টনসিল ফোলা কি, টনসিল ফোলার কারণ ও প্রতিকার

 টনসিল ফোলা কি, টনসিল ফোলার কারণ ও প্রতিকার 

 এখানে একটি  বিস্তারিত আর্টিকেল লিখে দিচ্ছি যেখানে টনসিল ফোলা কি, এর কারণ, উপসর্গ, প্রতিকার, ঘরোয়া চিকিৎসা এবং ডাক্তারের পরামর্শসহ সব কিছু আলোচনা থাকবে। 

আপনি টনসিল ফোলা কি, টনসিল ফোলার কারণ ও প্রতিকার বিষয় এই বিষয় বিস্তারিত জানতে চাইলে আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পাঠ করুন। তাহলে নিজে জানতে পারবেন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন পারবেন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ টনসিল ফোলা কি, টনসিল ফোলার কারণ ও প্রতিকার  

টনসিল ফোলা কি, টনসিল ফোলার কারণ ও প্রতিকার  
টনসিল ফোলা কি, টনসিল ফোলার কারণ
টনসিল ফোলার লক্ষণগুলি কি কি
টনসিল ফোলার উপসর্গ ও জটিলতা
টনসিল ফোলার ঘরোয়া চিকিৎসা
টনসিল ফোলার  চিকিৎসকের পরামর্শ
টনসিল ফোলার আধুনিক চিকিৎসা ও অপারেশন
টনসিল ফোলা প্রতিরোধের উপায়
লেখকের শেষ মন্তব্যঃ টনসিল ফোলা কি, টনসিল ফোলার কারণ ও প্রতিকার  

টনসিল ফোলা কি, টনসিল ফোলার কারণ ও প্রতিকার 

টনসিল ফোলা বা টনসিলাইটিস একটি সাধারণ কিন্তু কষ্টদায়ক সমস্যা। এই আর্টিকেলে জানুন টনসিল ফোলা কি, এর কারণ, লক্ষণ, ঘরোয়া চিকিৎসা, আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও প্রতিরোধের উপায়। গলা ব্যথা বা খাবার গিলতে কষ্ট হচ্ছে – অনেক সময়ই এর কারণ হতে পারে টনসিল ফোলা। 

আরো পড়ুনঃ

আমাদের গলার দুই পাশে যে ছোট দুটি মাংসপিণ্ড দেখা যায়, এগুলোই টনসিল। এগুলো আসলে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ, যা ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত সংক্রমণ থেকে আমাদের শরীরকে সুরক্ষা দেয়। কিন্তু যখন এই টনসিলেই সংক্রমণ হয়, তখনই তা ফুলে যায় এবং আমরা যেটাকে সাধারণত “টনসিল ফোলা” বলি। আজকের এই বিস্তারিত আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব।

টনসিল ফোলা কি, টনসিল ফোলার কারণ

টনসিল ফোলা বা Tonsillitis হলো গলার টনসিলের প্রদাহ বা সংক্রমণ। সাধারণত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে টনসিল ফুলে যায়, লালচে হয় এবং ব্যথা অনুভূত হয়। এটি যেকোনো বয়সে হতে পারে, তবে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

টনসিল ফোলার ধরনঃ  অ্যাকিউট টনসিলাইটিস: হঠাৎ শুরু হয় এবং কয়েক দিনের মধ্যে সেরে যায়। ক্রনিক টনসিলাইটিস: দীর্ঘমেয়াদে বারবার টনসিল ফুলে যায়।  রিকারেন্ট টনসিলাইটিস: বছরে একাধিকবার টনসিল ফোলার সমস্যা হয়।

টনসিল ফোলা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সাধারণ কারণগুলো হলোঃ  ১. ভাইরাসজনিত সংক্রমণঃ প্রায় ৭০-৮০% টনসিল ফোলা ভাইরাস দ্বারা হয়। অ্যাডেনোভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, এপস্টাইন-বার ভাইরাস, এন্টারোভাইরাস   ইত্যাদি ভাইরাস জনিত কারণে টনসিল ফুলে থাকে। 

২. ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণঃ স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া সবচেয়ে বেশি দায়ী। এটি “স্ট্রেপ থ্রোট” নামেও পরিচিত।

৩. ঠান্ডা লাগাঃ শরীরে ঠান্ডা লাগলে বা অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার খেলে টনসিল সহজে সংক্রমিত হয়।

৪. দূষণ ও অ্যালার্জিঃ ধুলাবালি, ধোঁয়া বা অ্যালার্জির কারণে গলা সংবেদনশীল হয়ে টনসিলে প্রদাহ হতে পারে।

৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়াঃ শিশু বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানুষেরা টনসিল ফোলায় বেশি আক্রান্ত হয়। 

টনসিল ফোলার লক্ষণগুলি কি কি

টনসিল ফোলা হলে যেসব উপসর্গ দেখা দেয়ঃ  গলা ব্যথা, গিলতে কষ্ট হওয়া, গলার ভেতরে লালচে ফোলা, মুখে দুর্গন্ধ, জ্বর আসা, গলায় বা কানে ব্যথা ছড়ানো, কথা বলতে অসুবিধা, শিশুদের ক্ষেত্রে খেতে না চাওয়া, ঘাড়ে লিম্ফ নোড ফোলা, টনসিল ফোলার জটিলতা। 


চিকিৎসা না করলে টনসিল ফোলা থেকে হতে পারেঃ গলায় পুঁজ জমা (Peritonsillar abscess), কান বা সাইনাসে সংক্রমণ ছড়ানো, রিউমাটিক জ্বর, কিডনির প্রদাহ (Post-streptococcal glomerulonephritis)

টনসিল ফোলার উপসর্গ ও জটিলতা

টনসিল ফোলার উপসর্গ ও জটিলতা নিম্নরূপঃ  টনসিল ফোলার উপসর্গঃ  ১. গলায় ব্যথা ও অস্বস্তি অনুভূত হয়। ২. গিলতে কষ্ট হয় এবং খাবার খাওয়া কষ্টকর হয়। ৩. গলা লাল হয়ে যায় এবং সাদা বা হলুদ দাগ দেখা যায়। ৪. জ্বর ও শরীর দুর্বল লাগে। ৫. মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসতে পারে। ৬. কানে ব্যথা ছড়াতে পারে।

জটিলতাঃ  ৭. টনসিল ফোঁড়া (Tonsillar abscess) তৈরি হতে পারে। ৮. শ্বাসকষ্ট ও ঘুমের সময় নাক ডাকা বাড়তে পারে।  ৯. সংক্রমণ শরীরের অন্য অংশে ছড়াতে পারে। ১০. দীর্ঘমেয়াদে ক্রনিক টনসিলাইটিস হতে পারে।

টনসিল ফোলার ঘরোয়া চিকিৎসা

প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা টনসিলের ব্যথা ও ফোলা কমাতে সাহায্য করে।

১. নুন-পানি দিয়ে গার্গলঃ এক গ্লাস গরম পানিতে এক চা চামচ নুন মিশিয়ে দিনে ৩-৪ বার গার্গল করুন। এটি গলার প্রদাহ কমায়।

২. গরম স্যুপ বা হালকা গরম পানি পানঃ গরম স্যুপ গলা শান্ত করে এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে।

৩. মধু ও আদাঃ এক চামচ মধু ও সামান্য আদার রস মিশিয়ে খেলে গলা ব্যথা কমে।

৪. বাষ্প গ্রহণঃ গরম পানির বাষ্প নিলে গলা আর্দ্র থাকে এবং প্রদাহ কমে।

৫. বিশ্রামঃ  যতটা সম্ভব বেশি বিশ্রাম নিন যাতে শরীর দ্রুত সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে।

 টনসিল ফোলা চিকিৎসকের পরামর্শ

যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেয়, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।  তিন দিনের বেশি জ্বর থাকা, গলা একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, ঘাড়ে প্রচণ্ড ফোলা, বারবার টনসিল ফোলা। টনসিল ফোলা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে জরুরি। ডাক্তারের কাছে গিয়ে গলা পরীক্ষা করাতে হবে এবং প্রয়োজনে রক্ত পরীক্ষা বা থ্রোট সোয়াব টেস্ট করানো লাগতে পারে।

 ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হলে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিতে পারেন। ভাইরাল সংক্রমণে সাধারণত বিশ্রাম, গরম পানি পান ও লবণ পানি দিয়ে গার্গল করার পরামর্শ দেওয়া হয়। খুব বেশি ফোলা বা শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। বারবার হলে ডাক্তার সার্জারির (টনসিল অপারেশন) পরামর্শও দিতে পারেন।

টনসিল ফোলার  আধুনিক চিকিৎসা ও অপারেশন

১. ঔষধ সেবনঃ ভাইরাসজনিত হলে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয় না। ব্যাকটেরিয়াজনিত হলে ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করতে পারেন। জ্বর বা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন দেওয়া হয়।

আরো পড়ুনঃ

২. টনসিল অপারেশন (Tonsillectomy)ঃ  যদি বছরে একাধিকবার মারাত্মক টনসিল ফোলার সমস্যা হয়, ডাক্তার টনসিল অপসারণের পরামর্শ দিতে পারেন। এটি সাধারণ সার্জারি এবং ২০-৩০ মিনিটেই সম্পন্ন হয়।

টনসিল ফোলা প্রতিরোধের উপায়

নিয়মিত হাত ধোয়া, ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, খুব ঠান্ডা পানি বা আইসক্রিম বেশি না খাওয়া, রোগীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চল, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, শিশুদের টনসিল ফোলা, শিশুদের টনসিল ফোলা বেশি হয় কারণ তাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকে। শিশুকে যথেষ্ট পানি, গরম স্যুপ ও বিশ্রাম দিন। গুরুতর হলে শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিন।

টনসিল ফোলা প্রতিরোধে নিয়মিত হাত ধুতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ধুলোবালি, ধূমপান ও দূষিত খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি। গরম পানি ও লবণ দিয়ে গার্গল করলে জীবাণু কমে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার ও পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।

লেখকের শেষ মন্তব্যঃ টনসিল ফোলা কি, টনসিল ফোলার কারণ ও প্রতিকার  

টনসিল ফোলা একটি সাধারণ কিন্তু বিরক্তিকর সমস্যা। ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এটি হয় এবং সঠিক যত্ন ও চিকিৎসায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কয়েক দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। ঘরোয়া প্রতিকার যেমন নুন-পানি দিয়ে গার্গল, গরম পানি পান, পর্যাপ্ত বিশ্রাম অনেকটাই উপশম দেয়। তবে বারবার হলে বা জটিল উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

আপনার শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্ত রাখুন, ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন, এবং প্রয়োজনে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিন – তাহলেই টনসিল ফোলার সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url