ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সেরা খাবারের তালিকা

 ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সেরা খাবারের তালিকা

শিরোনাম: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সেরা খাবারের তালিকা ও খাদ্যাভ্যাস নির্দেশিকা  বিস্তারিত দেওয়া হলো।  ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সেরা খাবারের মধ্যে রয়েছে ওটস, ব্রাউন রাইস, এবং ডালজাতীয় খাবার। সবুজ শাকসবজি যেমন পালং শাক, লাউ, করলা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 

চিকেন, মাছ ও ডিমের সাদা অংশ প্রোটিনের ভালো উৎস। ফল হিসেবে আপেল, পেয়ারা ও কমলালেবু খাওয়া নিরাপদ। চিনি ও অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত। পর্যাপ্ত পানি পান ও নিয়মিত খাবারের সময় মেনে চলা জরুরি।

পোস্ট সূচিপত্রঃ  ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সেরা খাবারের তালিকা

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সেরা খাবারের তালিকা
ডায়াবেটিস ও খাদ্যের সম্পর্ক
 ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খাবারের মূলনীতি
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা (উদাহরণ)
 ডায়াবেটিস রোগীদের পানি ও তরল খাবার গ্রহণের গুরুত্ব
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অতিরিক্ত পরামর্শ
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য  বিশেষজ্ঞদের মতামত
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য  সারাংশে
 ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য  ঘরোয়া উপাদান যা রক্তে শর্করা কমায়
লেখকের শেষ কথাঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সেরা খাবারের তালিকা

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সেরা খাবারের তালিকা

ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত ও সঠিক হতে হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু নির্দিষ্ট খাবার প্রতিদিনের ডায়েটে রাখা জরুরি। নিচে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযুক্ত খাবারের তালিকা দেওয়া হলোঃ ১. শাকসবজি ও সবুজ পাতা জাতীয় খাবার: পালং শাক, লাল শাক, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, শসা, করলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি। এগুলো ফাইবার সমৃদ্ধ, ক্যালোরি কম এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
 ২. পূর্ণ শস্য (Whole Grains)ঃ ব্রাউন রাইস, ওটস, আটার রুটি, ডালিয়া।  এগুলো ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে, ফলে রক্তে শর্করা হঠাৎ বেড়ে যায় না।
 ৩. ফলমূল (Low Sugar Fruits)ঃ আপেল, পেয়ারা, জাম, কমলা, পেয়ারা, বেরি জাতীয় ফল। চিনি কম, ফাইবার বেশি — যা রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কলা, আঙুর, কাঁঠাল ও পাকা আম পরিহার করা ভালো।
 ৪. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারঃ দেশি মাছ, মুরগির বুকের মাংস (চামড়া ছাড়া), ডিমের সাদা অংশ, ডাল। প্রোটিন ইনসুলিন কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের শক্তি ধরে রাখে।
 ৫. দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারঃ টোনড বা স্কিমড মিল্ক, লো-ফ্যাট দই। পরিমিত পরিমাণে খেলে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে, তবে অতিরিক্ত নয়। 
 ৬. বাদাম ও বীজজাতীয় খাবারঃ কাঠবাদাম, আখরোট, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড।  ভালো চর্বি (Good Fat) সরবরাহ করে এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
৭. পানীয়ঃ পর্যাপ্ত পানি, গ্রিন টি, লেবু পানি (চিনি ছাড়া)। এগুলো শরীর থেকে টক্সিন দূর করে এবং গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখে।  যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন। সাদা চাল, মিষ্টি, সফট ড্রিংক, আলু, পরোটা, ফাস্টফুড, মিষ্টিজাত ফল।  এগুলো রক্তে হঠাৎ গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
 খাবারের নিয়মঃ দিনে ৫–৬ বার অল্প অল্প করে খান। সকালে ও রাতে একই সময় খাবার গ্রহণ করুন। নিয়মিত হাঁটুন বা হালকা ব্যায়াম করুন। 

 ডায়াবেটিস ও খাদ্যের সম্পর্ক

ডায়াবেটিস বা “মধুমেহ” একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যেখানে শরীরে ইনসুলিন হরমোনের অভাব বা কার্যকারিতা হ্রাসের কারণে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই রোগে আক্রান্তদের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাসই হলো প্রধান ওষুধ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ওষুধ বা ইনসুলিনের চেয়ে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখতে।

আরো পড়ুনঃ 

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খাবার নির্বাচন করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন খাবারগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে না বাড়ায়, বরং ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে। এজন্যই আজ আমরা জানবো – ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সেরা খাবারের তালিকা, খাবার বাছাইয়ের নিয়ম, কী খাবেন ও কী খাবেন না, এবং কীভাবে সঠিক খাদ্যাভ্যাসে আপনি সুস্থ থাকতে পারেন।

 ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খাবারের মূলনীতি

খাবার বাছাইয়ের আগে কিছু সাধারণ নীতি মেনে চলা দরকারঃ কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) যুক্ত খাবার নির্বাচন করুন। উচ্চ ফাইবার (আঁশযুক্ত) খাবার খেতে হবে, কারণ এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ধীরে বাড়ায়। প্রাকৃতিক ও অল্প প্রক্রিয়াজাত খাবার বেছে নিন। পরিমিত কার্বোহাইড্রেট ও স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ করুন। অতিরিক্ত লবণ ও চিনি এড়িয়ে চলুন।

 ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সেরা খাবারের তালিকা

১. সবজি (Vegetables)ঃ  সবজি হলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ খাবার। এগুলোতে ক্যালরি কম, ফাইবার বেশি এবং গ্লুকোজের প্রভাবও খুব ধীরে আসে।  সেরা সবজিঃ পালং শাক, লাল শাক, পুঁই শাক, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া (অল্প পরিমাণে), ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, করলা, লাউ, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, বেগুন, টমেটো। উপকারিতাঃ সবজি ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বৃদ্ধি করে এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

২. ফলমূল (Fruits)ঃ  অনেকেই মনে করেন ডায়াবেটিস রোগীদের ফল খাওয়া নিষিদ্ধ, কিন্তু সেটি ভুল ধারণা। সঠিক ফল বাছাই করলে তা অনেক উপকারী হতে পারে। সেরা ফলঃ আপেল, পেয়ারা, জাম, পেঁপে, কমলা, বেরিজাতীয় ফল (স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি), ডালিম, কলা (অল্প পরিমাণে, অতিপাকা নয়)। যেসব ফল এড়ানো উচিত: আম, আঙুর, কাঁঠাল, লিচু — কারণ এগুলোর শর্করা বেশি।

৩. ডাল ও শস্যজাতীয় খাদ্য (Pulses & Whole Grains)ঃ ডাল এবং সম্পূর্ণ শস্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চমৎকার প্রোটিন ও ফাইবারের উৎস।  সেরা শস্য ও ডালঃ মসুর ডাল, মুগ ডাল, ছোলা, লাল চাল বা ব্রাউন রাইস।  ওটস, বার্লি। গমের আটা (চিকন রুটি নয়, মোটা রুটি)। কুইনোয়া। 

উপকারিতাঃ এগুলো ধীরে হজম হয়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে।

৪. প্রোটিন উৎস (Protein Sources)ঃ প্রোটিন শরীরের কোষ গঠন ও ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।  সেরা প্রোটিন উৎসঃ ডিম (বিশেষ করে সেদ্ধ ডিমের সাদা অংশ)। মাছ (রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, টুনা, স্যামন)। মুরগির মাংস (চামড়া ছাড়া)। টোফু, সয়াবি। ডাল ও বাদামজাতীয় খাবার। এড়িয়ে চলবেন: লাল মাংস (বিফ, খাসি), কারণ এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি।

৫. দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য (Dairy Products)ঃ দুগ্ধজাত খাবারে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন থাকে, তবে কম ফ্যাটযুক্ত হতে হবে।  সেরা দুধজাত খাবারঃ স্কিমড মিল্ক (চর্বিমুক্ত দুধ)। দই (চিনি ছাড়া)। ছানা (কম ফ্যাটযুক্ত)। সতর্কতা: মিষ্টি দই বা কনডেন্সড মিল্ক একদম নিষিদ্ধ।

৬. বাদাম ও বীজ (Nuts & Seeds)ঃ এগুলো ভালো ফ্যাট, প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর।  সেরা বাদাম ও বীজঃ  কাঠবাদাম, ,আখরোট, ফ্ল্যাক্স সিড,  চিয়া সিড, সূর্যমুখী বীজ। উপকারিতাঃ এগুলো ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায় এবং ক্ষুধা কমিয়ে রাখে।

৭. তেল ও চর্বি (Healthy Fats)ঃ  ডায়াবেটিস রোগীর জন্য চর্বি মানেই খারাপ নয়—শুধু বেছে খেতে হবে।   ভালো তেলের উৎসঃ  অলিভ অয়েল। নারকেল তেল (সীমিত পরিমাণে)। সরিষার তেল। অ্যাভোকাডো, এড়িয়ে চলুন: বনস্পতি, ঘি, ফাস্টফুডের ভাজা তেল। 

৮. মসলা ও হার্বস (Spices & Herbs){ কিছু প্রাকৃতিক মসলা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।  উপকারী মসলাঃ দারুচিনি, হলুদ, মেথি, আদা, রসুন, দারুচিনি বিশেষভাবে কার্যকর, কারণ এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা (উদাহরণ)

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সঠিক খাদ্যতালিকা তৈরি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে খাদ্যাভ্যাসে সচেতন হতে হয়। নিচে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা (ডায়েট চার্ট) দেওয়া হলো — এটি বাংলাদেশের খাবারধারা অনুযায়ী সাজানো।

 ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খাদ্য নীতিমালাঃ ১. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেতে হবে। ২. অতিরিক্ত ভাত, চিনি, মিষ্টি ও তেলযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। ৩. দিনে ৫–৬ বার অল্প অল্প করে খাওয়া ভালো। ৪. প্রচুর পানি পান করতে হবে (কিন্তু ফলের জুস নয়)। ৫. নিয়মিত হাঁটা ও হালকা ব্যায়াম করতে হবে।

 সকাল বেলার খাবার (Breakfast – সকাল ৭:০০–৮:০০ টা)ঃ  বিকল্প ১ঃ  ১–২ টুকরো লাল আটার রুটি বা ওটস,  ১টি সিদ্ধ ডিম বা অল্প তেলে ভাজা ডিম, ১ কাপ দুধ (চিনি ছাড়া, স্কিমড মিল্ক হলে ভালো)। ১টি ছোট আপেল বা পেয়ারা।

 বিকল্প ২ঃ  ১ কাপ ওটস বা চিড়া (চিনি ছাড়া),  সামান্য বাদাম বা আখরোট, ১ কাপ গ্রিন টি।   দুপুর বেলার খাবার (Lunch – দুপুর ১:০০–২:০০ টা)।

 বিকল্প ১ঃ  ১ কাপ ব্রাউন রাইস বা আটার রুটি ২টি। ১ কাপ শাকসবজি (লাউ, পালং শাক, পটল, মিষ্টিকুমড়া ইত্যাদি)। ১ পিস মাছ (ইলিশ বা তেলযুক্ত মাছ না, বরং রুই, তেলাপিয়া, কাতলা ভালো)।  ১ কাপ ডাল, ১টি ছোট সালাদ (শসা, টমেটো, গাজর, পেঁয়াজ)

 বিকল্প ২ঃ ২ টুকরো আটার রুটি। এক কাপ সবজি। এক পিস মুরগির বুকের মাংস (তেল ছাড়া সিদ্ধ বা গ্রিল করা)। ১ কাপ টক দই (চিনি ছাড়া)। বিকেলের নাস্তা (Evening Snack – বিকেল ৫:০০ টা)

 বিকল্প ১ঃ ১ কাপ গ্রিন টি বা লেবু পানি (চিনি ছাড়া)। ১টি ছোট কলা বা আপেল। ৪–৫টি বাদাম।

 বিকল্প ২ঃ ১ কাপ ডাবের পানি (অল্প পরিমাণে)। ১ টুকরো হোলগ্রেইন বিস্কুট।  রাতের খাবার (Dinner – রাত ৮:০০–৯:০০ টা)

 বিকল্প ১ঃ ২ টুকরো আটার রুটি বা সামান্য ব্রাউন রাইস। ১ কাপ সবজি। ১ পিস মাছ বা চিকেন। ১ কাপ ডাল।

 বিকল্প ২ঃ সবজি স্যুপ বা চিকেন স্যুপ। এক টুকরো রুটি। ১টি ছোট পেয়ারা বা আপেল। 

 ঘুমানোর আগে (Night Snack – রাত ১০:০০–১১:০০ টা)ঃ ১ কাপ দুধ (চিনি ছাড়া) অথবা  ১টি ছোট ফল যেমন পেয়ারা বা আপেল

 যে খাবারগুলো পরিহার করতে হবে

 ভাজা খাবার (পরোটা, সমুচা, পিঁয়াজু)।  সফট ড্রিংকস, মিষ্টি, মিষ্টি দই।  সাদা ভাত ও পোলাও জাতীয় খাবার।  আলু, কলা (বেশি পরিমাণে), মিষ্টি কুমড়া।  অতিরিক্ত তেল ও ঘি।  ফাস্টফুড (বার্গার, পিজা, ফ্রাইড চিকেন ইত্যাদি)।

 ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী খাবার

 ওটস, লাল আটা, ব্রাউন রাইস।  শাকসবজি (লাউ, করলা, পালং, ঝিঙা, মিষ্টি কুমড়া)।  টক দই, ডিম, মাছ, মুরগি। আপেল, পেয়ারা, জাম, কমলা।  বাদাম, আখরোট, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড।  গ্রিন টি বা দারচিনি চা।

 ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অতিরিক্ত পরামর্শ

প্রতিদিন সকালে ও রাতে রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন বা ওষুধ গ্রহণ করুন। খাবারের সময় নির্দিষ্ট রাখুন — একদিনও বাদ দেবেন না। বেশি ক্ষুধা লাগলে শসা, গাজর বা ডাবের পানি নিতে পারেন। 

ডায়াবেটিস রোগীদের পানি ও তরল খাবার গ্রহণের গুরুত্ব

ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। প্রতিদিন অন্তত ২.৫-৩ লিটার পানি পান করা উচিত। এতে কিডনি ভালো থাকে এবং অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়।অতিরিক্ত উপকারী পানীয়ঃ লেবুর পানি (চিনি ছাড়া), গ্রিন টি, মেথি ভেজানো পানি, করলা বা নিমপাতার রস (সপ্তাহে ২-৩ দিন)।  সঠিক খাদ্যের সাথে জীবনধারা পরিবর্তনও জরুরি

ডায়াবেটিস শুধু খাবারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, বরং জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি।  করণীয়ঃ প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন। পর্যাপ্ত ঘুম নিন (৬–৮ ঘণ্টা)। মানসিক চাপ কমান। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন

 ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য  বিশেষজ্ঞদের মতামত

ডায়াবেটোলজিস্টরা বলেন, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য “পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ” সবচেয়ে বড় চিকিৎসা। অর্থাৎ, স্বাস্থ্যকর খাবারও অতিরিক্ত খেলে রক্তে শর্করা বাড়বে। সুতরাং, “কম খান কিন্তু বারবার খান” এই নীতিই সবচেয়ে কার্যকর।  সুষম খাদ্যের ভারসাম্য। একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য দৈনন্দিন খাদ্যে থাকতে হবেঃ ৫০% কার্বোহাইড্রেট (ফাইবারযুক্ত)। ৩০% প্রোটিন, ২০% স্বাস্থ্যকর ফ্যাট,। এই ভারসাম্য বজায় রাখলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা উন্নত হয় এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য  সারাংশ

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খাবার বেছে নিতে হবে কম GI, বেশি ফাইবার ও প্রোটিনসমৃদ্ধ। ফল, সবজি, ডাল, মাছ ও বাদাম হবে প্রতিদিনের মেনুর অংশ। মিষ্টি, ফাস্টফুড, প্রসেসড খাবার সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন।পর্যাপ্ত পানি পান ও প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস রাখুন।

আরো পড়ুনঃ 

 ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। সুষম খাদ্যাভ্যাস ও পরিমিত ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি। মিষ্টি ও অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা দরকার।  ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ও ইনসুলিন ব্যবহার করলে সুস্থ থাকা সম্ভব।

 ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য  ঘরোয়া উপাদান যা রক্তে শর্করা কমায়

করলা রস – প্রাকৃতিক ইনসুলিন হিসেবে কাজ করে।  মেথি বীজ ভিজানো পানি – রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। দারুচিনি গুঁড়া – ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায়। আলোভেরা জেল ও আমলকী রস  প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঘরোয়া উপাদানের মধ্যে মেথি দানা, করলা, তুলসীপাতা, দারুচিনি, ও আমলকি বিশেষভাবে উপকারী।

 এই উপাদানগুলো রক্তে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় ও শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। খালি পেটে করলার রস বা ভেজানো মেথি দানা খেলে রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত কমে। দারুচিনি শরীরে ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি উন্নত করে। তুলসী ও আমলকি প্রতিদিন খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

লেখকের শেষ কথাঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সেরা খাবারের তালিকা

ডায়াবেটিস কোনো অযোগ্য রোগ নয়, বরং এটি একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য জীবনধারা ভিত্তিক অবস্থা। সঠিক খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক প্রশান্তি থাকলে একজন ডায়াবেটিস রোগীও সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

প্রতিদিনের খাবারে যদি সবজি, ফল, বাদাম, শস্য ও প্রোটিনের সঠিক সমন্বয় রাখা যায়, তবে ইনসুলিন ওষুধের উপর নির্ভরতা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। সুস্থ জীবন মানেই সচেতন খাদ্যাভ্যাস, আর সেটিই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url