দই ও টক দই খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা
দই ও টক দই খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা
নিচে “দই ও টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা” বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ, S বাংলা আর্টিকেল দেওয়া হলো যেন এটি একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশের উপযোগী হয়।
দই ও টক দই হজমে সাহায্য করে, অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত খেলে ত্বক সুন্দর হয় ও হাড় মজবুত থাকে। তবে অতিরিক্ত খেলে গ্যাস, পেট ফাঁপা ও হজমের সমস্যা হতে পারে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ দই ও টক দই খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা
দই ও টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
দই এমন একটি খাবার যা প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের খাদ্যতালিকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এটি শুধু স্বাদে নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর। বিশেষ করে গরমের দিনে এক বাটি ঠান্ডা দই শরীরে যেমন প্রশান্তি আনে, তেমনি হজমেও সহায়তা করে। দই সাধারণত দু’প্রকার হয়, মিষ্টি দই ও টক দই। দুটোই দুধ থেকে তৈরি হলেও তাদের স্বাদ, গঠন এবং উপকারিতায় কিছু পার্থক্য রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ
দইতে উপস্থিত থাকে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া, যা আমাদের অন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে অতিরিক্ত বা ভুলভাবে দই খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে। তাই এই আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে— দই ও টক দই খাওয়ার উপকারিতা, পুষ্টিগুণ, অপকারিতা এবং খাওয়ার সঠিক নিয়ম।
দই কীভাবে তৈরি হয়
দই তৈরির মূল উপাদান হলো দুধ। দুধ গরম করে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ঠান্ডা করার পর এতে যোগ করা হয় অল্প পরিমাণে পুরনো দই বা ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ স্টার্টার কালচার। এতে ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া (Lactobacillus bulgaricus, Streptococcus thermophilus) দুধের ল্যাকটোজ ভেঙে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি করে। এর ফলে দুধ ঘন হয়ে যায় এবং দই জমে।
টক দই তৈরি করতে তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ সময় ফারমেন্টেশন করা হয়, ফলে ল্যাকটিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি হয় এবং দই টক স্বাদ ধারণ করে। মিষ্টি দই তৈরিতে দুধে আগে থেকেই চিনি বা গুড় মিশিয়ে জমানো হয়।
দই ও টক দইয়ের পুষ্টিগুণ
দই খাওয়ার উপকারিতা
১. হজমশক্তি বৃদ্ধি করে: দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে, যার ফলে গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদহজমের সমস্যা কমে। প্রতিদিন সামান্য পরিমাণ দই খেলে খাবার সহজে হজম হয়।
২. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: টক দইয়ের প্রোবায়োটিক উপাদান শরীরের ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় করে। এতে উপস্থিত ভিটামিন B12 ও ক্যালসিয়াম শরীরকে শক্তি দেয় এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৩. হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী: দই হলো ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের চমৎকার উৎস। এটি হাড়কে মজবুত করে, অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং দাঁতের এনামেল রক্ষা করে।
৪. ত্বক ও চুলের যত্নে: দইয়ে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বক পরিষ্কার করে এবং প্রাকৃতিক গ্লো আনে। টক দই দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক ত্বকের মৃত কোষ দূর করে। পাশাপাশি চুলে দই লাগালে খুশকি কমে ও চুল মসৃণ হয়।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: দইতে ফ্যাট থাকলেও এটি সহজে হজমযোগ্য এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যাঁরা ওজন কমাতে চান, তারা কম ফ্যাটযুক্ত টক দই খেলে উপকার পাবেন।
৬. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: দইয়ে থাকা পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নিয়মিত দই খেলে হাই ব্লাড প্রেসারের ঝুঁকি কমে।
৭. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: টক দইয়ে চিনির পরিমাণ খুব কম, ফলে এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ বাড়ায় না। তাই সীমিত পরিমাণে ডায়াবেটিস রোগীরাও দই খেতে পারেন।
৮. ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সে উপকারী: যাঁরা দুধ খেতে পারেন না, তাদের জন্য দই একটি ভালো বিকল্প। কারণ দইয়ে ল্যাকটোজ ভেঙে যায়, ফলে এটি সহজে হজম হয়।
৯. শরীর ঠান্ডা রাখে ও হিটস্ট্রোক প্রতিরোধ করে: গরমের দিনে এক বাটি ঠান্ডা দই শরীরের তাপমাত্রা কমায় এবং হিটস্ট্রোক প্রতিরোধ করে।
১০. মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে: গবেষণায় দেখা গেছে, প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবার মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নিঃসরণে সাহায্য করে, যা মানসিক চাপ কমায় ও মেজাজ ভালো রাখে।
টক দই খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা
১. টক দইয়ে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া বেশি থাকায় এটি হজমে সর্বাধিক সহায়ক। ২. এটি শরীরের পিএইচ ব্যালান্স ঠিক রাখে, ফলে ত্বক ও হজমতন্ত্র সুস্থ থাকে। ৩. টক দই গরমে শরীরের ঘামজনিত পানিশূন্যতা পূরণে সাহায্য করে। ৪. এতে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দমন করে।৫. প্রতিদিন সকালে অল্প পরিমাণ টক দই খেলে পেটের গ্যাস ও বমিভাব দূর হয়।
দই ও টক দই খাওয়ার অপকারিতা
যদিও দই অত্যন্ত উপকারী খাবার, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটি অপকারও করতে পারে। নিচে গুরুত্বপূর্ণ অপকারিতাগুলো তুলে ধরা হলো:
১. ঠান্ডা ও কাশি বাড়াতে পারে: যাঁদের ঠান্ডা বা সাইনাসের সমস্যা আছে, তারা রাতে বা ঠান্ডা অবস্থায় দই খেলে কাশি ও নাক বন্ধের সমস্যা বাড়তে পারে।
২. অতিরিক্ত খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে: অতিরিক্ত দই খাওয়ায় অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, ফলে ডায়রিয়া বা পেট ফাঁপার ঝুঁকি বাড়ে।
৩. অ্যালার্জির সম্ভাবনা: যাঁদের দুধে অ্যালার্জি আছে, তাদের জন্য দইও ক্ষতিকর হতে পারে। এতে ত্বকে র্যাশ বা হজমজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪. রাতে খাওয়া ঠিক নয়: রাতে দই খেলে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় এবং সর্দি-কাশি বা হজমে সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে টক দই রাতে না খাওয়াই ভালো।
৫. চিনিযুক্ত মিষ্টি দইয়ে ক্যালরি বেশি: মিষ্টি দইয়ে চিনি ও ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি ওজন বাড়াতে পারে এবং ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর।
দই খাওয়ার সঠিক নিয়ম
১. সকাল বা দুপুরে দই খাওয়া সবচেয়ে ভালো সময়। ২. রাতে খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত, বিশেষ করে টক দই। ৩. খালি পেটে টক দই না খাওয়াই ভালো, এতে অ্যাসিডিটি হতে পারে। ৪. ফল, সালাদ বা ভাতের সঙ্গে দই খেলে এটি আরও উপকারী হয়। ৫. ফ্রিজ থেকে সরাসরি ঠান্ডা দই না খেয়ে কিছুটা গরমে রেখে খান।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ১: প্রতিদিন দই খাওয়া কি ভালো?
হ্যাঁ, পরিমিত পরিমাণে (১০০-২০০ গ্রাম) দই প্রতিদিন খাওয়া উপকারী।
প্রশ্ন ২: ডায়াবেটিস রোগী কি দই খেতে পারেন?
টক বা চিনিমুক্ত দই খাওয়া নিরাপদ ও উপকারী।
প্রশ্ন ৩: দই ও টক দই-এর মধ্যে কোনটি বেশি উপকারী?
টক দইয়ে প্রোবায়োটিক বেশি থাকায় এটি তুলনামূলকভাবে বেশি উপকারী, তবে মিষ্টি দই শক্তি যোগায়।
প্রশ্ন ৪: শিশুদের জন্য দই উপকারী কি?
হ্যাঁ, তবে এক বছরের বেশি বয়সের শিশুদের জন্য সামান্য দই হজমে সহায়ক।
প্রশ্ন ৫: দই খাওয়া কি রাতে ঠিক?
সাধারণত রাতে দই খাওয়া এড়ানো উচিত, বিশেষ করে ঠান্ডা বা টক দই।
দই দিয়ে তৈরি কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার
১. দই-চিঁড়া: সকালে হালকা নাস্তা হিসেবে চমৎকার। ২. দই-সালাদ: টক দই, শসা, গাজর, টমেটো মিশিয়ে স্বাস্থ্যকর সালাদ। ৩. লাচ্ছি বা ঘোল: গরমের দিনে তৃষ্ণা নিবারণ ও হজমে উপকারী।
আরো পড়ুনঃ
৪. দই-ভাত: পেট ঠান্ডা রাখে, গ্যাস কমায়। ৫. দই-ফল: আপেল, কলা বা ডালিমের সঙ্গে দই মিশিয়ে খাওয়া যায়।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দইয়ের উপকারিতা
হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর গবেষণায় দেখা গেছে, দই নিয়মিত খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১৮% পর্যন্ত কমে। আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন জানায়, দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম উন্নত করে,
যা ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনের (NCBI) তথ্য অনুযায়ী, টক দই মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী কারণ এটি সেরোটোনিনের ভারসাম্য রক্ষা করে।
আমাদের কথাঃ দই ও টক দই খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা
দই ও টক দই আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যের একটি অপরিহার্য অংশ হতে পারে, যদি সঠিকভাবে ও পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যায়। এটি শরীরের হজম, ইমিউনিটি, ত্বক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য আশ্চর্যজনকভাবে উপকারী। তবে অতিরিক্ত দই খাওয়া, রাতে খাওয়া বা মিষ্টি দইয়ের অতিরিক্ত গ্রহণ শরীরে উল্টো প্রভাব ফেলতে পারে।
সুতরাং, দইকে আপনার খাবারের অংশ করুনঃ তবে সময়, পরিমাণ ও শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী। নিয়মিতভাবে দই খেলে আপনি পাবেন সুস্থ শরীর, সুন্দর ত্বক ও হালকা মেজাজের আনন্দময় জীবন।

.jpg)

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url