কিভাবে এনআইডি সংশোধন করবেন: পদ্ধতি জেনে নিন

 কিভাবে এনআইডি সংশোধন করবেন: পদ্ধতি জেনে নিন

আপনাদের সবারই জাতীয় পরিচয় পত্র আছে কিন্তু অনেকেরই এনআইডি ভুলে ভরা। এই ভুল এন আইডি নিয়ে বিভিন্ন জরুরী কাজে বাধা্র সম্মুখীন হচ্ছেন, সঠিকভাবে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এনআইডি সংশোধন করা অতীব জরুরী।

এই আর্টিকেলে আমরা আপনাকে জানাবো কীভাবে এনআইডি সংশোধন করবেন,  সম্পূর্ণ অনলাইন এবং অফলাইন পদ্ধতি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, কত ফি দিতে হয়, কতদিন লাগে, এবং আরও অনেক কিছু। আপনি আমাদের সাথে থেকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই আর্টিকেলটি অধ্যয়ন করবেন তাহলে বিস্তারিত বিষয় জানতে পারবেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ কিভাবে এনআইডি সংশোধন করবেন: পদ্ধতি জেনে নিন
কিভাবে এনআইডি সংশোধন করবেন: পদ্ধতি জেনে নিন
এনআইডি সংশোধনের প্রয়োজন কেন হয়
 এনআইডি সংশোধনের পদ্ধতি জেনে নিন
এনআইডি সংশোধনে অনলাইনে আবেদন 
এনআইডি সংশোধনে অফলাইনে  আবেদ
এনআইডি সংশোধনের প্রয়োজন কেন হয়
 এনআইডি কিভাবে সংশোধন করবেন: সম্পূর্ণ গাইডলাইন ( নতুন নিয়ম ২০২৫যেসব তথ্য সংশোধন করতে চান সেগুলো নির্বাচন করুন, সঠিক তথ্য দিন
এনআইডি  সংশোধনে ভবিষ্যতের জন্য করণীয়
লেখকের মন্তব্য

কিভাবে এনআইডি সংশোধন করবেন: পদ্ধতি জেনে নিন

জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। ভোট দেওয়া, ব্যাংক হিসাব খোলা, পাসপোর্ট তৈরি, জমি রেজিস্ট্রি, চাকরির আবেদনসহ সব সরকারি-বেসরকারি কার্যক্রমে এটি অপরিহার্য। তবে অনেক সময় এনআইডিতে ভুল তথ্য যেমন: নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা ইত্যাদি দেখা যায়। 

আরো পড়ুনঃ

এ রকম ক্ষেত্রে সংশোধনের প্রয়োজন হয়। এই কনটেন্টে আমরা জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া আলোচনা করব। আশা করি আপনি এখান থেকে এনআইডি সংশোধন বিষয়ে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।

 এনআইডি সংশোধনের পদ্ধতি জেনে নিন

বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) একজন নাগরিকের পরিচয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। কিন্তু অনেক সময় এনআইডিতে নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা কিংবা অন্যান্য তথ্য ভুল থাকে। এ ক্ষেত্রে NID সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে। নিচে ধাপে ধাপে এনআইডি সংশোধনের পদ্ধতি তুলে ধরা হলোঃ

এনআইডি সংশোধনে অনলাইনে আবেদন 

 জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য আপনাকে প্রথমে জাতীয় পরিচয়পত্রের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ যেতে হবে। ধাপসমূহঃ

 ১। ওয়েবসাইটে গিয়ে "Re-Registration" বা "Apply for Correction" অপশনটি সিলেক্ট করুন।

২।  আপনার এনআইডি নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে লগইন করুন (যদি আগে অ্যাকাউন্ট করে থাকেন) অথবা নতুন করে নিবন্ধন করুন।

৩। লগইন করার পর সংশোধনযোগ্য তথ্যগুলোর তালিকা পাবেন। যেখানে যেটা ভুল আছে, সেটা সঠিক তথ্য দিয়ে পরিবর্তন করুন।

৪।  প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে আপলোড করুন (যেমন: জন্মসনদ, শিক্ষাগত সনদ, বৈবাহিক সনদ ইত্যাদি)।

৫।  নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি (যদি প্রযোজ্য হয়) পরিশোধ করুন বিকাশ, নগদ বা ব্যাংকের মাধ্যমে।

৬।. আবেদন সাবমিট করে কনফার্মেশন রিসিপ্ট ডাউনলোড করুন।

এনআইডি সংশোধনে অফলাইনে  আবেদ

১। অফলাইনে (উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে) আবেদনঃ  যদি অনলাইনে করতে না পারেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে সরাসরি গিয়ে আবেদন করতে পারেন। যা যা নিয়ে যেতে হবেঃ  আপনার বর্তমান এনআইডি কার্ড বা নম্বর, সংশোধনের সপক্ষে প্রমাণপত্র (যেমন: জন্ম সনদ, শিক্ষাগত সনদ, পাসপোর্ট ইত্যাদি)। 

২। পাসপোর্ট সাইজের ছবি (প্রয়োজনে), সংশোধনের জন্য নির্ধারিত ফি,  নির্বাচন অফিস থেকে একটি ফর্ম দেওয়া হবে, সেটি পূরণ করে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ জমা দিতে হবে।

৩. কোন কোন তথ্য সংশোধন করা যায়ঃ নাম (নিজের, পিতা-মাতা বা স্বামীর), জন্মতারিখ, স্থায়ী বা বর্তমান ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, ছবি ইত্যাদি।

৪. সংশোধনের জন্য কতদিন লাগেঃ  সাধারণত অনলাইনে আবেদনের পর যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে ১০-৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশোধন সম্পন্ন হয়। তবে এটি সময়সাপেক্ষও হতে পারে।

৫. কত টাকা ফি দিতে হয়ঃ  সাধারণ সংশোধনের জন্য: ২৩০ টাকা, জরুরি সংশোধনের জন্য: ৩৪৫ টাকা, (ফি পরিবর্তন হতে পারে, সর্বশেষ তথ্য ওয়েবসাইট থেকে যাচাই করে নিন।)। 

৬. সংশোধনের অবস্থা কিভাবে জানবেনঃ  আপনি services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার এনআইডি নম্বর দিয়ে আবেদনের স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন।

এনআইডি সংশোধনের প্রয়োজন কেন হয়

অনেক সময় এনআইডি ডাটাবেযে তথ্য ত্রুটি থেকে যায়, যেমনঃ  নামের বানান ভুল, জন্মতারিখ ভুল, ঠিকানায় বিভ্রান্তি, শিক্ষাগত যোগ্যতা বা পেশায় ভুল, ছবি অস্পষ্ট বা পুরনো। এই তথ্যগুলো ভুল থাকলে আপনার দৈনন্দিন কাজে সমস্যা হতে পারে। তাই দ্রুত সংশোধন করা জরুরি।

 এনআইডি কিভাবে সংশোধন করবেন: সম্পূর্ণ গাইডলাইন ( নতুন নিয়ম ২০২৫)

এনআইডি সংশোধনের ২টি প্রধান পদ্ধতি

১. অনলাইনে (NID ওয়েবসাইটের মাধ্যমে)

২. অফলাইনে (উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে)

১. অনলাইনে এনআইডি সংশোধন করবেন যেভাবে

ধাপ ১: NID সার্ভিস পোর্টালে প্রবেশ করুন

ওয়েবসাইট: https://services.nidw.gov.bd

ধাপ ২: অ্যাকাউন্ট তৈরি বা লগইন করুন

আপনার এনআইডি নম্বর ও জন্মতারিখ ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন করুন।

OTP (একবার ব্যবহারযোগ্য কোড) মোবাইলে পাবেন।

লগইন করে প্রোফাইলে প্রবেশ করুন।

ধাপ ৩: সংশোধনের আবেদন শুরু করুন

"Apply for Correction" মেনুতে যান

যেসব তথ্য সংশোধন করতে চান সেগুলো নির্বাচন করুন, সঠিক তথ্য দিন

ধাপ ৪: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করুনঃ  সংশোধনের ধরনঃ  প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র, নাম শিক্ষাগত সনদ, জন্ম সনদ, আদালতের আদেশ (যদি থাকে), জন্মতারিখ, জন্ম সনদ, স্কুল সার্টিফিকেট, ঠিকানা, ইউপি সার্টিফিকেট, গ্যাস/বিদ্যুৎ বিল, পিতা-মাতা/স্বামীর নাম,  জন্ম সনদ, বিবাহ সনদ, ছবি, সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজ ছবি।

ধাপ ৫: ফি পরিশোধ করুনঃ  বিকাশ/নগদ/রকেট অথবা ব্যাংকের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে পারবেন।  সফলভাবে পেমেন্ট হলে আবেদন সাবমিট করুন। 

ধাপ ৬: কনফার্মেশন রিসিপ্ট ডাউনলোড করুনঃ আবেদন সাবমিশনের পর একটি রিসিপ্ট পাবেন।সেটি প্রিন্ট বা স্ক্রিনশট করে রাখুন।

২. অফলাইনে এনআইডি সংশোধন করবেন যেভাবেঃ কোথায় যাবেনঃ  আপনার স্থানীয় উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করুন।

যা যা নিতে হবেঃ আপনার বর্তমান এনআইডি কপি, সংশোধনের সপক্ষে কাগজপত্র,  আবেদন ফর্ম (অফিস থেকে পাওয়া যাবে), পাসপোর্ট সাইজ ছবি, সংশ্লিষ্ট ফি, আবেদন জমা দিন ও রিসিভ সংগ্রহ করুন। আবেদন ফর্ম পূরণ করে কাগজপত্রসহ অফিসে জমা দিন। একটি রিসিভ কপি আপনাকে দেওয়া হবে, যেটি ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করুন।

কত টাকা ফি দিতে হয়ঃ সেবা ফি, সাধারণ সংশোধন ২৩০ টাকা,  জরুরি সংশোধন ৩৪৫ টাকা, (ফি সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে, NID ওয়েবসাইট থেকে যাচাই করুন।)

কতদিনে সংশোধন হবেঃ  সাধারণত ১৫-৩০ কর্মদিবস সময় লাগে। তবে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের উপর নির্ভর করে সময় পরিবর্তিত হতে পারে।

আপনার আবেদনের অবস্থা কিভাবে জানবেনঃ  অনলাইনে লগইন করে “Check Application Status” অপশনে গিয়ে জানতে পারবেন।  প্রয়োজনে জেলা নির্বাচন অফিসে ফোন করে খোঁজ নিতে পারেন।বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও পরামর্শঃ

 ১. OTP পাচ্ছেন নাঃ মোবাইল নম্বরটি সঠিক আছে কি না যাচাই করুন। মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল আছে কি না দেখুন। প্রয়োজনে আবার রিকোয়েস্ট করুন।

 ২. ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে সমস্যাঃ রাত বা সরকারি ছুটির দিনে সার্ভারে চাপ বেশি থাকে। Google Chrome ব্যবহার করুন।

৩. অনলাইন সাবমিশনের পরেও কিছু সংশোধন বাকিঃ  সেক্ষেত্রে অফিসে গিয়ে লিখিত আবেদন দিন।প্রয়োজনে RTI (তথ্য অধিকার আইন) এর মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন।

এনআইডি সংশোধনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

১. জন্ম সনদ (বাংলাদেশ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত)

২. শিক্ষাগত সনদ (এসএসসি, এইচএসসি ইত্যাদি)

৩. বিবাহ সনদ (যদি স্বামীর নাম সংশোধন করতে চান)

৪. ঠিকানা প্রমাণপত্র (বিদ্যুৎ বিল, ইউপি সনদ, পাসপোর্ট)

৫. আদালতের রায় (বিশেষ ক্ষেত্রে)

এনআইডি  সংশোধনে ভবিষ্যতের জন্য করণীয়

আপনার সকল অফিসিয়াল ডকুমেন্ট যেন একইরকম থাকে তা নিশ্চিত করুন। জন্মের পরপরই সঠিক তথ্য দিয়ে জন্ম সনদ তৈরি করুন। যে কোন সরকারি কাগজ তৈরি করার আগে তথ্য যাচাই করে নিন।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন (FAQs)ঃ  ১. একাধিকবার সংশোধন করা যায় কিঃ  হ্যাঁ, তবে বারবার সংশোধন করার কারণ দেখাতে হবে এবং অতিরিক্ত প্রমাণপত্র দিতে হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ

২. জন্ম তারিখ কি সম্পূর্ণ পরিবর্তন করা যায়ঃ  না। জন্মতারিখ শুধুমাত্র একবার এবং যৌক্তিক প্রমাণে সংশোধনযোগ্য। 

৩. ছবি পরিবর্তন করা যাবে কিঃ হ্যাঁ, সদ্যতোলা ছবি আপলোড করে ছবি পরিবর্তন করা যায়।

৪. অনলাইন আবেদন না করলে কি এনআইডি সংশোধন সম্ভবঃ হ্যাঁ, সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে অফলাইনে আবেদন করতে পারবেন।

লেখকের মন্তব্য

এনআইডি সংশোধন এখন খুব সহজ একটি প্রক্রিয়া। আপনি চাইলে বাসায় বসেই অনলাইনে সংশোধনের আবেদন করতে পারেন, আবার অফিসে গিয়েও করতে পারেন। তবে সঠিক তথ্য, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নিয়ম মেনে কাজ করলেই সমস্যাহীনভাবে এনআইডি সংশোধন সম্ভব।

আপনি আমাদের ওয়েবসাইটে এন আই ডি সংশোধনের বিভিন্ন পদ্ধতি আশা করি জানতে পেরেছেন। এবং এ বিষয়গুলি আপনার নিকট আত্মীয়দের সাথে শেয়ার করবেন তারা এ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। এ ছাড়া নিয়মিত অন্যান্য বিষয়ের উপর আর্টিকেল লিখে থাকি। আপনি চাইলে সেগুলো সমাধান জানতে পারবেন যদি আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত পরিদর্শন করেন। 









এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url