স্কুলে ভর্তির আগে শিশুকে যে বিষয়গুলো শেখানো উচিত

 স্কুলে ভর্তির আগে বাচ্চাকে কী কী শেখানো উচিত

স্কুলে ভর্তির আগে শিশুকে কোন কোন বিষয় শেখানো উচিত, কেন তা জরুরি এবং কীভাবে শেখাবেন—এসব তথ্যসহ একটি পূর্ণাঙ্গ এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল। জেনে নিন সর্বশেষ গবেষণা ও বাস্তবভিত্তিক পরামর্শ।

আপনি আমাদের এই কনটেন্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করুন এবং এখান থেকে জ্ঞান অর্জন করে আপনার পরিচিতজন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। 

পেজ  সূচিপত্রঃ স্কুলে ভর্তির আগে শিশুকে যে বিষয়গুলো শেখানো উচিত

✅ স্কুলে ভর্তির আগে শিশুকে যে বিষয়গুলো শেখানো উচিত
🧠 স্কুলে ভর্তির আগে শিশুকে  নিম্নলিখিত বিষয়গুলো শেখানো উচিত
📋 স্কুলে ভর্তির আগে শেখানো উচিত আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
🧩 স্কুলে ভর্তির আগে শিশুকে শেখানোর কিছু সহজ উপায়
📊 স্কুলে ভর্তির আগে শিশুকে শেখানোর কিছু গবেষণা ও পরিসংখ্যান
✅ স্কুলে ভর্তির আগে শিশুর বাবা-মা ও অভিভাবকের করণীয়
✍️ লেখকের শেষ কথাঃ স্কুলে ভর্তির আগে শিশুকে যে বিষয়গুলো শেখানো উচিত

✅ স্কুলে ভর্তির আগে শিশুকে যে বিষয়গুলো শেখানো উচিত

প্রতিটি শিশুর জীবনে স্কুলে যাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই যাত্রার শুরু হয় প্রাক-প্রাথমিক বা প্লে-গ্রুপে ভর্তি দিয়ে। কিন্তু স্কুলে ভর্তির আগেই কিছু প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি তৈরি করে দেওয়া জরুরি, যাতে শিশুর মানসিক ও সামাজিক উন্নয়ন যথাযথভাবে হয়। আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব—শিশু স্কুলে ভর্তির আগে কী কী শিখবে, কেন এই শিক্ষা প্রয়োজন, এবং কীভাবে শেখানো উচিত।

আরো পড়ুনঃ 

স্কুলে ভর্তির আগে শিশুকে নিচের বিষয়গুলো সংক্ষেপে শেখানো উচিত:ঃ 

১।  নিজের নাম ও ঠিকানা বলা – শিশু যেন নিজের নাম, বাবা-মার নাম ও ঠিকানা বলতে পারে। ২।  ভাষা ও শিষ্টাচার – ভদ্রভাবে কথা বলা, ধন্যবাদ, দয়া করে, মাফ করবেন ইত্যাদি ব্যবহার শেখানো। ৩।  সাধারণ গণনা ও বর্ণ পরিচয় – বাংলা ও ইংরেজি বর্ণমালা এবং ১ থেকে ১০ পর্যন্ত সংখ্যা। ৪।  নিজের কাজ নিজে করা – জামা পরা, জুতো পরা, টিফিন খাওয়া ইত্যাদি। 

৫। টয়লেট ব্যবহারের অভ্যাস – নিজে টয়লেট ব্যবহার করতে শেখা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা। ৬। বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ – অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া, ঝগড়া না করা, সহযোগিতা শেখা। ৭।  শ্রবণ ও অনুসরণ ক্ষমতা – সহজ নির্দেশনা শুনে তা পালন করতে শেখানো। ৮। স্কুলের পরিবেশ ও নিয়ম সম্পর্কে ধারণা – শিক্ষক, সহপাঠী ও শ্রেণিকক্ষের নিয়ম জানা।  এসব অভ্যাস শিশুর স্কুলজীবনকে সহজ ও আনন্দময় করে তোলে।

🧠 স্কুলে ভর্তির আগে শিশুকে  নিম্নলিখিত বিষয়গুলো শেখানো উচিত

১. ব্যক্তিগত পরিচয় সম্পর্কে জ্ঞানঃ শিশুকে তার নাম, বাবা-মায়ের নাম, বয়স, বাসার ঠিকানা, এবং ফোন নম্বর বলতে শেখানো জরুরি। এটি শুধুমাত্র নিরাপত্তার জন্য নয়, স্কুলে পরিচয় দেওয়ার সময় এটি কাজে লাগে। যেভাবে শেখাবেনঃ  খেলার মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করুন।  গানের ছন্দে পরিচয় শেখান।

২. সাধারণ শারীরিক দক্ষতাঃ শিশুকে স্কুলে যাওয়ার আগে কিছু শারীরিক স্কিল থাকতে হয়, যেমনঃ  নিজে খাওয়া, টয়লেট ব্যবহার, জামা-কাপড় পরা, জুতো পরা ও খুলা। 

গবেষণা অনুযায়ীঃ  ২০২4 সালের এক সমীক্ষা (UNICEF Early Childhood Report) অনুযায়ী, ৮০% শিশুরা যদি প্রাক-বিদ্যালয়ের আগে শারীরিক স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে, তাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানিয়ে নেওয়ার হার ৪৫% বেশি হয়।

৩. সামাজিক দক্ষতাঃ  স্কুলে গিয়ে শিশুকে একসাথে অনেক শিশুদের সঙ্গে থাকতে হয়। তাই,  শেয়ার করতে শেখা, অপেক্ষা করতে শেখা, অন্যের কথা শোনা, কষ্ট বা আনন্দ প্রকাশ করতে শেখা। এই সব সামাজিক দক্ষতা তৈরি না হলে শিশুরা নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে না।

৪. ভাষাগত দক্ষতাঃ বাচ্চাকে ভাষা শেখানোর দিকটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ:। তার মনের কথা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারা। সাধারণ বাক্য ব্যবহার। শিক্ষক বা বন্ধুর কথা বোঝা। 

বাংলাদেশের পরিসংখ্যানঃ ২০২৩ সালের “Early Learning Assessment” অনুসারে, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৬১% ভাষাগত যোগাযোগে দুর্বলতা দেখা গেছে।

৫. সংখ্যা ও বর্ণ পরিচিতিঃ স্কুলে যাওয়ার আগে অন্ততঃ  ১ থেকে ১০ পর্যন্ত সংখ্যা চিনতে পারা, A-Z এবং ক-খ-গ চিনতে পারা।  রঙ, আকার এবং দিক নির্ণয় করতে পারা। উদাহরণঃ  ছবির মাধ্যমে রঙ শিখানো, ফ্ল্যাশকার্ড ব্যবহার করে বর্ণ শেখানো, ব্লক দিয়ে সংখ্যা শেখানো ইত্যাদি। 

📋 স্কুলে ভর্তির আগে শেখানো উচিত আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

১। স্বাস্থ্যবিধি এবং পরিচ্ছন্নতাঃ বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে শিশুদের স্বাস্থ্য সচেতনতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। যেমনঃ  হাত ধোয়া, নাক মোছা, হাঁচি-কাশি ঢেকে দেওয়া।

পরিসংখ্যানঃ WHO এর ২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬৫% শিশুরা স্কুলে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা না থাকায় অসুস্থ হয়।

.২।  নিয়ম ও সময় মেনে চলাঃ শিশুদের মধ্যে নিয়মিত রুটিন তৈরির অভ্যাস থাকতে হবেঃ  নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো ও উঠা, খাওয়া ও পড়ার সময় পালন করা, স্কুল ব্যাগ গোছানো। 

৩। কেন্দ্রিকতা বা মনোযোগের অভ্যাসঃ শিশুকে ছোট ছোট কাজের প্রতি মনোযোগী হতে শেখানো জরুরিঃ  একটানা কিছুক্ষণ বসে থাকা, ধৈর্য ধরে গল্প শোনা, নির্দেশনা মেনে চলা, এটি পরবর্তীতে লেখাপড়ায় সাহায্য করে। 

.৪।সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তি বৃদ্ধিঃ শিশুর সৃজনশীলতা বৃদ্ধির জন্য নিচের বিষয়গুলো শেখানো যেতে পারেঃ রঙ করা, গল্প বলা ও শোনা, ছড়া শেখা, এগুলো শিশুর চিন্তাভাবনায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

.৫। নেতিবাচক আচরণ থেকে বিরত রাখাঃ যেমনঃ মারামারি না করা, জিনিসপত্র ছুড়ে না মারা, বাজে শব্দ ব্যবহার না করা, কান্নাকাটি করে  না চাওয়া। 

🧩 স্কুলে ভর্তির আগে শিশুকে শেখানোর কিছু সহজ উপায়

🔹 খেলার ছলে শেখানোঃ খেলাধুলার মাধ্যমে শেখানো শিশুদের জন্য সবচেয়ে কার্যকর। 

আরো পড়ুনঃ 

🔹 গল্পের মাধ্যমে শেখানোঃ শিশুরা গল্প শুনে শিখতে বেশি আগ্রহী হয়। 

🔹 চিত্র ও কার্টুন ব্যবহারঃ ভিজ্যুয়াল শেখার মাধ্যমে শিশুরা সহজে মনে রাখতে পারে। 

🔹 পারিবারিক অংশগ্রহণঃ  বাবা-মা সক্রিয়ভাবে শেখানোর কাজে যুক্ত হলে শিশুর উন্নয়ন ৭০% বেশি হয়। 

📊 স্কুলে ভর্তির আগে শিশুকে শেখানোর কিছু গবেষণা ও পরিসংখ্যান

       বিষয় তথ্যসূত্র শতাংশ/পরিসংখ্যান

ভাষাগত জটিলতা Early Learning Assessment 2023        ৬১% শিশু দুর্বল

স্বাস্থ্য ঝুঁকি WHO 2023                                   ৬৫% শিশু স্বাস্থ্যবিধি জানে না

স্কুলে মানিয়ে নেওয়ার হার UNICEF 2024 শারীরিক স্বাবলম্বীদের মানিয়ে নেওয়ার হার ৪৫% বেশি

সামাজিক দক্ষতার অভাব Save the Children Report 2022 ৪২% শিশু সামাজিক সমস্যায় পড়ে

স্কুলে ভর্তির আগে শিশুর বাবা-মা ও অভিভাবকের করণীয়

১। শিশুর প্রতি ধৈর্য ধরুন। ২।  শেখানোর সময় চাপ না দিন। ৩।  উৎসাহ ও প্রশংসা করুন। ৪।  প্রতিদিন ১-২ ঘণ্টা শেখানোর জন্য বরাদ্দ রাখুন। ৫।  শিশুকে স্কুলে নিয়ে গিয়ে পরিবেশ দেখান।




স্কুলে ভর্তির আগে শিশুর বাবা-মা ও অভিভাবকের করণীয় (সংক্ষেপে)ঃ 

১। মানসিক প্রস্তুতি: শিশুকে ধীরে ধীরে স্কুলের ধারণা সম্পর্কে ইতিবাচকভাবে পরিচিত করান। ২। স্বাস্থ্য পরীক্ষা: চোখ, কান, দাঁত ও অন্যান্য সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিন। ৩।  ভাষা ও সামাজিক দক্ষতা: শিশু যেন নিজের নাম, বাবা-মায়ের নাম, বাসার ঠিকানা বলতে পারে—তা শেখানো জরুরি। ৪।  নিজের কাজ নিজে করা শেখানো: যেমন—জুতা পরা, টিফিন খাওয়া, টয়লেট ব্যবহার ইত্যাদি। ৫। ঘুম ও রুটিন: শিশুকে সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠা ও নিয়মিত খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ৬।  স্কুল সম্পর্কে আগ্রহ জাগানো: গল্প, ছবি বা খেলনার মাধ্যমে স্কুলকে আনন্দদায়কভাবে উপস্থাপন করুন। 

৭। ভর্তির জন্য প্রস্তুতি: নির্দিষ্ট স্কুলের ভর্তির প্রক্রিয়া, ফরম পূরণ ও কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন। ৮। সামাজিক মেলামেশার সুযোগ: শিশুকে পার্ক, খেলার মাঠ বা অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ দিন। ৯।  ইমিউনাইজেশন সম্পন্ন করা: শিশুর টিকাদান সম্পূর্ণ হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। ১০।. সাহস ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা: শিশুকে ছোট ছোট কাজের দায়িত্ব দিয়ে সাহসী ও আত্মনির্ভরশীল করে তুলুন। এই ধাপগুলো শিশুর বিদ্যালয়জীবনের একটি সহজ ও আনন্দময় সূচনা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

✍️ লেখকের শেষ কথাঃ স্কুলে ভর্তির আগে শিশুকে যে বিষয়গুলো শেখানো উচিত

শিশুর জীবনের প্রথম ধাপ শুরু হয় স্কুলে ভর্তি দিয়ে। এই গুরুত্বপূর্ণ যাত্রায় তার মানসিক, সামাজিক, ভাষাগত ও শারীরিক প্রস্তুতি থাকা জরুরি। গবেষণা বলছে, প্রাক-প্রাথমিক প্রস্তুতি থাকলে শিশুর শেখার হার অনেক বেশি বৃদ্ধি পায় এবং স্কুলে মানিয়ে নেওয়াও সহজ হয়।

তাই, আজ থেকেই শুরু করুন শিশুকে স্কুলের জন্য তৈরি করা। মনে রাখবেন, একটি সুস্থ ও আত্মবিশ্বাসী শিশুই ভবিষ্যতের গর্ব হতে পারে। আপনার মতামত জানান: আপনার সন্তানকে স্কুলে ভর্তির আগে আপনি কীভাবে প্রস্তুত করছেন? কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এই আর্টিকেলটি, যদি আপনি মনে করেন এটি অন্য অভিভাবকদের জন্যও উপকারি হতে পারে তাহলে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url