ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস কিভাবে করে

ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস কিভাবে করে

ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। এই আর্টিকেলে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন, রেমিট্যান্স, ট্রেড ফাইন্যান্স ও সর্বশেষ ২০২৫ সালের পরিসংখ্যানসহ ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং প্রক্রিয়ার বিশদ আলোচনা রয়েছে।

আপনি যদি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ অধ্যয়ন করেন তাহলে ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস কিভাবে করে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আপনি ইচ্ছা করলে ইসলামী ব্যাংকের সাথে আপনার ব্যবসায়ের বিজনেস চালু করতে পারেন। আপনি আপনার বন্ধু ও নিকট আত্মীয়দের সাথে শেয়ার করে জানিয়ে দিতে পারেন যে, ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস নেটওয়ার্ক খুব শক্তিশালী।

পোস্ট সূচিপত্রঃ ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস কিভাবে করে

ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস কিভাবে করে
ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস কীফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস এর প্রয়োজনীয়তা
ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেসের মুলনীতি
ইসলামী ব্যাংকের  ২০২৫ সালের পরিসংখ্যান
ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেসের সুবিধা
ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস  এর চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
লেখকের শেষ মন্তব্যঃ ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস কিভাবে করে

ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস: বিস্তারিত প্রক্রিয়া ও সর্বশেষ তথ্যসহ

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক হিসেবে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যাংকটি শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না, বরং ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেসের মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্য ও রেমিট্যান্সে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

আরো পড়ুনঃ 

 বিশেষ করে, বাংলাদেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স সংগ্রহে ইসলামী ব্যাংক সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আর্টিকেলে আমরা ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেসের প্রক্রিয়া, এর বিভিন্ন দিক, সর্বশেষ তথ্য ও পরিসংখ্যান এবং শরিয়াহ নীতির প্রয়োগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

 ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস কী, ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস এর প্রয়োজনীয়তা

ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস বলতে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন, রেমিট্যান্স, ট্রেড ফাইন্যান্স, এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত কার্যক্রম বোঝায়। ইসলামী ব্যাংক এই কার্যক্রম পরিচালনা করে শরিয়াহ নীতির ভিত্তিতে, যেখানে সুদমুক্ত লেনদেন এবং নৈতিক বিনিয়োগ নীতি অনুসরণ করা হয়।

ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস (বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ব্যবসা) পরিচালনার জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এবং সাধারণভাবে বিবেচনা করা যায়। নিচে এই ব্যবসার প্রধান প্রয়োজনীয়তাগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলোঃ 

১। আইনি ও নিয়ন্ত্রক প্রয়োজনীয়তা লাইসেন্স ও অনুমোদনঃ  বাংলাদেশে ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে মানি চেঞ্জার লাইসেন্স প্রাপ্তি বাধ্যতামূলক। এই লাইসেন্স পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।

রেজিস্ট্রেশনঃ  ব্যবসাটি একটি রেজিস্টার্ড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হতে হবে (যেমন, প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি)। রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (RJSC) এর মাধ্যমে এটি করতে হবে। অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং (AML) ও কমব্যাটিং ফিনান্সিং অব টেররিজম (CFT): বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) এর নির্দেশনা অনুযায়ী AML ও CFT বিধি মেনে চলতে হবে। এর মধ্যে গ্রাহকের পরিচয় যাচাই (KYC) এবং সন্দেহজনক লেনদেনের রিপোর্টিং অন্তর্ভুক্ত। ট্যাক্স ও ভ্যাট নিবন্ধন: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) থেকে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (TIN) এবং প্রযোজ্য হলে ভ্যাট নিবন্ধন প্রয়োজন।

২. আর্থিক ও মূলধন প্রয়োজনীয়তাঃ ন্যূনতম মূলধন: বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী মানি চেঞ্জার ব্যবসার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ করতে হবে। এটি সাধারণত ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার মধ্যে হতে পারে (প্রকৃত পরিমাণ নীতিমালার উপর নির্ভর করে)।লিকুইডিটি: নিয়মিত লেনদেন পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত নগদ মজুদ এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তরলতা থাকতে হবে। ব্যাংক গ্যারান্টি: কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ব্যাংক গ্যারান্টি জমা দিতে হতে পারে।

৩। প্রযুক্তিগত ও অবকাঠামোগত প্রয়োজনীয়তাঃ অফিস স্থাপন: ব্যবসার জন্য একটি উপযুক্ত অফিস স্থাপন করতে হবে, যা গ্রাহকদের জন্য সহজে অ্যাক্সেসযোগ্য এবং নিরাপদ হবে।

৪। নিরাপত্তা ব্যবস্থাঃ  নগদ অর্থ ও মূল্যবান দলিল রক্ষার জন্য সিসিটিভি, সেফ ভল্ট এবং অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন।

৫। সফটওয়্যার ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মঃ  লেনদেনের হিসাব রাখতে এবং রিয়েল-টাইম মুদ্রা বিনিময় হার ট্র্যাক করতে উপযুক্ত সফটওয়্যার ব্যবহার করা প্রয়োজন।

৬।   ইন্টারনেট ও যোগাযোগঃ দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা।

৭। জনবল ও প্রশিক্ষণদক্ষ কর্মীঃ  ফরেন এক্সচেঞ্জ ব্যবসার জন্য প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগ করতে হবে, যারা মুদ্রা বিনিময়, গ্রাহক সেবা, এবং আইনি বিধি সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন।প্রশিক্ষণ: AML, CFT, এবং গ্রাহক পরিষেবা বিষয়ে কর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।

৮। বাজার ও নেটওয়ার্কবাজার গবেষণাঃ  স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে মুদ্রা বিনিময়ের চাহিদা এবং প্রতিযোগিতা বিশ্লেষণ করতে হবে।

৯। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কঃ  ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সংস্থাগুলোর (যেমন, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রাম) সাথে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা।

১০। গ্রাহক ভিত্তিঃ  বিদেশগামী শ্রমিক, পর্যটক, ব্যবসায়ী এবং আমদানি-রপ্তানিকারকদের মতো লক্ষ্য গ্রাহকদের চিহ্নিত করা।

১১। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা মুদ্রার হারের ঝুঁকিঃ  মুদ্রার মূল্যের ওঠানামা মোকাবিলায় কৌশল তৈরি করা।জাল মুদ্রা সনাক্তকরণ: জাল মুদ্রা শনাক্ত করার জন্য প্রশিক্ষণ এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার।আইনি ঝুঁকি: আইন মেনে না চললে জরিমানা বা লাইসেন্স বাতিলের ঝুঁকি এড়াতে সতর্কতা।

১২।  রেকর্ডকিপিং ও রিপোর্টিংলেনদেনের রেকর্ড: প্রতিটি লেনদেনের বিস্তারিত রেকর্ড রাখতে হবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নিয়মিত রিপোর্ট জমা দিতে হবে।অডিট: নিয়মিত আর্থিক অডিট করা এবং আইনি সম্মতি নিশ্চিত করা।

১৩। গ্রাহক সেবাপ্রতিযোগিতামূলক রেটঃ  বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মুদ্রা বিনিময় হার প্রদান।স্বচ্ছতা: লেনদেন ফি এবং হার সম্পর্কে গ্রাহকদের স্পষ্ট তথ্য দেওয়া।দ্রুত সেবা: দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য সেবা প্রদানের জন্য দক্ষ সিস্টেম।

১৪। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশেষ বিবেচনা:বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালাঃ বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন (Foreign Exchange Guidelines) কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।

১৫। রেমিট্যান্স বাজার: বাংলাদেশে রেমিট্যান্স একটি বড় বাজার, তাই এই খাতে ফোকাস করা লাভজনক হতে পারে।স্থানীয় চাহিদা: বিমানবন্দর, পর্যটন এলাকা, বা বাণিজ্যিক হাবে ব্যবসা স্থাপন করলে গ্রাহকের সংখ্যা বাড়তে পারে।

পরামর্শঃ ফরেন এক্সচেঞ্জ ব্যবসা শুরু করার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট (www.bb.org.bd) থেকে সর্বশেষ নীতিমালা সংগ্রহ করুন এবং একজন আইনি পরামর্শদাতার সাথে পরামর্শ করুন। এছাড়া, ব্যবসার ঝুঁকি ও সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করতে একটি বিস্তারিত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করুন।

ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেসের মুলনীতি

 এই বিজনেসে মূলত তিনটি প্রধান ক্ষেত্র রয়েছেঃ রেমিট্যান্স সেবাঃ  প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা। ট্রেড ফাইন্যান্সঃ  আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য ফাইন্যান্সিং এবং লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) সুবিধা। মুদ্রা বিনিময় বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় ও রূপান্তর।

ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস শরিয়াহভিত্তিক নীতি অনুসরণ করে, যেখানে মুদারাবা, মুশারাকা, এবং মুরাবাহার মতো ইসলামী ব্যাংকিং পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ সেবা ইসলামী ব্যাংক তার বিস্তৃত শাখা নেটওয়ার্ক এবং আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ফরেন এক্সচেঞ্জ সেবা প্রদান করে। নিচে এর প্রধান সেবাগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ 

১। রেমিট্যান্স সেবাঃ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের বৈদেশিক রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষস্থানীয় ভূমিকা পালন করে। ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটি দেশের মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ৩০% পরিচালনা করে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এই ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠায়। 

এই সেবার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলোঃ  দ্রুত লেনদেন: ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সংস্থা যেমন ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রাম, এবং রিয়া’র সঙ্গে চুক্তি রয়েছে, যা দ্রুত অর্থ স্থানান্তর নিশ্চিত করে। নিম্ন খরচ: শরিয়াহ নীতি অনুসরণ করে রেমিট্যান্সে স্বচ্ছ ফি কাঠামো বজায় রাখা হয়। বিস্তৃত নেটওয়ার্ক: ৩৯৪টি শাখা, ২৩৬টি উপ-শাখা, এবং ২,৬৯৬টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাধ্যমে সেবা প্রদান। 

 ২। ট্রেড ফাইন্যান্সঃ ইসলামী ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্যে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ীদের জন্য বিভিন্ন ফাইন্যান্সিং সুবিধা প্রদান করে। এর মধ্যে রয়েছে:লেটার অব ক্রেডিট (এলসি): আমদানিকারকদের জন্য এলসি ইস্যু করা, যা শরিয়াহ নীতি মেনে পরিচালিত হয়। 

৩। মুরাবাহা ফাইন্যান্সিং: আমদানিকৃত পণ্যের জন্য মুরাবাহা চুক্তির মাধ্যমে ফাইন্যান্সিং, যেখানে ব্যাংক পণ্য ক্রয় করে নির্দিষ্ট মুনাফার হারে বিক্রি করে।মুশারাকা ও মুদারাবা: রপ্তানি বাণিজ্যে অংশীদারিত্বভিত্তিক ফাইন্যান্সিং।বিল অব এক্সচেঞ্জ: রপ্তানিকারকদের জন্য বিল ক্রয় ও ডিসকাউন্টিং সুবিধা। ২০২৫ সালে ইসলামী ব্যাংকের ট্রেড ফাইন্যান্স পোর্টফোলিওর মূল্য প্রায় ২৫০ বিলিয়ন টাকা, যা বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

৪।  মুদ্রা বিনিময়: ইসলামী ব্যাংক বিভিন্ন দেশের মুদ্রার বিনিময় সেবা প্রদান করে। এই সেবার মাধ্যমে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বিদেশ ভ্রমণ, শিক্ষা, চিকিৎসা, বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে। ব্যাংকটি প্রধান মুদ্রা যেমন ইউএস ডলার, ইউরো, পাউন্ড, এবং সৌদি রিয়ালের বিনিময়ে বিশেষ দক্ষতা রাখে।

৫। ফরেন রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড:  ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি ২০১৯, ২০২০, ২০২১, এবং ২০২২ সালে সেন্টার ফর এনআরবি থেকে গোল্ড রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯ ও ২০২০ সালে রেমিট্যান্স পুরস্কার প্রদান করে। এই পুরস্কারগুলো ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ সেবার দক্ষতা ও নির্ভরযোগ্যতার প্রমাণ। 

৬। ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেসে শরিয়াহ নীতির প্রয়োগঃ  ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস শরিয়াহ নীতির ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে:সুদমুক্ত লেনদেন: ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী সুদ নিষিদ্ধ। তাই ব্যাংক মুদারাবা (লাভ-লোকসান ভাগাভাগি), মুশারাকা (অংশীদারিত্ব), এবং মুরাবাহা (মূল্য প্রকাশ করে বিক্রয়) নীতি ব্যবহার করে।

৭। নৈতিক বিনিয়োগঃ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনে এমন খাতে বিনিয়োগ করে যা শরিয়াহ সম্মত, যেমন হালাল ব্যবসা, এবং অ্যালকোহল, জুয়া, বা অনৈতিক কার্যক্রমে জড়িত ব্যবসায় বিনিয়োগ নিষিদ্ধ।স্বচ্ছতা: লেনদেনে স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়, যাতে গ্রাহকরা সঠিক তথ্য পান।

ইসলামী ব্যাংকের  ২০২৫ সালের পরিসংখ্যান

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস ২০২৫ সালে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। নিচে সর্বশেষ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো:

আরো পড়ুনঃ 

১। রেমিট্যান্স প্রবাহঃ  ২০২৪ সালে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আহরণ করা হয়েছে, যা ২০২৫ সালে ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২। ট্রেড ফাইন্যান্সঃ  ব্যাংকের ট্রেড ফাইন্যান্স পোর্টফোলিও ২০২৪ সালে ২৩০ বিলিয়ন টাকা থেকে ২০২৫ সালে ২৫০ বিলিয়ন টাকায় উন্নীত হয়েছে।

৩। মুদ্রা বিনিময় লেনদেনঃ  দৈনিক গড়ে ৫০০ মিলিয়ন টাকার মুদ্রা বিনিময় লেনদেন পরিচালিত হচ্ছে।শাখা সম্প্রসারণ: ২০২৫ সালে ব্যাংকটি নতুন ১০টি শাখা এবং ৫০টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট খুলেছে, যা ফরেন এক্সচেঞ্জ সেবার পরিধি বাড়িয়েছে।

ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেসের সুবিধা

ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ সেবা গ্রাহকদের জন্য বেশ কিছু সুবিধা প্রদান করে:

১। দ্রুত ও নিরাপদ সেবাঃ  আধুনিক প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে দ্রুত এবং নিরাপদ লেনদেন।

২। শরিয়াহ সম্মতিঃ  সুদমুক্ত এবং নৈতিক লেনদেন গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করে।বিস্তৃত নেটওয়ার্ক: দেশব্যাপী শাখা এবং এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাধ্যমে সহজ প্রবেশাধিকার।

৩। গ্রাহক সেবাঃ  ২৪/৭ কল সেন্টার এবং অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা।

ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস  এর চ্যালেঞ্জ ও সমাধান

ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেসে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন:তারল্য সংকট: ২০২৪ সালে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে কিছু আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন পর্ষদ গঠনের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের পথে।  

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাঃ বিশ্বব্যাপী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতা বাড়ানোর প্রয়োজন।

নিয়ন্ত্রণঃ  বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলা।

সমাধানঃ ডিজিটাল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম শক্তিশালী করা। নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ, যেমন ব্লকচেইন ভিত্তিক লেনদেন।গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা।

লেখকের শেষ মন্তব্যঃ ইসলামী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেস কিভাবে করে

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি ফরেন এক্সচেঞ্জ বিজনেসে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রেমিট্যান্স, ট্রেড ফাইন্যান্স, এবং মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে ব্যাংকটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ২০২৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্যাংকটি বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে এবং ট্রেড ফাইন্যান্সে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। 

শরিয়াহ নীতির প্রতি অঙ্গীকার এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক ভবিষ্যতেও এই ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়ে যাবে। আপনি যদি ফরেন এক্সচেঞ্জ সেবা গ্রহণ করতে চান, তাহলে ইসলামী ব্যাংকের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক এবং নির্ভরযোগ্য সেবা আপনার জন্য সঠিক পছন্দ হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url