করা হলোঃ
১। পেট ফাঁপা (Bloated Feeling) – পেটে গ্যাস জমে ফুলে ওঠা অনুভূত হয়।
২। বুক জ্বালা বা অম্লতা (Heartburn or Acidity) – বুকের মাঝখান বা উপরের দিকে জ্বালাপোড়া অনুভব হয়।
৩। অতিরিক্ত ঢেঁকুর (Excessive Burping) – বারবার ঢেঁকুর ওঠে, অনেক সময় এতে অস্বস্তি তৈরি হয়। ৪। গ্যাস্ট্রিক বা পেটে গ্যাস জমা (Gas and Flatulence) – পেটে গ্যাস জমে ব্যথা বা চাপ অনুভব হয়।
৫। বমি ভাব বা বমি (Nausea or Vomiting) – খাওয়ার পর বমি বমি ভাব হতে পারে, কখনো বমি হয়েও যেতে পারে।
৬। খিদে না লাগা (Loss of Appetite) – খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায় বা ক্ষুধা লাগে না।
৭। মলত্যাগে সমস্যা (Irregular Bowel Movements) – ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৮। পেটে অস্বস্তি বা ব্যথা (Abdominal Discomfort or Pain) – মাঝেমধ্যে হালকা থেকে মাঝারি ব্যথা হতে পারে।
৯। খাবার হজম না হওয়া (Feeling of Incomplete Digestion) – খাওয়ার পর মনে হয় খাবার হজম হয়নি বা পেটে আটকে আছে। এই লক্ষণগুলো যদি নিয়মিত দেখা যায়, তবে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে সমস্যার সমাধান করা যায়।
লেখকের শেষ মন্তব্য
হজমশক্তি বাড়ানো কোনো যাদুবিদ্যা নয়, এটি সম্পূর্ণভাবে আমাদের অভ্যাস ও জীবনযাপনের উপর নির্ভর করে। উপরোক্ত নিয়মগুলি প্রতিদিন মেনে চললে আপনি খুব দ্রুত হজমজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। সুস্থ হজম মানেই সুস্থ জীবন। তাই আজ থেকেই এই অভ্যাসগুলো নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করুন এবং সুস্থ থাকুন।
এতক্ষণ আমরা হজম শক্তি বাড়ানোর বিভিন্ন টিপস নিয়ে আলোচনা করেছি এবং কিভাবে সুস্থ থাকা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছি। আপনি আমাদের সাথে সময় দিয়ে বিষ্যগুলি জানার চেষ্টা করেছেন এজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আরো অন্যান্য বিষয়ে জানতে চাইলে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত অনুসরণ করুন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url