সর্বজনীন কল্যাণে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা
সর্বজনীন কল্যাণে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা
ইসলামী ব্যাংক একটি শরিয়াভিত্তিক কল্যাণমুখী ব্যাংকিং ব্যবস্থা। ইসলাম যেমন একটি কল্যাণেমুখী দীন এবং মানবতার মুক্তির সনদ, জীবন ব্যবস্থা, সেই ইসলামেরই অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনই হলো ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা। আজকে এই প্রবন্ধে সর্বজনীন কল্যাণে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আপনারা যারা ইসলামী ব্যাংক সম্বন্ধে অনেক কিছুই জানেন না এবং জানার আগ্রহ আছে, আমার এই প্রবন্ধের সাথে থাকুন তাহলে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা কিভাবে সর্বজনীনকল্যাণ সাধিত হয় তা জানতে পারবেন।
পেজ সূচিপত্রঃ সর্বজনীন কল্যাণে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা
সর্বজনীন কল্যাণে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা
ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা মানবতার সর্বজনীন কল্যাণে নিবেদিত। মহান আল্লাহ পাকের সৃষ্টি চন্দ্র সূর্য পানি ও বায়ু যেমন জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য উন্মুক্ত এবং কল্যাণকর, তেমনি ইসলামী ব্যাংকিং এর কল্যাণ ধারা সর্বজনীন এবং সকলের জন্য অবারিত। সুষমা উন্নয়ন আর্থিক সুবিচার এবং সর্বজনীন কল্যাণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে আজ থেকে ১৯৮৩ সালের মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিশ শতকের চল্লিশের দশকে বিভিন্ন মুসলিম দেশে ইসলামী অর্থব্যবস্থা ও ব্যাংক ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জোরদার হতে থাকে।
আরো পড়ুনঃ
লেনদেন ও ব্যাংক ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য ইসলাম যে পথ দেখিয়েছে গবেষক গণ এসময় তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিখ্যাত মুসলিম মনীষী ও অর্থনীতিবিদগণের দীর্ঘ গবেষণার মধ্য দিয়ে ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা বাস্তবে অস্তিত্ব লাভ করে। মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে এ ব্যাংক ব্যবস্থা বিশ্ব অর্থনীতি ও ব্যাংকিং অঙ্গনে অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছে। সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা মাতাংশ করে দাঁড়িয়ে আছে এবং সামনে এগিয়ে যাচ্ছে ফলে এই ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ইসলামী ব্যাংকিং কি ও কেন
ইসলামী ব্যাংক সকল ধরনের আমানত সংগ্রহ করে, শরিয়া অনুমোদিত পন্যের উপর বিনিয়োগ প্রদান করে, বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনা করে, অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে এবং সর্বজনীন সমাজ কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। ইসলামী ব্যাংক দুইটি নীতিতে আমানত সংগ্রহ করে ১। মুদারাবা নীতি, ২। আল ওয়াদিয়া নীতি।
বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা
বাংলাদেশে ১৯৮৩ সালের ৩০ শে মার্চ ৯৩ বাংলাদেশ লিমিটেড নামে প্রথম ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। সুদমুক্ত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এদেশের মানুষের বহুদিনের প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা পূরণে বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও যশোরসহ একাধিক এলাকায় সুদবিহীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার উদ্যোগের কথা জানা যায়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ও সুদবিহীন অর্থনীতি ও ব্যাংক ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি অব্যাহত থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ডঃ এম এন হুদা, প্রফেসর ডঃ হোসেন, বিজ্ঞান বিভাগের ডঃ হাসান জামান, ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম প্রমুখ এক্ষেত্রে ছিলেন অত্যন্ত সক্রিয়। ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থার উপর লিখিত বই-পুস্তক বাংলায় অনুবাদ শুরু হয়।
বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শক্তিশালী হয় স্বাধীনতা উত্তর কালে। ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ওআইসি সম্মেলনে তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান যোগ দেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় মুসলিম দেশগুলিতে সুদ্মুক্ত ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ১৯৭৪ সালে আগস্ট মাসে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনের সনদে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করে।
বিশ্বব্যাপী ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা
ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী চমৎকার সাফল্য লাভ করেছে। শুধু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেি নয় বরং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, আর্জেন্টিনা, ডেনমার্ক, লুক্সেমবার্গ ও সুইজারল্যান্ড সহ বিশ্বে কয়েকশ ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান শরিয়াহ সম্মতভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ইসলামী ব্যাংক সমূহের মোট সম্পদের পরিমাণ ৫ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি যা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর বিশ্বব্যাপী ইসলামিক ফাইনান্স এর মোট সম্পদের পরিমাণ ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি, যা আগামী ২০২৬ সাল নাগাদ প্রায় আট ট্রিলিয়নে দাঁড়াবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ইসলামী ব্যাংকিং এর মৌলিক বৈশিষ্ট্য
ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা ইসলামের নীতিমালার আলোকে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। ইসলামী শরিয়াহ যেহেতু মানবতার সর্বাঙ্গীন কল্যাণ সাধনের জন্য একটি পুর্ণাংগ জীবন-বিধান সেহেতু ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থাও মানুষের সর্বজনীন কল্যাণ সাধনের জন্য পরিচালিত হয়। ইসলামী ব্যাংকিং এর কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য আছে সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
১। সুদের বিলুপ্তিঃ ইসলামে সুদ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। সুধি লেনদেন করা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। সুদ নৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়সহ মানব জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে ইসলামী ব্যাংকিং যেমন মানুষকে সুদের লেনদেন থেকে বিরত রাখে তেমনই এর ধ্বংসাত্মক পরিণতি থেকে অর্থনীতিকে রক্ষা করার মাধ্যমে মানব কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
২। ইসলামী অর্থনীতির কল্যাণমুখী কাজে সহযোগিতাঃ ইসলামী ব্যাংক মানবতার অর্থনৈতিক মুক্তির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করে। শুধু তেলা মাথায় তেল দেয়া ইসলামী ব্যাংকের নীতি নয়। উচ্চবিত্ত গুটি কয়েক ব্যক্তির মধ্যে বিনিয়োগ সুবিধা সীমিত না রেখে সহায়ক জামাতনতবিহীন সাধারণ মানুষ এবং গরীব মানুষের জন্য বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে থাকে।
৩। আর্থিক ইবাদতঃ ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম আর্থিক ইবাদতের শামিল। কেননা ইসলামী ব্যাংক সুদ বর্জন করে শরিয়া সম্মত আল ওয়াদিয়া ও মুদারাবা পদ্ধতিতে আমানত গ্রহণ করে এবং মুদারাবা, মোশারাকা, বাই পদ্ধতির, ইজারা পদ্ধতি ইত্যাদি মাধ্যমে বিনিয়োগ দেয়। তাই ইসলামী ব্যাংক মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ লাভের সুযোগ করে দেয়।
৪। যাকাত ব্যবস্থা চালুঃ ইসলামী ব্যাংক জাকাত সম্পর্কে গ্রাহকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি ও প্রাতিষ্ঠানিক যাকাত হিসাব এবং বন্টনের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখছে। ব্যাংক তার বিভিন্ন রিজার্ভ সঞ্চিতির উপর যাকাত দেয়। ইসলামী ব্যাংকের এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশে যাকাত সংস্কৃতির চর্চা অনুসরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী যাকাতের প্রত্যক্ষ সুফল পায়।
৫। টাকার ব্যবসা নয়, পণ্যের ব্যবসাঃ ইসলামী ব্যাংক টাকার কারবার করে না। বরং মালের ব্যবসায় করে থাকে। ইসলামী ব্যাংক বাই মুরাবাহা, বাই মুয়াজ্জাল, বাই সালাম, বাই ইসতিস্না, বাই ইস্তিজরার প্রভৃতি পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে থাকে। এসব পদ্ধতিতে ব্যাংক কাউকে টাকা দেয় না, পণ্য সরবরাহ করে থাকে। ফলে ইসলামী ব্যাংকের ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতিও শরিয়াহভিত্তিক হয়। এছাড়া মুশারাকা পদ্ধতিতে লাভ লোকসান, মুদারাবা পদ্ধতিতে মুনাফা ভাগাভাগির সুযোগ থাকায় ইনসাফ ভিত্তিক ব্যবসা পরিচালিত হয়।
ইসলামী ব্যাংকিংয়ে মাকাসিদে শরিয়াহ ও মানব কল্যাণ
ইসলামী শরিয়াহর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের দুনিয়া এবং পরকালের কল্যাণ সাধন করা। পাঁচটি আবশ্যিক বিষয়ের সুরক্ষা করা ইসলামের উদ্দেশ্য। সেগুলি হলো; "দীন রক্ষা, জীবন-সম্ভ্রম রক্ষা, সম্পদ রক্ষা, জ্ঞান রক্ষা ও বংশধারা রক্ষা"। ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় শরিয়া নীতিমালা প্রয়োগ করার মাধ্যমে তথা কল্যাণ অর্জনের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। মহান আল্লাহ বলেন, "তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি তোমাদের উদ্ভব হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য"। (সুরা আলে ইমরান ৪ঃ১১০)
মাকাসিদে শরিয়া তথা মানব কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য ইসলামী ব্যাংকের প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে মানব গোষ্ঠীর সম্পদের হালাল ও পবিত্রতা নিশ্চিত করা এবং তাদের সম্পদের নিরাপদ ও নিরাপত্তা বিধান করা, ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম দেখাশোনা করা। ইসলামী ব্যাংকের লেনদেনে সামগ্রিকভাবে সুদ বর্জন করা এবং মানবতার কল্যাণ নিশ্চিত করা।
আমানত গ্রহণে কল্যাণঃ ইসলামী ব্যাংক মানুষের অর্থ সম্পদের নিরাপত্তা এবং প্রবৃদ্ধিতে সাহায্য করে, সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের সঞ্চয় বাড়ানোর সুযোগ দান এবং সমাজের অলস অর্থ সম্পদকে শরীয়া ভিত্তিক বিনিয়োগ করার মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধন করা।
ইসলামী ব্যাংকের কল্যাণ ধর্মী আমানত প্রোডাক্ট সমূহ
ইসলামী ব্যাংকের যে প্রোডাক্টগুলি চালু করা হয়েছে তা মানুষের কল্যাণের দিক বিবেচনা করে করা হয়েছে। নিম্নে আমরা কয়েকটি প্রোডাক্টের বর্ণনা দিলামঃ
মুদারাবা ওয়াকফ ক্যাশ ডিপোজিট একাউন্টঃ ওয়াকফ একটি চিরস্থায়ী ধরনের দান যাতে মূল সম্পদ ঠিক থাকে এবং এর আয় জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়। রসুল (সঃ) বলেছেন, যখন মানুষ মারা যায় তখন তিনটি ছাড়া তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়.১। সদকায়ে জারিয়া বা এমন দান যা দীর্ঘদিন যাবত চলতে থাকে ২। এমন জ্ঞান যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়. ৩। নেক সন্তান যে তাদের জন্য দু'আ করে।
ইসলামী ব্যাংক মুদারাবা ওয়াকফ ক্যাশ ডিপোজিট একাউন্ট চালু করেছে।. মুদারাবা নীতিতে এই হিসাব টাকা জমা দেওয়া হয়। ওয়াকফকারী প্রকৃত অর্থ কিস্তিতে জমা করতে পারে। মূল টাকা থেকে যায় আর মুনাফার টাকা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।
মুদারাবা হজ্জ সেভিংস একাউন্টঃ ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের একটি স্তম্ভ। অনেকে এককালীন টাকা যোগাড় করতে অক্ষম। তাই ইসলামী ব্যাংক জনকল্যাণমূলক কাজে সহযোগিতার জন্য হজ্জ অ্যাকাউন্ট চালু করেছে। ১ থেকে ২৫ বছর মেয়দী কিস্তিতে অথবা এক কালিন টাকা জমা কর্রা সহজ হয়।
মুদারাবা মোহর সেভিংস একাউন্টঃ মোহর স্বামী স্ত্রীর মৌলিক অধিকার এবং এটা আদায় করা একটা ইবাদত। ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী একজন স্বামী তার স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদান করবে এটা ফরজ। মহান আল্লাহ বলেন, "তোমরা খুশি মনে স্ত্রীদের যা প্রদান কর যদি তারা স্বেচ্ছায় কিছু অংশ ছেড়ে দেয় তবে তা ভোগ করো। (সুরা আন নিসা আয়াত ৪)। মোহর পরিশোধ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং এই ইবাদতে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য ইসলামী ব্যাংক মুদারাবা মহররম চালু করেছে। এর মাধ্যমে মোহর পরিশোধ করা স্বামীর জন্য সহজ হয়।
ইসলামী ব্যাংকের কল্যাণ ধর্মী বিনিয়োগ কার্যক্রম
ইসলামী ব্যাংক ইসলামী শরিয়াহর ভিত্তিতে স্বল্প সংখ্যক ব্যবসার মাঝে সম্পদ পঞ্জীভুত না করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাঝে বিনিয়োগ অনুমোদন দিয়ে গ্রামীণ জনপদে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনীতির ভিত মজবুত করার কাজে সহযোগিতা করছে। নিম্নে কিছু কার্যক্রমের বর্ণনা দেয়া হলোঃ
১। এসএমই খাতে অর্থায়নঃ কর্মসংস্থান, দারিদ্র বিমোচন, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, বৈষম হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন সর্বোপরি অর্থনৈতিক উন্নয়ন এর লক্ষ্যে ইসলামী ব্যাংক এসএমই খাতে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করেছে।
২। কৃষি খাতে বিনিয়োগঃ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি প্রধান খাত। এই খাতকে শক্তিশালী করার জন্য ইসলামী ব্যাংক কৃষি খাতে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করেছে। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য পুষ্টি, নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের জন্য কৃষিখাতে বিনিয়োগবহার সুবিধা প্রদান করে যাচ্ছে।
৩। আবাসন ও পরিবহন খাতে বিনিয়োগঃ দেশের আবাসন ও পরিবহন খাতে ইসলামী ব্যাংক ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের আবাসন সমস্যা দূরীভূত হয়েছে। বাংলাদেশের পরিবহন খাতে মোট বিনিয়োগের সিংহ ভাগই ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে।
৪। দারিদ্র বিমোচন, পল্লী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নঃ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে পল্লী উন্ন্যন প্রকল্প চালু করা হয়। এই প্রকল্পের অধীন গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের মধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধি, সচেতনতা সৃষ্টি, সঞ্চয় গঠন, প্রশিক্ষণ বিভিন্ন কর্মকান্ডে বিনিয়োগ কার্যক্রম চালু করেছে। এ পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের 90% নারী উদ্যোক্তা। গ্রামীণ জনপদের নারী উদ্যোক্তা বৃদ্ধি করতে পারলে পুরুষদের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে।. ইসলামী ব্যাংক সেই জনকল্যাণমুলক কাজটিই করে যাচ্ছে।
ইসলামী ব্যাংকের জাতীয় ও অর্থনৈতিক কল্যাণে অবদান
ইসলামী ব্যাংক উৎপাদন মুখী আমদানি বিকল্প ও রপ্তানি খাতমুখী খাতে বিনিয়োগ বহুমুখী করার জন্য সুষম ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। দেশে কয়েক হাজার শিল্প কারখানা ইসলামী ব্যাংকের কল্যাণে অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল, স্পিনিং মিলস, সুতা মিল, স্টিল রি- রোলিং মিল, লোহা, ইস্পাত শিল্পসহ অসংখ্য কারখানায় বিনিয়োগ প্রদান করে যাচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প এবং প্রবাসের রেমিটেন্স আহরণে এবং উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ইসলামী ব্যাংকের কল্যাণ ধর্মী অন্যান্য কার্যক্রম
ইসলামী ব্যাংক আরো দানামুখী ও কল্যাণমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে। নিচে কয়েকটি কার্যক্রমের বর্ণনা দেওয়া হলো।
১। প্রবাসীদের কল্যাণে ইসলামী ব্যাংকঃ বৈদেশিক রেমিটেন্স দেশের প্রধান চালিকাশক্তি ।এ খাতে 1984 সালে প্রথম কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম থেকেই ইসলামী ব্যাংক ও গণ সম্পৃক্ততা কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স আহরণের জন্য প্রবাসী গ্রাহকদের সচেতন করে তোলে। ইসলামী ব্যাংক ফরেন রেমিটেন্স আহরণে বাংলাদেশ প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
২। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইসলামী ব্যাংকের অবদানঃ বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবস্থান শক্তিশালী করণে ইসলামী ব্যাংকের অবদান অনস্বীকার্য। ফরেন রেমিটেন্স আহরণ এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে রিজার্ভে প্রচুর অর্থ জমা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফান্ডে।
৩। করোনা মহামারী কালে জাতীয় প্রনোদনা বিতরণঃ কোভিড ১৯ মহামারী কালে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিঘ্নিত যাতে না হয় সে লক্ষ্যে ইসলামী ব্যাংকের নিবেদিত প্রাণ জনশক্তি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে। বিশেষ করে কোভিড ১৯ মহামারী চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় ইসলামী ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ কৃষি এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প ও পোশাক খাতসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করে।
ইসলামী ব্যাংকের সিএসআর কার্যক্রমের মাধ্যমে কল্যাণ
ইসলামী ব্যাংক সামাজিক কর্মসূচি সিএসআর এর মাধ্যমে মানবীক মূল্যবোধের বিকশিত একটি সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে।
আরো পড়ুনঃ
ইসলামী ব্যাংক জাতি, ধর্ম , বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের কল্যাণে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে। ইসলামী ব্যাংক কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য, দাতব্য প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন খাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে।
আমাদের শেষ কথা
বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রমের যাত্রা আরম্ভ হয়েছিল কল্যাণ মুখী আর্থিক সেবা প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে। বর্তমান ইসলামী ব্যাংক তার দীর্ঘ পথ চলার উদ্দেশ্য পূর্ণ করেছে। ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা সুদমুক্ত কল্যাণ ধর্মী ব্যাংক ব্যবস্থা আজ একটি বাস্তবমুখী ও সফল আর্থ-সামাজিক উদ্যোগ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই ব্যাংক ব্যবস্থা দেশের সকল আইন বিধিমালার অধীনে জবাবদিহির আওতায় এসে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য কল্যাণ ধর্মী ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করছে। এদেশের কোটি কোটি গ্রাহক ও লক্ষ লক্ষ শেয়ার এর আস্থায় ধন্য হয়েছে।
এতক্ষন আপনি আমাদের সাথে থেকে আমাদেরকে ধন্য করেছেন এবং ইসলামী ব্যাংকের সর্বজনীন কল্যাণে কি দায়িত্ব পালন করছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আপনি যদি ইসলামী ব্যাংক সমন্ধে আরও জানতে চান তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বারবার পড়ুন এবং আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে শেয়ার করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url