রক্তশূন্যতা কেন হয়, রক্তশূন্যতার লক্ষণ এবং প্রতিকারের উপায়

 

 রক্তশূন্যতা কেন হয়, রক্তশূন্যতার লক্ষণ এবং প্রতিকারের উপায় 

রক্তশূন্যতা (Anemia) সাধারণত শরীরে আয়রন, ভিটামিন বি-১২ বা ফলিক এসিডের অভাবে হয়। এর ফলে শরীরে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় না। প্রধান লক্ষণগুলো হলো দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট, ফ্যাকাসে চেহারা ও দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়া। 

প্রতিকারের জন্য আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন লাল মাংস, ডিম, কলিজা, শাকসবজি, ডাল, গুড় খাওয়া উচিত। পাশাপাশি ডাক্তারি পরামর্শেীর প্রয়োজন হলে আয়রন বা ভিটামিনের ওষুধ গ্রহণ যেতে পারে। রক্তশূন্যতার কারণ,  রক্তশূন্যতার লক্ষণ এবং প্রতিকারের উপায় জানতে চাইলে এই আর্টিকেলটি পাঠ করুন। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ রক্তশূন্যতা কেন হয়, রক্তশূন্যতার লক্ষণ এবং প্রতিকারের উপায় 

রক্তশূন্যতা কেন হয়, রক্তশূন্যতার লক্ষণ এবং প্রতিকারের উপায় 
 রক্তশূন্যতা কী, রক্তশূন্যতার কারণ
রক্তশূন্যতার লক্ষণ
রক্ত শূন্যতা কিভাবে নির্ণয় করা হয়
রক্তশূন্যতা হলে কি কি সমস্যা দেখা দেয়
রক্তশূন্যতার জন্য যেসব ওষুধ খেতে হবে
 রক্তশূন্যতার প্রতিকার ও করণীয়
লেখকের চূড়ান্ত কথাঃ রক্তশূন্যতা কেন হয়, রক্তশূন্যতার লক্ষণ এবং প্রতিকারের উপায় 

রক্তশূন্যতা কেন হয়, রক্তশূন্যতার লক্ষণ এবং প্রতিকারের উপায় 

রক্তশূন্যতা (Anemia) মূলত শরীরে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতির কারণে হয়। এতে রক্ত শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে যথেষ্ট অক্সিজেন পৌঁছে দিতে পারে না। সাধারণত আয়রন, ফলিক এসিড, ভিটামিন বি-১২ এর অভাব, দীর্ঘমেয়াদি অসুখ, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা প্যারাসাইট আক্রমণের কারণে রক্তশূন্যতা হয়।

আরো পড়ুনঃ

লক্ষণসমূহ: সবসময় ক্লান্তি, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট, ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।  প্রতিকারের উপায়ঃ আয়রন, ভিটামিন বি-১২ ও ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি, মাংস, ডাল, ডিম, দুধ খাওয়া, প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শে আয়রন-সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং রক্তক্ষরণজনিত সমস্যার দ্রুত চিকিৎসা করা উচিত। 

রক্তশূন্যতা কী, রক্তশূন্যতার কারণ

 রক্তশূন্যতা কীঃ  রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া (Anemia) হলো এমন একটি অবস্থা, যখন শরীরে লোহিত রক্তকণিকার (Red Blood Cells) সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায় অথবা রক্তে উপস্থিত হিমোগ্লোবিনের (Hemoglobin) মাত্রা কম যায়। হিমোগ্লোবিন হলো রক্তের সেই উপাদান যা অক্সিজেন বহন করে শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে দেয়। তাই রক্তশূন্যতা হলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না এবং নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়।

 রক্তশূন্যতার কারণঃ  রক্তশূন্যতা সাধারণত তিনটি কারণে হয়ে  থাকে। লোহিত রক্তকণিকা কম উৎপাদন করে। শরীরে পর্যাপ্ত লোহা, ভিটামিন B12 বা ফোলেট না থাকলে। হাড়ের মজ্জার সমস্যা।  দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন কিডনি বা লিভারের রোগ।  লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হয়ে যাওয়া।  জেনেটিক রোগ (যেমন সিকেল সেল অ্যানিমিয়া, থ্যালাসেমিয়া)।  অটোইমিউন ডিজঅর্ডার।  সংক্রমণ বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। রক্তক্ষরণ, অতিরিক্ত মাসিক রক্তপাত। দুর্ঘটনা বা অস্ত্রোপচারজনিত রক্তপাত। পাকস্থলী বা অন্ত্রের আলসার, পাইলস ইত্যাদির কারণে রক্তপাত।

 রক্তশূন্যতার লক্ষণ

রক্তশূন্যতার লক্ষণ ধীরে ধীরে বা হঠাৎ প্রকাশ পেতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ  শরীরে সবসময় দুর্বলতা ও অবসাদ অনুভব করা। মুখমণ্ডল ও ঠোঁটে ফ্যাকাশে ভাব। মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখা বা মাথাব্যথা। শ্বাসকষ্ট, বিশেষ করে সামান্য কাজের পরেই।  হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া বা অনিয়মিত বোধ হওয়া। হাত-পা ঠান্ডা লাগা। চুল ঝরে যাওয়া এবং নখ ভেঙে যাওয়া।  শিশুদের ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিলম্ব দেখা দিতে পারে।

রক্ত শূন্যতা কিভাবে নির্ণয় করা হয় 

রক্তশূন্যতা (Anemia) নির্ণয়ের জন্য মূলত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়। সাধারণত যেসব পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়ঃ  Complete Blood Count (CBC) টেস্ট, এই পরীক্ষায় হিমোগ্লোবিন, হেমাটোক্রিট, এবং লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা নির্ণয় করা হয়।

Peripheral Blood Smear – রক্তের স্লাইড পরীক্ষা করে রক্তকণিকার আকার, রঙ ও গঠন দেখা হয়।

Serum Ferritin ও Iron Test – শরীরে আয়রনের মজুদ ও ঘাটতি বোঝা যায়।

Vitamin B12 ও Folate Test – ভিটামিনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা শনাক্ত করতে  এই টেস্কটরা হয়।

Bone Marrow Test (প্রয়োজনে) – জটিল ক্ষেত্রে অস্থিমজ্জা পরীক্ষা করে রক্ত তৈরির ক্ষমতা দেখা হয়।

👉 সাধারণত ডাক্তার প্রথমে রোগীর লক্ষণ (যেমন: দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, ফ্যাকাশে ত্বক ইত্যাদি) দেখে সন্দেহ করেন এবং এরপর রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করেন।

রক্তশূন্যতা হলে কি কি সমস্যা দেখা দেয়

রক্তশূন্যতা (Anemia) হলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে লোহিত রক্তকণিকা বা হিমোগ্লোবিন থাকে না। এর ফলে শরীর ঠিকমতো অক্সিজেন পায় না। এতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, যেমনঃ সব সময় দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভূত হয়। মাথা ঘোরা বা ঝিমঝিম ভাব হতে পারে।

 শ্বাসকষ্ট ও বুক ধড়ফড়ানি দেখা দেয়। ত্বক, ঠোঁট ও চোখের নিচে ফ্যাকাশে ভাব দেখা যায়।  মনোযোগ কমে যায় ও কাজ করার সক্ষমতা হ্রাস পায়। গুরুতর ক্ষেত্রে হৃদ্‌যন্ত্রের জটিলতা তৈরি হতে পারে।

রক্তশূন্যতার জন্য যেসব ওষুধ খেতে হবে

রক্তশূন্যতা (Anemia) হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়া খুবই জরুরি। রক্তশূন্যতার কারণ অনুযায়ী ওষুধ নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত যেসব ওষুধ খাওয়া হয় তা হলোঃ

রক্তশূন্যতার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধঃ  আয়রন ট্যাবলেট/সিরাপ, Ferrous Sulfate, Ferrous Fumarate, Ferrous Gluconate ইত্যাদি। শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে। ফোলিক এসিড ট্যাবলেট, লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে সহায়ক। গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষভাবে জরুরি। ভিটামিন বি-১২ ট্যাবলেট বা ইনজেকশন ,মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে কার্যকর। 

স্নায়ুর কার্যকারিতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। মাল্টিভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট, আয়রন, ভিটামিন সি, জিঙ্ক, কপার ইত্যাদি উপাদান থাকে। আয়রনের শোষণ বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গুরুতর ক্ষেত্রেঃ রক্ত সঞ্চালন (Blood transfusion) বা ইনজেকশনের মাধ্যমে আয়রন দেওয়া হয়।

আরো পড়ুনঃ

তবে, নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে অবশ্যই ডাক্তারকে দেখিয়ে রক্ত পরীক্ষা করে তারপর ওষুধ খেতে হবে। আয়রনের ওষুধ খেলে অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য, কালো পায়খানা, বা পেটের ব্যথা হতে পারে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে আয়রন খেলে শোষণ ভালো হয়।

 রক্তশূন্যতা প্রতিকার ও করণীয়

 খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনঃ লোহা সমৃদ্ধ খাবার। কলিজা, মাংস, ডিম, ছোট মাছ, পালং শাক, ডাল, কচুপাতা, লাল শাক, বিটরুট ইত্যাদি। ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবার। কমলা, লেবু, আনারস, আমলকি এগুলো খাবারের সঙ্গে খেলে লোহার শোষণ বাড়ে। ভিটামিন B12 ও ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার। দুধ, ডিম, মাছ, কলিজা, ডাল, বাদাম, সবুজ শাকসবজি। আয়রন শোষণ কমায় এমন খাবার এড়ানো। অতিরিক্ত চা, কফি, কোমল পানীয় খাবারের সাথে খাওয়া উচিত নয়।

 চিকিৎসাঃ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন ট্যাবলেট বা সিরাপ গ্রহণ করা।  প্রয়োজনে ভিটামিন B12 ও ফোলেটের সাপ্লিমেন্ট। মারাত্মক অবস্থায় রক্ত সঞ্চালন (Blood Transfusion) লাগতে পারে। থ্যালাসেমিয়া বা সিকেল সেল অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রয়োজন।

 জীবনযাপনে পরিবর্তনঃ নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ। পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম।  অতিরিক্ত মানসিক চাপ এড়িয়ে চলা। মেয়েদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, বিশেষত যাদের মাসিক বেশি হয়।

লেখকের চূড়ান্ত কথাঃ রক্তশূন্যতা কেন হয়, রক্তশূন্যতার লক্ষণ এবং প্রতিকারের উপায় 

রক্তশূন্যতা একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। সময়মতো সঠিক কারণ চিহ্নিত করে চিকিৎসা না করলে এটি হৃদরোগ, গর্ভকালীন জটিলতা কিংবা শিশুদের বিকাশে বাধার মতো মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই রক্তশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন মেনে চলতে হবে।

আশা করি আপনি এই আর্টিকেলটি পরিপূর্ণভাবে পাঠ করেছেন এজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।  আপনি আর্টিকেল থেকে যে জ্ঞান অর্জন করেছেন তা নিজস্ব কাজে এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের কাজে লাগাতে পারেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url