সারাবিশ্বে শব্দ দূষণে শীর্ষ ১০টি শহর

 সারাবিশ্বে শব্দ দূষণে শীর্ষ ১০টি শহর

আমি এখন আপনাদের সামনে সারা বিশ্বে শব্দদূষণে শীর্ষ দশটি শহরের বিস্তারিত আলোচনা করব। শব্দ দূষণ কেন হয়, এর প্রতিকার কি, কোন কোন শহর শব্দ দূষণের শীর্ষ তালিকায় আছে, ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পেশ করেছি।

আপনি সারা বিশ্বে শব্দ দূষণের শীর্ষ তালিকায় যে শহরগুলি আছে সেগুলি জানতে চাইলে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে অধ্যায়ন করুন। তাহলে সারা বিশ্বে শব্দ দূষণে শীর্ষ ১০ টি শহর সম্বন্ধে জানতে পারবেন। চলুন এবার শুরু করা যাক। আমাদের সাথেই থাকবেন। 

পেজ সূচিপত্রঃসারাবিশ্বে শব্দ দূষণে শীর্ষ ১০টি শহর
সারাবিশ্বে শব্দ দূষণে শীর্ষ ১০টি শহর
শব্দ দূষণ কী
শব্দ দূষণের ক্ষতিকর দিক
শব্দ দূষণে বিশ্বের শীর্ষ দশ শহর
শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়
আমাদের শেষ মন্তব্য

 সারাবিশ্বে শব্দ দূষণে শীর্ষ ১০টি শহর

শব্দ দূষণ বর্তমান বিশ্বে একটি ভয়াবহ পরিবেশগত সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি শুধু শ্রবণশক্তির ক্ষতি করে না, বরং মানসিক চাপ, হৃদরোগ, নিদ্রাহীনতা এবং অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

আরো পড়ুনঃ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) শব্দ দূষণকে আধুনিক যুগের একটি 'অদৃশ্য হত্যাকারী' হিসেবে অভিহিত করেছে। আজকের এই প্রবন্ধে আমরা জানব কোন দশটি শহর বর্তমানে শব্দ দূষণের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, এবং কীভাবে এই দূষণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

শব্দ দূষণ কী

শব্দ দূষণ বলতে বোঝানো হয় এমন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত বা বিরক্তিকর শব্দ যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত করে। সাধারণত ৭০ ডেসিবেল (dB) এর বেশি শব্দ শরীরের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। 

শহুরে জীবনে যানবাহনের শব্দ, নির্মাণকাজ, শিল্পকারখানা, উচ্চ ভলিউমে মিউজিক বা লাউডস্পিকার, এমনকি অতিরিক্ত জনসংখ্যার চিৎকার-চেঁচামেচি শব্দ দূষণের প্রধান উৎস।

শব্দ দূষণের ক্ষতিকর দিক

শব্দ দূষণ হলো এমন এক প্রকার পরিবেশ দূষণ, যেখানে অতিরিক্ত এবং বিরক্তিকর শব্দ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। এটি সাধারণত যানবাহনের শব্দ, কারখানার শব্দ, লাউড স্পিকার, নির্মাণকাজ, এবং উচ্চস্বরে গান শোনার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। শব্দ দূষণ শুধু কানে সমস্যা তৈরি করে না, বরং এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে।

১। শ্রবণশক্তি হ্রাসঃ  অতিরিক্ত শব্দ দীর্ঘদিন ধরে শুনলে শ্রবণশক্তি ধীরে ধীরে কমে যায়। বিশেষ করে যেসব মানুষ কারখানায়, বিমানবন্দরে, বা যানবাহনের প্রচণ্ড শব্দের মাঝে কাজ করেন, তারা কানের স্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।

২। হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপঃ  শব্দ দূষণ মানুষের দেহে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ তৈরি করে। এই চাপের ফলে হৃদস্পন্দনের হার বেড়ে যায় এবং রক্তচাপও বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘমেয়াদে এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, এমনকি হঠাৎ মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

৩। ঘুমের ব্যাঘাতঃ রাতের সময় শব্দ দূষণ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং মানসিক স্বাস্থ্যও খারাপ হয়। শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব আরও মারাত্মক হতে পারে।

৪। মানসিক চাপ ও উদ্বেগঃ ধারাবাহিকভাবে উচ্চ শব্দে অবস্থান করলে মানুষের মধ্যে বিরক্তি, উদ্বেগ, রাগ এবং মনোসংযোগের অভাব দেখা যায়। এটি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি করে এবং কর্মজীবীদের কাজের দক্ষতা কমিয়ে দেয়।

৫। শিশুদের বিকাশে বাধাঃ  শব্দ দূষণ শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। তারা মনোযোগ দিতে পারে না, ঘুম ঠিকমতো হয় না এবং স্কুলে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ে।

৬। পশু-পাখির ক্ষতিঃ শব্দ দূষণ শুধু মানুষের ওপরই প্রভাব ফেলে না, বরং পশু-পাখিও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উচ্চ শব্দে অনেক পাখি বাসস্থান পরিবর্তন করে, দিশেহারা হয়ে যায়, এমনকি মারা যায়। জলজ প্রাণীরাও জাহাজ ও সাবমেরিনের শব্দে ভীত ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।

৭। গর্ভবতী নারীদের ওপর প্রভাবঃ  গর্ভবতী নারীরা শব্দ দূষণের কারণে মানসিক চাপ ও উদ্বেগে ভোগেন, যা গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এতে শিশুর ওজন কমে যাওয়া, অকাল প্রসব এমনকি জন্মগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৮. সামাজিক অস্থিরতাঃ ধারাবাহিকভাবে শব্দ দূষণ মানুষের সহনশীলতা কমিয়ে দেয়। এটি পরিবার ও সমাজে কলহ, বিরক্তি ও মানসিক অস্থিরতা বাড়ায়, যা সামাজিক শান্তির জন্য হুমকি।

শব্দ দূষণ একটি নীরব ঘাতক। এর প্রভাব তৎক্ষণাত বোঝা না গেলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি মানুষের জীবনকে ধ্বংস করতে পারে। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং বিকল্প প্রযুক্তির ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন।

শব্দ দূষণে বিশ্বের শীর্ষ দশ শহর

১। ঢাকা, বাংলাদেশঃ  ঢাকা শব্দ দূষণে শীর্ষে থাকা একটি শহর। বিশ্বব্যাংক ও WHO-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ঢাকায় গড় শব্দমাত্রা অনেক সময় ৯৫-১১০ ডেসিবেল ছাড়িয়ে যায়, যেখানে স্বাস্থ্যকর মাত্রা ৬৫ ডেসিবেল। যানজট, হর্ন, অবৈধ সাউন্ড সিস্টেম এবং নির্মাণকাজ এর মূল কারণ।

২। দিল্লি, ভারতঃ  দিল্লি শহরে অতিরিক্ত ট্রাফিক, নির্মাণ এবং শিল্প কার্যক্রমের কারণে গড় শব্দ মাত্রা ১০০ ডেসিবেল পর্যন্ত পৌঁছে। বিশেষ করে উৎসবের সময় অতিরিক্ত পটকা ও শব্দবাজি সমস্যাকে আরও গুরুতর করে তোলে।

৩। ইসলামাবাদ, পাকিস্তানঃ  ইসলামাবাদ শব্দ দূষণের দিক থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। যানবাহনের চাপ ও অপ্রয়োজনীয় হর্ন ব্যবহারের কারণে শহরের অনেক এলাকায় শব্দ মাত্রা নিয়মিতভাবে ৯০ ডেসিবেল ছাড়িয়ে যায়।

৪। হো চি মিন সিটি, ভিয়েতনামঃ এই শহরের রাস্তায় বাইক ও স্কুটারের সংখ্যা অত্যধিক বেশি। গড়ে ৮৫-৯৫ ডেসিবেল শব্দ সৃষ্টি হয়, যা নিয়মিত নাগরিকদের শ্রবণশক্তি ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।

৫।  কায়রো, মিশরঃ  কায়রো শহরে প্রায় ৯০ লাখ যানবাহন রয়েছে। সেখানকার যানজট ও অকারণে হর্ন ব্যবহারের কারণে শব্দমাত্রা ৯০ ডেসিবেলের উপরে উঠে যায়। WHO-এর মতে, এই শহরের শব্দ দূষণ মানসিক স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।

৬। ইস্তাম্বুল, তুরস্কঃ  ইস্তাম্বুল শহরের শব্দ দূষণের বড় কারণ হলো ট্র্যাফিক জ্যাম, যান্ত্রিক কার্যক্রম, এবং শহরের ভিড়। রাতেও এখানে শব্দমাত্রা ৭৫ ডেসিবেলের নিচে নামে না।

৭। ব্যাঙ্কক, থাইল্যান্ডঃ  ব্যাংকক শহরের শব্দ দূষণ মূলত যানবাহনের কারণে। এখানে রাস্তার পাশে থাকা বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত উচ্চ শব্দে জীবন কাটাতে বাধ্য হন, যার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৮। নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্রঃ  নিউ ইয়র্ক শহর কখনো ঘুমায় না, এই কথাটি যেমন বিখ্যাত, তেমনি এখানকার শব্দ দূষণও তেমনই কুখ্যাত। মেট্রো, ট্যাক্সি, নির্মাণকাজ এবং পার্টি সব মিলিয়ে শব্দমাত্রা অনেক সময় ৯০ ডেসিবেল ছাড়িয়ে যায়।

আরো পড়ুনঃ

৯। সাংহাই, চীনঃ  সাংহাই শহরে নির্মাণ কার্যক্রম, ট্র্যাফিক, এবং শিল্পকারখানার মিলিত শব্দ দূষণ প্রায়শই ৮৫-৯৫ ডেসিবেল এ থাকে। এই শহরের অনেক শিশু ইতোমধ্যে শ্রবণ সমস্যায় ভুগছে।

১০।  লস এঞ্জেলস, যুক্তরাষ্ট্রঃ  লস অ্যাঞ্জেলস শহরে বিমানের শব্দ, যানবাহন এবং পার্টির উচ্চ শব্দ দূষণের মূল উৎস। শহরের বসবাসকারীরা নিয়মিতভাবে উচ্চ শব্দমাত্রার সম্মুখীন হন।

শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়

১। আইন প্রয়োগঃ  প্রতিটি শহরে শব্দ দূষণ নিরসনে সুনির্দিষ্ট আইন থাকলেও বাস্তবায়ন দুর্বল। এ ক্ষেত্রে আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

২। সচেতনতা বৃদ্ধিঃ  শব্দ দূষণের কুফল সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা আবশ্যক। স্কুল, কলেজ ও গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে।

৩। সাইলেন্ট জোন চিহ্নিতকরণঃ হাসপাতাল, স্কুল ও লাইব্রেরি এলাকার আশেপাশে ‘সাইলেন্ট জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে হর্ন নিষিদ্ধ করতে হবে।

৪। যানবাহনের শব্দনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহারঃ গাড়ির সাইলেন্সার চেক করা, অনাবশ্যক হর্নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

৫।  নির্মাণ কাজের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণঃ  নির্মাণ কার্যক্রম দিনের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত যাতে রাতে বিশ্রামে ব্যাঘাত না ঘটে।

আমাদের শেষ মন্তব্যঃ সারাবিশ্বে শব্দ দূষণে শীর্ষ ১০টি শহর

শব্দ দূষণ এক প্রকার 'নীরব ঘাতক' যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মান কমিয়ে দেয়। যদিও এটি দৃশ্যমান নয়, কিন্তু এর প্রভাব অত্যন্ত গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী। বিশ্বজুড়ে শহরগুলোর মধ্যে এই সমস্যা দিন দিন বাড়ছে এবং মানুষের স্বাস্থ্যের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। তাই সময় এসেছে—শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তুলতে হলে এখনই আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।

সারা বিশ্বের শব্দ দূষণে শীর্ষ ১০ টি শহরের নাম উল্লেখ করেছে এবং বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি আপনি এই তালিকাটি ভালোভাবে পাঠ করেছেন এবং এর কারণ ও  প্রতিকার সম্বন্ধে জানতে পেরেছেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমরা নিয়মিত এই ওয়েবসাইটে কন্টেন্ট লিখে থাকি। তাই আপনি এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুন অনেক বিষয় জানতে পারবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url