নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ এবং পলাশীর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ এবং পলাশীর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট


নবাব সিরাজউদ্দৌলা সম্বন্ধে আজকের আর্টিকেল লিখতে শুরু করেছি। আপনার নবাব সিরাজউদ্দৌলার সম্বন্ধে জানার অনেক আছে। নবাব সিরাজউদ্দৌলা কেন পরাজিত হয়েছিলেন সে বিষয়ে অনেকেরই জানার কৌতুহল আছে। কোন প্রেক্ষাপটে পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তাও আপনি জানতে পারবেন। 

নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর বাংলার স্বাধীনতা অস্তমিত হয়েছিল। সেই পরাজয়ের গোলামী থেকে বাংলার মানুষ আজও স্বাধীনচেতা হতে পারেনি। তাই আপনি এই প্রবন্ধটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অধ্যয়ন করুন এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ জানতে পারবেন।

পেজ সূচিপত্র্র: নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ এবং পলাশীর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট 
বাংলার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা 
সিরাজউদ্দৌলার শাসন এবং বৈদেশিক সম্পর্ক 
পলাশীর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট 
সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মূল কারণ 
পলাশীর যুদ্ধ সংক্ষিপ্ত বিবরণ
যুদ্ধ পরবর্তী প্রভাব 
পলাশীর যুদ্ধ থেকে আমাদের শেখার বিষয়
আমাদের শেষ বক্তব্য 

নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ এবং পলাশীর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

একটি ইতিহাসভিত্তিক বিশ্লেষণঃ  বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা এবং তাঁর শাসনামল ঘিরে গড়ে ওঠা পলাশীর যুদ্ধ (২৩ জুন, ১৭৫৭) ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা। এই যুদ্ধে নবাবের পরাজয় শুধু একজন শাসকের পতনই নয়, বরং একটি জাতির স্বাধীনতার অবসান ও উপনিবেশিক শাসনের সূচনা। 

আরো পড়ুনঃ

এই লেখায় আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি, নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মূল কারণসমূহ এবং যুদ্ধ-পরবর্তী প্রভাব সম্পর্কে।

পটভূমি: বাংলার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা

১৮শ শতকের প্রথমার্ধে বাংলা ছিল ভারতবর্ষের সবচেয়ে ধনী এবং সমৃদ্ধ এলাকা। সুবেদার মুর্শিদ কুলী খাঁর আমল থেকে শুরু করে আলীবর্দী খাঁ পর্যন্ত বাংলায় একটি কার্যকর প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে ওঠে। আলীবর্দী খাঁর মৃত্যুর পর ১৭৫৬ সালে তাঁর দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলা বাংলার নবাব হন। তাঁর শাসনামল ছিল মাত্র এক বছরেরও কম, কিন্তু এই সময়ে বাংলার রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছে যায়।

সিরাজউদ্দৌলার শাসন এবং বৈদেশিক সম্পর্ক

সিরাজউদ্দৌলা নবাব হওয়ার পর থেকেই ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। ইংরেজরা ব্যবসার ছুতোয় নিজেদের সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি বাড়িয়ে চলছিল। কোম্পানির প্রধান দুর্গ ফোর্ট উইলিয়ামে অবৈধভাবে অস্ত্র মজুদ, শুল্ক না দেওয়া এবং স্থানীয় শাসকদের অবজ্ঞা নবাবকে ক্ষিপ্ত করে তোলে।

পলাশীর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

১৭৫৬ সালের জুন মাসে সিরাজউদ্দৌলা কলকাতা (তৎকালীন কাসিমবাজার) আক্রমণ করে ইংরেজদের ফোর্ট উইলিয়াম দখল করে নেন। ইংরেজরা তখনকার মতো পিছু হটে, কিন্তু ফিরে আসে ১৭৫৭ সালের গোড়ার দিকে রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে। ক্লাইভ সিরাজের অভ্যন্তরীণ শত্রুদের সঙ্গে গোপনে যোগসাজশ করেন, যার ফলে যুদ্ধের পরিণতি নির্ধারিত হয়ে যায় আগেই।

সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মূল কারণসমূহ

১. অভ্যন্তরীণ বিশ্বাসঘাতকতা: সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের সবচেয়ে বড় কারণ ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের বিশ্বাসঘাতকতা। সেনাপতি মীর জাফর, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ এবং যগৎশেঠদের মত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ইংরেজদের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করে নবাবকে পরাজিত করেন। যুদ্ধ চলাকালীন মীর জাফরের সৈন্যদল কোনো যুদ্ধেই অংশ নেয়নি, বরং নির্লিপ্ত ছিল।

২. অপরিণত রাজনৈতিক দক্ষতা: সিরাজ মাত্র ২৩ বছর বয়সে নবাব হন এবং অভিজ্ঞতার অভাবে তাঁর রাজনৈতিক কৌশল প্রায়ই অস্থির ও তাৎক্ষণিক ছিল। তাঁর রুক্ষ ব্যবহার ও হঠকারী সিদ্ধান্ত অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীকেও বিরূপ করে তোলে।

৩. ইংরেজদের চাতুর্য এবং কূটনীতি: রবার্ট ক্লাইভ অত্যন্ত চতুর ও ধুরন্ধর কূটনীতিক ছিলেন। তিনি নবাবের ভেতরের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে সফলভাবে একাধিক ষড়যন্ত্রের জাল বুনে নবাবকে বিচ্ছিন্ন করে দেন।

৪. অর্থনৈতিক অস্থিরতা: নবাবের কোষাগারে অর্থাভাব দেখা দেয়, বিশেষ করে ইংরেজ ও অন্যান্য বিদেশি বণিকদের কর ফাঁকি এবং যুদ্ধ প্রস্তুতির ব্যয় বেড়ে যাওয়ায়। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সেনাবাহিনীর মজুরি ও রসদে ঘাটতি দেখা দেয়।

৫. সামরিক দুর্বলতা: নবাবের বাহিনী ছিল সংখ্যায় বেশি হলেও সংগঠিত এবং প্রশিক্ষিত ছিল না। বিপরীতে ইংরেজদের সেনাবাহিনী কম হলেও অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ও সুসংগঠিত ছিল।

পলাশীর যুদ্ধ: সংক্ষিপ্ত বিবরণ

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন, পলাশীর আম্রকাননে যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। সিরাজউদ্দৌলার সেনাবাহিনী ছিল প্রায় ৫০,০০০ জন, যেখানে ইংরেজদের ছিল প্রায় ৩,০০০ জন। কিন্তু বিশ্বাসঘাতক সেনাপতিদের কারণে নবাব কার্যত একা পড়ে যান। মাত্র তিন ঘণ্টার যুদ্ধে নবাবের পরাজয় ঘটে। যুদ্ধশেষে সিরাজউদ্দৌলা পালিয়ে যান কিন্তু ধরা পড়ে নিহত হন।

যুদ্ধ-পরবর্তী প্রভাব

১. ইংরেজদের রাজনৈতিক আধিপত্যের সূচনা:পলাশীর যুদ্ধ ছিল ভারতবর্ষে ইংরেজ উপনিবেশ স্থাপনের মূল ভিত্তি। এর মাধ্যমে তারা কেবল বাংলা নয়, ধীরে ধীরে সমগ্র ভারতেই রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে।

২. মীর জাফরের পুতুল নবাবত্ব: ইংরেজরা মীর জাফরকে নবাব বানালেও বাস্তবে ক্ষমতা ছিল কোম্পানির হাতে। তিনি ছিলেন কেবল নামমাত্র শাসক।

আরো পড়ুনঃ

৩. বাংলার সম্পদের লুণ্ঠন: যুদ্ধের পর ইংরেজরা বিপুল সম্পদ লুট করে ইংল্যান্ডে নিয়ে যায়। বাংলার অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ে।

৪. জনমানসে ভয় ও ত্রাস: সাধারণ মানুষের মধ্যে ইংরেজদের প্রতি এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়। বহু সম্ভ্রান্ত পরিবার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

পলাশীর যুদ্ধ থেকে আমাদের শেখার বিষয়

পলাশীর যুদ্ধ আমাদের শিক্ষা দেয়, জাতীয় ঐক্য ছাড়া স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব নয়। বিশ্বাসঘাতকতা, নেতৃত্বের দুর্বলতা এবং বিদেশি ষড়যন্ত্র কিভাবে একটি জাতির পতন ঘটাতে পারে, সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় তার জ্বলন্ত উদাহরণ। নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ছিল শুধু একটি যুদ্ধের পরাজয় নয়, বরং একটি জাতির স্বাধীনতার পরাজয়।

 বিশ্বাসঘাতকতা, অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র, ইংরেজদের কূটনৈতিক দক্ষতা এবং সিরাজের রাজনৈতিক অপরিপক্বতা, এই সব মিলিয়ে পলাশীর যুদ্ধ ভারতের ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় হয়ে রয়ে গেছে। এই ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, জাতীয় ঐক্যের অভাব এবং বিভেদের রাজনীতি কীভাবে একটি জাতিকে শতাব্দীর পর শতাব্দী পরাধীন করে রাখতে পারে।

আমাদের শেষ বক্তব্যঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ এবং পলাশীর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

আমরা নবাব সিরাজউদ্দৌলার কারণ এবং পলাশীর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেছি। আপনাদের যাদের বিষয়টি জানা নেই আশা করছি এই আর্টিকেল পাঠ করে অনেক বিষয় জানতে পেরেছেন। সিরাজউদ্দৌলা কেন পর্যায় বরণ করেছিলেন এবং কেন পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এই বিষয়গুলি জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন।

নবাব সিরাজউদ্দৌলা বাংলার ইতিহাসে এক স্মরণীয় নাম, একজন বীরের নাম, একটি ইতিহাসের নাম যাকে অকালে দুনিয়ার বুক থেকে বিদায় নিতে হয়েছে এবং একটি ট্রাজেডিটের জন্ম দিয়ে দিয়েছেন। এই আর্টিকেলটি পাঠ করে যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে শেয়ার করবেন। আমরা নিয়মিত এই ওয়েবসাইটে আরটিকেল লিখে থাকি। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আমাদের এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url