শিশুদের ঠান্ডা থেকে বাচার ঘরোয়া চিকিৎসা

 শিশুদের ঠান্ডা থেকে বাচার ঘরোয়া চিকিৎসা 

নিচে “শিশুদের ঠান্ডা থেকে বাঁচার ঘরোয়া চিকিৎসা” বিষয়টি নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বাংলা আর্টিকেল দেওয়া হলো, যা আপনি ব্লগ বা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে পারবেন। 

“শিশুদের ঠান্ডা থেকে বাঁচার ঘরোয়া চিকিৎসা” বিষয়ে জানুন কার্যকর ঘরোয়া উপায়, প্রতিরোধ কৌশল, পুষ্টি ও চিকিৎসকের পরামর্শ, শিশুর সুস্থতায় সহায়ক সম্পূর্ণ গাইড।

পোস্ট সূচিপত্রঃ শিশুদের ঠান্ডা থেকে বাচার ঘরোয়া চিকিৎসা 

শিশুদের ঠান্ডা থেকে বাচার ঘরোয়া চিকিৎসা 
শিশুদের ঠান্ডার  সাধারণ লক্ষণ
শিশুদের ঠান্ডার  ঘরোয়া চিকিৎসার কার্যকর উপায়
শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পদ্ধতি
 শিশুদের ঠান্ডার   চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার সময়
 শিশুদের ঠান্ডা হওয়ার কারণ
লেখকের মিতামতঃ শিশুদের ঠান্ডা থেকে বাচার ঘরোয়া চিকিৎসা  

শিশুদের ঠান্ডা থেকে বাঁচার ঘরোয়া চিকিৎসা

ঘরোয়া উপায়ে শিশুর ঠান্ডা সারানোর কার্যকর উপায় ও প্রতিরোধের কৌশল) শিশুরা সাধারণত ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠান্ডা-কাশিতে আক্রান্ত হয়। তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে দুর্বল থাকায় সামান্য আবহাওয়া পরিবর্তন, ধুলোবালি বা ভাইরাসের সংস্পর্শেই সর্দি-কাশি দেখা দেয়। 

আরো পড়ুনঃ

যদিও ঠান্ডা বা সর্দি-কাশি খুব গুরুতর অসুখ নয়, তবে এটি শিশুর খাওয়া-দাওয়া, ঘুম ও স্বাভাবিক আচরণে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই অনেক অভিভাবক শিশুর ঠান্ডা কমানোর জন্য প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায় খোঁজেন।

শিশুদের ঠান্ডা হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলোঃ আবহাওয়া পরিবর্তন: গরম থেকে ঠান্ডা কিংবা ঠান্ডা থেকে গরমে হঠাৎ পরিবর্তন হলে শিশুর শরীর মানিয়ে নিতে পারে না, ফলে ঠান্ডা লাগে। ভাইরাস সংক্রমণ: সাধারণ ঠান্ডা-কাশির প্রায় ৯০% ভাইরাসজনিত। বিশেষত রাইনোভাইরাস (Rhinovirus) শিশুদের সর্দি-কাশির প্রধান কারণ। ধুলোবালি ও দূষণ: ধুলো, ধোঁয়া বা অ্যালার্জেন পদার্থ শিশুর নাক ও গলা উত্তেজিত করে।

অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার বা পানীয়: বরফ ঠান্ডা পানি, আইসক্রিম বা ঠান্ডা দুধ শিশুর গলায় সংক্রমণ ঘটাতে পারে। ভেজা কাপড় বা ঘাম শুকানো না: শিশুর শরীরে ঘাম শুকিয়ে গেলে সহজেই ঠান্ডা লাগতে পারে। অপর্যাপ্ত ঘুম ও পুষ্টির অভাব: দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শিশুদের সংক্রমণের প্রতি বেশি সংবেদনশীল করে তোলে।

শিশুদের ঠান্ডার সাধারণ লক্ষণ

শিশুদের ঠান্ডা হলে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়, যেমনঃ নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ থাকা বা হাঁচি। গলা ব্যথা বা গলার খুসখুসে ভাব। হালকা জ্বর, কাশি (শুষ্ক বা কফসহ)। খাওয়া-দাওয়া কমে যাওয়া  ঘুমে অস্থিরতা। নাক ডাকা বা শ্বাস নিতে কষ্ট।

ঘরোয়া উপায়ে শিশুদের ঠান্ডা কমানোর কার্যকর চিকিৎসা

 ১. বাসায় তৈরি বাষ্প থেরাপিঃ  গরম পানির বাষ্প নাকের বন্ধভাব কমায় এবং শ্বাসনালিতে জমে থাকা কফ পরিষ্কার করে। পদ্ধতিঃ একটি পাত্রে গরম পানি নিয়ে তাতে সামান্য লবণ দিন। তারপর শিশুকে সেই বাষ্পে ৫–৭ মিনিট বসতে দিন (অভিভাবকের উপস্থিতিতে)।

 ২. মধু ও লেবুর মিশ্রণ (১ বছরের বেশি শিশুর জন্য)ঃ মধু গলা নরম করে ও লেবুর ভিটামিন সি সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। পদ্ধতিঃ এক চা চামচ মধু ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস হালকা গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে দিন। দিনে ২ বার দিন।  সতর্কতা: এক বছরের নিচের শিশুকে কখনোই মধু খাওয়ানো যাবে না।

 ৩. লবণ পানি দিয়ে গার্গল (বড় শিশুদের জন্য)ঃ লবণ পানি ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করে ও গলার ব্যথা কমায়। পদ্ধতিঃ অর্ধেক কাপ কুসুম গরম পানিতে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে শিশুকে দিনে ২ বার গার্গল করতে দিন।

 ৪. তুলসী ও আদার চাঃ  তুলসী ও আদা উভয়ই প্রাকৃতিক অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল। পদ্ধতিঃ দুই কাপ পানিতে ৪–৫টি তুলসী পাতা ও সামান্য আদা দিয়ে ফুটিয়ে ছেঁকে নিন। ঠান্ডা হলে শিশুকে অল্প অল্প করে খাওয়ান।

 ৫. রসুনের ঘরোয়া ব্যবহারঃ রসুনে আছে “অ্যালিসিন”, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর। পদ্ধতিঃ একটি রসুনের কোয়া গরম সরিষার তেলে হালকা ভেজে ঠান্ডা করুন। তারপর সেই তেল শিশুর বুকে ও পিঠে হালকা ম্যাসাজ করুন। এতে কফ বের হতে সহজ হবে।

 ৬. পর্যাপ্ত দুধপানঃ শিশু যদি দুধপান উপযুক্ত বয়সের হয়, তবে বুকের দুধই তার সেরা প্রতিরোধ ব্যবস্থা। মায়ের দুধে থাকা অ্যান্টিবডি ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সাহায্য করে।

 ৭. শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষাঃ ঠান্ডায় শিশুরা অনেক সময় কম পানি খায়, ফলে গলা শুকিয়ে যায় ও কফ জমে। শিশুকে নিয়মিত কুসুম গরম পানি বা স্যুপ দিন।

 ৮. পর্যাপ্ত বিশ্রামঃ শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ঘুম ও বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর ঘর শান্ত ও উষ্ণ রাখুন।

 ৯. গরম স্যুপ ও খাবারঃ চিকেন স্যুপ, সবজি স্যুপ বা ডাল স্যুপ শিশুর ঠান্ডা কমাতে দারুণ উপকারী। এতে শরীর উষ্ণ থাকে ও নাকের বন্ধভাব কমে।

 ১০. ইউক্যালিপটাস তেলের ব্যবহারঃ এই তেলের গন্ধ নাক খুলে দেয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ করে। পদ্ধতিঃ এক বাটি গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল দিন। শিশুকে সেই বাষ্পের কাছে ৫ মিনিট রাখুন।

 ১১. শিশুর শরীর গরম রাখুনঃ ঠান্ডা লাগলে শিশুর মাথা, বুক, পা ঢাকা থাকে এমন পোশাক পরান। ঘর খুব ঠান্ডা হলে হালকা উষ্ণতা রাখুন।

 ১২. বাতাস পরিষ্কার রাখুনঃ ধোঁয়া, আগরবাতি, স্প্রে বা পারফিউম শিশুর শ্বাসযন্ত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই ঘর পরিষ্কার ও ধুলোমুক্ত রাখুন।

 ১৩. লবঙ্গ ও দারুচিনিঃ প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে লবঙ্গ ও দারুচিনি শিশুর ঠান্ডা কমাতে সাহায্য করে। পদ্ধতিঃ  এক কাপ পানিতে একটি লবঙ্গ ও একটি দারুচিনি ফুটিয়ে গরম পানির বাষ্পে শিশুকে বসান।

আরো পড়ুনঃ

 ১৪. গরম সেঁক (Hot Compress)ঃ শিশুর বুক বা গলায় ব্যথা হলে গরম সেঁক আরাম দেয়। পদ্ধতিঃ একটি তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে চিপে নিন, তারপর বুকে ২–৩ মিনিট সেঁক দিন।

 ১৫. ঘরোয়া হালকা মালিশঃ সরিষার তেল বা নারিকেল তেলে হালকা গরম করে শিশুর পা ও বুক ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং ঠান্ডা কমে।

শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ঘরোয়া উপায়

১. প্রতিদিন তাজা ফলমূল ও সবজি দিন। ২. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। ৩. নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ৪. শিশুকে বাইরে খেলার সুযোগ দিন, সূর্যের আলো ভিটামিন ডি প্রদান করে। ৫. মিষ্টি বা প্রক্রিয়াজাত খাবার কমান।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন

যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তবে দেরি না করে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিনঃ জ্বর ৩ দিনেও না কমে,  শ্বাস নিতে কষ্ট, খাওয়া বন্ধ, কান ব্যথা বা কানে পুঁজ, নাকের পানি ঘন ও সবুজ রঙের, বমি বা অতিরিক্ত দুর্বলতা।

 শিশুদের ঠান্ডা প্রতিরোধে করণীয়

শিশুকে ঠান্ডা পরিবেশে দীর্ঘক্ষণ থাকতে দেবেন না। বাইরে থেকে এসে হাত-পা ধুয়ে দিন। ভেজা পোশাক দ্রুত বদলে ফেলুন। শীতকালে উষ্ণ কাপড় ব্যবহার করুন। শিশুর ঘর হালকা গরম ও বাতাস চলাচলযোগ্য রাখুন। শিশুকে সবসময় পরিমিত গরম কাপড় পরাতে হবে, বিশেষ করে ঠান্ডা ও সকালে বাইরে বের হলে। 

 ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে হবে, অতিরিক্ত ঠান্ডা বা বাতাস এড়াতে হবে। শিশুকে গরম দুধ, স্যুপ বা পানি খাওয়াতে হবে শরীর গরম রাখতে।  ঠান্ডা লাগলে শিশুকে বাইরে নিয়ে যাওয়া বা ঠান্ডা খাবার খাওয়ানো বন্ধ রাখতে হবে।  নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়।

লেখকের মিতামতঃ শিশুদের ঠান্ডা থেকে বাচার ঘরোয়া চিকিৎসা  

শিশুদের ঠান্ডা বা সর্দি-কাশি সাধারণ সমস্যা হলেও অবহেলা করলে তা বড় ধরনের শ্বাসযন্ত্রের জটিলতা তৈরি করতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরোয়া চিকিৎসা যেমন বাষ্প থেরাপি, তুলসী-আদা চা, গরম স্যুপ বা মধু-লেবুর মিশ্রণ ব্যবহার করলে শিশুর ঠান্ডা দ্রুত ভালো হয়। তবে শিশুর অবস্থা জটিল হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

প্রাকৃতিক যত্ন, পুষ্টিকর খাবার ও পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, এই তিনটি বিষয় মেনে চললে শিশুকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করা সম্ভব। এতক্ষন আপনি আমাদের উপরে বর্ণিত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পাঠ করেছেন এজন্য আপনাকে এজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url