রাতকানা রোগ কি, রাতকানা রোগ কেন হয়, রাতকানা রোগের প্রতিকার
রাতকানা রোগ কি, রাতকানা রোগ কেন হয়, রাতকানা রোগের প্রতিকার
রাতকানা রোগ কেন হয়, রাতকানা রোগের প্রতিকার কি এ আর্টিকেল লিখে দিলাম। এতে থাকবে বিস্তারিত আলোচনা, কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার, প্রতিরোধ, চিকিৎসা, ঘরোয়া সমাধান এবং উপসংহার।
পোস্ট সূচিপত্রঃ রাতকানা রোগ কি, রাতকানা রোগ কেন হয়, রাতকানা রোগের প্রতিকার
রাতকানা রোগ কি, রাতকানা রোগ কেন হয়, রাতকানা রোগের প্রতিকার কি
রাতকানা রোগ বা নাইট ব্লাইন্ডনেস চোখের একটি সাধারণ সমস্যা। এটি মূলত ভিটামিন-এ ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে। জেনে নিন রাতকানার কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের কার্যকর উপায়।
চোখ হলো মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজে চোখ অপরিহার্য। কিন্তু যখন চোখে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তখন তা শুধু দৃষ্টিশক্তিকেই নয়, পুরো জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। রাতকানা (Night Blindness বা Nyctalopia) এমন একটি চক্ষুরোগ, যেখানে অন্ধকারে বা কম আলোতে স্পষ্ট দেখা কঠিন হয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ
বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ভিটামিন-এ ঘাটতির কারণে এই রোগ বেশি দেখা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু ও গর্ভবতী নারীরা রাতকানায় বেশি ভোগেন। সঠিক সময়ে প্রতিকার না নিলে এই সমস্যা গুরুতর আকার ধারণ করে অন্ধত্বের কারণও হতে পারে।
এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে জানব, রাতকানা রোগ আসলে ক্ কেন এই রোগ হয়। এর উপসর্গ বা লক্ষণ কী, প্রতিকার ও চিকিৎসা পদ্ধতি, প্রতিরোধ ও ঘরোয়া সমাধান।
রাতকানা রোগ কি, রাতকানা রোগের লক্ষণ
রাতকানা রোগের বৈজ্ঞানিক নাম Nyctalopia। এটি মূলত এক ধরনের দৃষ্টিশক্তি সমস্যা যেখানে কম আলো, সন্ধ্যা বা অন্ধকারে স্পষ্ট দেখা যায় না। দিনের আলোয় রোগী স্বাভাবিকভাবে দেখতে পেলেও, রাতের সময় চোখ আলো গ্রহণে সমস্যা করে।চোখের রেটিনায় রড সেলস (Rod Cells) নামক কোষ থাকে, যা অন্ধকারে বা কম আলোতে দেখার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। ভিটামিন-এ এর ঘাটতি হলে এই কোষগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না এবং রাতকানা রোগ হয়।
রাতকানা রোগকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নাইট ব্লাইন্ডনেস (Night Blindness) বা নাইকট্যালোপিয়া (Nyctalopia) বলা হয়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি অন্ধকারে বা ম্লান আলোতে সঠিকভাবে দেখতে পারেন না।
রাতকানা রোগের প্রধান লক্ষণগুলো হলোঃ অন্ধকারে বা কম আলোতে ভালোভাবে দেখতে না পারা – সন্ধ্যা বা রাতে বাইরে বের হলে দৃষ্টি ঝাপসা লাগে। আলো পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে সমস্যা – উজ্জ্বল আলো থেকে হঠাৎ অন্ধকারে গেলে চোখ মানিয়ে নিতে দেরি হয়। গাড়ি চালাতে অসুবিধা – রাতের বেলায় গাড়ির হেডলাইট বা স্ট্রিটলাইটে চোখে সমস্যা দেখা দেয়। চোখে শুষ্কতা – ভিটামিন এ-এর অভাব থাকলে চোখ শুকিয়ে যায়। আলোতে ঝলকানি অনুভব – আলো বেশি লাগলে চোখে অস্বস্তি হয়। পাশের জিনিস কম দেখা – অনেক সময় পার্শ্ববর্তী জিনিস বা চলাচল করা মানুষ/বস্তু চোখে স্পষ্ট বোঝা যায় না।
রাতকানা রোগ কেন হয়
রাতকানা হওয়ার প্রধান কারণ হলো ভিটামিন-এ এর অভাব। তবে আরও কিছু কারণ রয়েছে।
১. ভিটামিন-এ ঘাটতিঃ ভিটামিন-এ চোখের রড সেলসকে সক্রিয় রাখে। এই ভিটামিনের অভাব হলে রড সেল দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে অন্ধকারে দেখার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
২. অপুষ্টিজনিত কারণঃ যেসব শিশু ও মানুষ অপুষ্টিতে ভোগেন, তাদের মধ্যে রাতকানা সাধারণ। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।
৩. ছানি রোগ (Cataract)ঃ চোখে ছানি পড়লে আলো ভেতরে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হয়। এর ফলে রাতে দেখার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
৪. রেটিনার রোগঃ Retinitis pigmentosa নামক একটি জেনেটিক রোগ রেটিনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এতে ধীরে ধীরে রাতকানা তৈরি হয়।
৫. যকৃতের সমস্যাঃ যকৃতে ভিটামিন-এ জমা থাকে। লিভারের রোগ থাকলে ভিটামিন-এ এর শোষণ বাধাগ্রস্ত হয়, যা রাতকানার কারণ হতে পারে।
৬. ওষুধের প্রভাবঃ কিছু ওষুধ যেমন ইসোট্রেটিনইন (Isotretinoin) দীর্ঘদিন খেলে রাতকানার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৭. অন্যান্য কারণঃ ডায়াবেটিস, গ্লকোমা, জেনেটিক সমস্যা, এবং দীর্ঘস্থায়ী চোখের রোগও রাতকানার কারণ হতে পারে।
রাতকানার লক্ষণঃ রাতকানা রোগের প্রধান লক্ষণগুলো হলোঃ অন্ধকার বা কম আলোতে ভালোভাবে দেখতে না পারা। সন্ধ্যা বা রাতে হাঁটতে গিয়ে বারবার হোঁচট খাওয়া। গাড়ির হেডলাইট বা উজ্জ্বল আলো দেখলে চোখে ঝাপসা লাগা। চোখ শুকিয়ে যাওয়া। শিশুদের ক্ষেত্রে— রাতের বেলা বাইরে গেলে ভয় পাওয়া বা অস্বস্তি করা। গুরুতর অবস্থায় চোখের কর্নিয়া শুকিয়ে দাগ পড়ে যাওয়া
রাতকানা রোগ কেন হয়, রাতকানা রোগের প্রতিকার
রাতকানা রোগের প্রতিকার মূলত কারণভিত্তিক চিকিৎসা।
১. ভিটামিন-এ সম্পূরক গ্রহণঃ চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়া সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। বাংলাদেশ সরকার স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ৬ মাস থেকে ৫ বছরের শিশুদের বিনামূল্যে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল দেয়।
২. ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াঃ ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবারগুলো হলোঃ গাজর, মিষ্টি কুমড়া, পালং শাক, কলিজা, ডিমের কুসুম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, মাছ, লাল ও হলুদ রঙের ফল (আম, পেঁপে ইত্যাদি)
৩. ছানি অপারেশনঃ যদি রাতকানা ছানির কারণে হয়, তবে সার্জারির মাধ্যমে ছানি অপসারণ করতে হয়।
৪. রেটিনার চিকিৎসাঃ রেটিনার রোগ থাকলে বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়।
৫. যকৃতের রোগের চিকিৎসাঃ লিভারের সমস্যার কারণে ভিটামিন-এ ঘাটতি হলে লিভারের চিকিৎসা প্রয়োজন।
রাতকানা রোগ কেন হয়, ঘরোয়া চিকিতসা
যদিও গুরুতর রাতকানার ক্ষেত্রে ডাক্তারি চিকিৎসা জরুরি, তবুও কিছু ঘরোয়া প্রতিকার সহায়ক হতে পারেঃ গাজরের জুস প্রতিদিন পান করা, ডিম ও মাছ নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখা, পালং শাক ও লাল শাক খাওয়া, মিষ্টি কুমড়া ও পেঁপে খাবারে যুক্ত করা, চোখ পরিষ্কার রাখা ও ধুলাবালি থেকে রক্ষা করা
রাতকানা রোগ কেন হয়, রাতকানা প্রতিরোধ
শিশুদের নিয়মিত ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো। গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় পুষ্টি কর্মসূচি চালু করা। চোখে কোনো সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া
রাতকানা রোগ কেন হয়, তথ্য ও পরিসংখ্যান
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ২৫ লক্ষ শিশু ভিটামিন-এ এর অভাবে আক্রান্ত হয়।
আরো পড়ুনঃ
বাংলাদেশে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুদের রাতকানা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। এখনো গ্রামীণ এলাকায় ৫-৭% শিশু রাতকানায় আক্রান্ত হয়।
লেখকের শেষ বক্তব্যঃ রাতকানা রোগ কি, রাতকানা রোগ কেন হয়, রাতকানা রোগের প্রতিকার কি
রাতকানা রোগ একটি গুরুতর চক্ষু সমস্যা হলেও এটি সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, শিশুদের ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো এবং নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করালে রাতকানা থেকে বাঁচা যায়। সময়মতো চিকিৎসা না করলে চোখের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
তাই পরিবার ও সমাজের সকলের উচিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে সচেতন হওয়া এবং প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url