বাদাম কেন খাবেন, বাদাম খাওয়ার ২০টি উপকারিতা ও অপকারিতা
বাদাম আমাদের খাদ্যতালিকায় অন্যতম পুষ্টিকর একটি উপাদান। এতে রয়েছে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের শরীরের সামগ্রিক সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রতিদিন বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক উপকারিতা নিয়ে আসতে পারে। আমি এই আর্টিকেলে বাদামের বিভিন্ন বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি বাদাম সম্বন্ধে জানতে চাইলে এই প্রবন্ধটি প্রথম থেকে শেষ করবেন পর্যন্ত পাঠ করুন।
বাদামের যত পুষ্টিগুণ
বাদাম খাওয়ার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ
কোন কোন বাদাম প্রতিদিন খাওয়া উচিত
প্রতিদিন কতটুকু বাদাম খাবেন
বাদাম খাওয়ার সঠিক নিয়ম
বাদাম খাওয়ার ২০টি উপকারিতা
নিয়মিত কেন বাদাম খাবেন
বাদাম খাওয়ার অপকারিতা
আমাদের শেষ কথাঃ বাদাম কেন খাবেন এবং বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
বাদাম কেন খাবেন, বাদাম খাওয়ার ২০টি উপকারিতা ও অপকারিতা
✅ বাদাম খাওয়ার উপকারিতা:১। হৃদযন্ত্র সুরক্ষা করে ২। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ৩। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে ৪। ওজন কমাতে সহায়ক ৫। ত্বক উজ্জ্বল করে ৬। চুল মজবুত করে ৭। স্মৃতিশক্তি বাড়ায় ৮। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর ৯। ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে ১০। হাড় মজবুত করে ১১। পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে ১২। হরমোন ব্যালেন্স রাখে ১৩। স্ট্রেস কমায় ১৪ ঘুম ভালো হয় ১৫। বয়সের ছাপ কমায় ১৬। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ১৭।গর্ভবতী নারীর জন্য উপকারী ১৮। ব্রেইন ডেভেলপমেন্টে সহায়ক (শিশুদের) ১৯। শরীরে শক্তি বাড়ায় ২০। ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক।
আরো পড়ুনঃ
✅বাদাম খাওয়ার অপকারিতাঃ ১। অতিরিক্ত ক্যালোরি – ওজন বাড়তে পারে ২। অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে ৩। পেট ফাঁপা বা গ্যাস হতে পারে ৪। অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা ৫। নমকযুক্ত বাদাম রক্তচাপ বাড়াতে পারে ৬। কিডনির রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে ৭। বাচ্চাদের গিলতে সমস্যা হতে পারে ৮। অতিরিক্ত খেলে ত্বকে ব্রণ হতে পারে ৯। বেশি খেলে বমি বা বমিভাব হতে পারে ১০। ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে।
নিয়মিত ও পরিমাণমতো বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া নিরাপদ।
বাদাম কি এবং বাদাম কত প্রকার ও কি কি
বাদাম হলো এক ধরনের বীজ বা শস্য, যা সাধারণত খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। বাদাম পুষ্টিকর এবং এতে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। বাদামের প্রকারভেদ: বাদাম মূলত দুই প্রকারঃ
১। আসল বাদামঃ এগুলো শক্ত খোলসযুক্ত এবং এক ধরনের শুকনো ফল। যেমন:হেজেল নাট , চকো নাট ।
২। ছদ্ম বাদামঃ এগুলো মূলত বীজ বা শুঁটি জাতীয় হলেও বাদামের মতোই খাওয়া হয়। যেমন: শুঁটি জাতীয় বাদাম, চিনাবাদাম, ড্রুপ জাতীয় বাদাম, কাজু বাদাম, আমন্ড/বাদাম গাছের বাদাম, পেস্তা বাদাম, আখরোট, বীজ জাতীয় বাদাম, সূর্যমুখী বীজ,কুমড়ার বীজ। প্রত্যেক ধরনের বাদাম আলাদা পুষ্টিগুণ এবং স্বাদ বহন করে।
বাদামের যত পুষ্টিগুণ
বাদামের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে, যা শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটায়। প্রোটিন: বাদামে উচ্চমাত্রার প্রোটিন থাকে, যা পেশির গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করে। স্বাস্থ্যকর ফ্যাট: বাদামে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং মনো ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা হার্টের জন্য উপকারী।ফাইবার: এটি হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। ভিটামিন ও মিনারেল: বাদামে রয়েছে ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক, ফসফরাস ইত্যাদি, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: বাদামের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের কোষগুলোর সুরক্ষা প্রদান করে এবং বয়সজনিত সমস্যা কমাতে সহায়তা করে।
বাদাম খাওয়ার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ
১. হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ বাদামে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হার্টের জন্য উপকারী। এটি রক্তনালিগুলো সুস্থ রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
২. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেঃ অনেকেই মনে করেন বাদামে চর্বি বেশি থাকে, তাই এটি ওজন বাড়াতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাদামে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ফাইবার ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ থেকে বিরত রাখে।
৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ বাদামে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেও সহায়ক।
৪. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ বাদামে থাকা ভিটামিন ই এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং আলঝেইমার ও স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি কমায়।
৫. হাড়ের গঠন মজবুত করেঃ বাদামে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকে, যা হাড়ের গঠন মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
৬. ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেঃ বাদামে থাকা ভিটামিন ই ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের সুরক্ষা দেয় এবং বলিরেখা, ডার্ক স্পট ও শুষ্কতা প্রতিরোধ করে।
৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ বাদামে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক।
৮. হজমশক্তি উন্নত করেঃ বাদামের উচ্চ ফাইবার উপাদান অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।
৯. স্ট্রেস ও উদ্বেগ কমায়ঃ বাদামের ম্যাগনেসিয়াম ও ট্রিপটোফ্যান উপাদান মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে এবং মুড ভালো রাখে।
১০. ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়ঃ বাদামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান দেহের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
কোন কোন বাদাম প্রতিদিন খাওয়া উচিত
নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের বাদাম খাওয়া উপকারী হতে পারে। যেমনঃ আখরোট: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। আমন্ড: ভিটামিন ই সমৃদ্ধ, যা ত্বক ও চুলের জন্য ভালো।কাজু: স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও আয়রন সমৃদ্ধ, যা শক্তি বৃদ্ধি করে। পেস্তা: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা হার্টের জন্য ভালো। চিয়া ও ফ্ল্যাক্স সিড: ফাইবার ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ, যা হজম ও হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
প্রতিদিন কতটুকু বাদাম খাবেন
প্রতিদিন ২৫-৩০ গ্রাম বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যকর হতে পারে। এটি সাধারণত এক মুঠো বাদামের সমান। তবে অতিরিক্ত বাদাম খেলে ক্যালোরি বৃদ্ধি পেতে পারে, যা ওজন বাড়ানোর কারণ হতে পারে।
বাদাম খাওয়ার সঠিক নিয়ম
কাঁচা বা ভেজানো বাদাম: কাঁচা বাদাম বা রাতে পানিতে ভিজিয়ে সকালে খেলে সহজে হজম হয়। বিনা লবণ ও মসলার বাদাম: লবণযুক্ত বা ভাজা বাদামের পরিবর্তে প্রাকৃতিক বাদাম খাওয়া ভালো। স্মুদি ও সালাদে ব্যবহার: বাদাম স্মুদি বা সালাদে যোগ করে খেলে স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বাড়ে। বাদাম খাওয়ার সতর্কতাঃ বাদামের অ্যালার্জি থাকলে এড়িয়ে চলা উচিত। অতিরিক্ত বাদাম খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। উচ্চ ক্যালোরির কারণে পরিমিত মাত্রায় খাওয়া জরুরি।
বাদাম খাওয়ার ২০টি উপকারিতা
বাদাম পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি খাদ্য যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এমন এক ধরনের পুষ্টিকর খাবার যা প্রাকৃতিকভাবে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি, ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। নিয়মিত বাদাম খাওয়ার ফলে শরীরের বিভিন্ন দিকের উপকার হয়। নিচে বিস্তারিতভাবে ২০টি উপকারিতা তুলে ধরা হলোঃ
১. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ বাদামে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটস রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
২. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ বাদামে থাকা ভিটামিন ই, ম্যাগনেশিয়াম ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট স্মৃতিশক্তি বাড়ায় ও স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে। বিশেষ করে আখরোট বা কাঠবাদাম মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেঃ বাদাম প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ, যা পেট ভরা রাখে। এতে ক্ষুধা কমে যায় এবং অতিরিক্ত খাওয়া কম হয়, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৪. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেঃ বাদামে থাকা ভিটামিন ই, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বককে মসৃণ, উজ্জ্বল ও বলিরেখা মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়কঃ বাদামে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম এবং ফাইবার বেশি, যা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বাদাম অত্যন্ত উপকারী।
৬. হাড় মজবুত করেঃ বাদামে থাকা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস হাড়ের গঠন শক্তিশালী করে এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
৭. ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস করেঃ বাদামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান শরীরের কোষে ফ্রি র্যাডিক্যাল প্রতিরোধ করে, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক।
৮. চুলের স্বাস্থ্যে উপকারীঃ বাদামে থাকা জিংক, বায়োটিন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড চুল পড়া কমায় এবং চুলের গঠন সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর করে তোলে।
৯. হজমে সাহায্য করেঃ বাদামে উচ্চমাত্রায় ফাইবার থাকে, যা হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
১০. অনাক্রম্যতা শক্তি বৃদ্ধি করেঃ বাদামে থাকা ভিটামিন বি, ভিটামিন ই ও সেলেনিয়াম রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দেহকে ইনফেকশন থেকে সুরক্ষা দেয়।
১১. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায়ঃ বাদামে থাকা ম্যাগনেশিয়াম ও ট্রিপটোফ্যান মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং মন ভালো রাখতে সহায়তা করে।
১২. গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারীঃ বাদামে থাকা ফলেট ও আয়রন গর্ভবতী নারীর ভ্রূণের বিকাশে সাহায্য করে এবং রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে।
১৩. চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখেঃ বিশেষত আমন্ড বা কাঠবাদামে থাকা ভিটামিন ই চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে এবং বয়সজনিত চোখের রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
১৪. বয়ঃসন্ধিকালের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করেঃ শরীর বৃদ্ধির সময় ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও প্রোটিন দরকার হয়, যা বাদামে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে।
১৫. ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করেঃ নিয়মিত বাদাম খেলে শরীরের ইনসুলিন রেসপন্স ভালো হয়, ফলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সহজ হয়।
১৬. হরমোন ব্যালেন্স করেঃ বাদামের জিঙ্ক ও স্বাস্থ্যকর চর্বি হরমোন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, বিশেষ করে নারীদের হরমোন ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে।
১৭. লিভারের কার্যক্ষমতা উন্নত করেঃ বাদামে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান লিভার পরিষ্কার রাখে ও বিষাক্ত উপাদান অপসারণে সহায়তা করে।
১৮. বয়স ধীর করেঃ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড বয়সের লক্ষণগুলো কমিয়ে রাখে ও ত্বককে টানটান ও প্রাণবন্ত রাখে।
১৯. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ বাদামে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
২০. শক্তি বৃদ্ধি করেঃ বাদাম তাৎক্ষণিকভাবে শক্তি যোগায় কারণ এতে প্রাকৃতিক ফ্যাট ও প্রোটিন থাকে, যা শরীরকে সক্রিয় রাখে।
✅ প্রতিদিন সামান্য পরিমাণ বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। তবে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এতে উচ্চ ক্যালোরি রয়েছে। ডায়েট ও স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শে বাদাম খাওয়া উত্তম।
নিয়মিত কেন বাদাম খাবেন
নিম্নলিখিত কারণে আপনি নিয়মিত বাদাম খাবেন তাহলে আপনার স্বাস্থ্য উপকারিতা পর্যাপ্ত পরিমাণে পাবেন।
কাঠবাদামঃ হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো, ত্বক উজ্জ্বল রাখে।
আখরোটঃ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়।
চিনাবাদামঃ প্রোটিনের ভালো উৎস, ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ
পেস্তাবাদামঃ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
হেজেলনাটঃ হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
সকালে খালি পেটে ভেজানো বাদাম খেলে ভালো। স্ন্যাকস হিসেবে খেতে পারেন (তবে অতিরিক্ত লবণ বা তেলযুক্ত বাদাম এড়িয়ে চলা ভালো)। স্মুদি, সালাদ, ওটমিল বা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে বাদাম খেতে পারেন।
বাদাম খাওয়ার অপকারিতা
বাদাম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাওয়ার কিছু অপকারিতা থাকতে পারে। নিচে কিছু সাধারণ অপকারিতা উল্লেখ করা হলোঃ
১. অ্যালার্জি সমস্যাঃ অনেক মানুষের বাদামের প্রতি অ্যালার্জি থাকে, যা ত্বকের চুলকানি, ফোলা, শ্বাসকষ্ট এমনকি অ্যানাফাইল্যাক্সিস (প্রাণঘাতী প্রতিক্রিয়া) সৃষ্টি করতে পারে।
২. ওজন বৃদ্ধিঃ বাদামে প্রচুর ক্যালরি ও ফ্যাট থাকে। অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
৩. হজমজনিত সমস্যাঃ বাদামে ফাইবার বেশি থাকায় অতিরিক্ত খেলে গ্যাস্ট্রিক, পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪. অক্সালেটের কারণে কিডনির সমস্যাঃ কিছু বাদামে (যেমন কাজু বাদাম) বেশি পরিমাণ অক্সালেট থাকে, যা বেশি খেলে কিডনির পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
৫. আফ্লাটক্সিন বিষক্রিয়াঃ ভেজা বা সংরক্ষণ ঠিকমতো না করলে বাদামে আফ্লাটক্সিন নামে এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ তৈরি হতে পারে, যা লিভারের ক্ষতি করতে পারে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৬. সোডিয়ামের কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধিঃ লবণযুক্ত বা প্রক্রিয়াজাত বাদাম বেশি খেলে রক্তচাপ বাড়তে পারে, যা হার্টের জন্য ক্ষতিকর।
৭. শর্করার ভারসাম্য নষ্ট হতে পারেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিছু বাদাম (যেমন চিনাবাদাম) বেশি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
কীভাবে নিরাপদে বাদাম খাবেনঃ পরিমাণমতো বাদাম খান (প্রতিদিন ২০-৩০ গ্রাম যথেষ্ট)। কাঁচা বাদাম খাওয়ার চেয়ে ভেজে বা সিদ্ধ করে খাওয়া ভালো। সংরক্ষণ ভালোভাবে করুন, যেন এতে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া না জন্মায়। যাদের বাদামে অ্যালার্জি আছে, তারা একেবারেই বাদাম এড়িয়ে চলুন।
আমাদের শেষ কথাঃ বাদাম কেন খাবেন, বাদাম খাওয়ার ২০টি উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রতিদিন বাদাম খাওয়ার অভ্যাস আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি শুধু পুষ্টি সরবরাহ করে না, বরং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা, ওজন নিয়ন্ত্রণ, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোসহ নানান উপকারে আসে। তবে পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। সঠিকভাবে ও পরিমিত মাত্রায় বাদাম খেলে সুস্থ জীবনযাপন করা সহজ হবে।
এতক্ষণ আমি বাদামের বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি যদি এই প্রবন্ধটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন তাহলে বাদাম সংক্রান্ত অনেক বিষয়ে জানতে পারবেন। আরো অন্যান্য বিষয় জানতে চাইলে আমাদের এই ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url