ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ড কিভাবে কাজ করে

 🔚 ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ড কিভাবে কাজ করে

ইসলামী ব্যাংক ইসলামী শরীয়ত ভিত্তিতে পরিচালিত হয়।. ইসলামী শরিয়ার ভিত্তিতে চালাতে হলে একটি শরিয়া বোর্ড গঠন করতে হয়। ইসলামী ব্যাংকের জন্য শরিয়া বোর্ড কিভাবে কাজ করে সে বিষয়টি আমরা আজকের আর্টিকেলে তুলে ধরব।

আমরা আজকের আর্টিকেলে ইসলামিক ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ড কিভাবে কাজ করে, এর সংজ্ঞা, গুরুত্ব, শরিয়াহ বোর্ডের গঠন ও পরিচালনা, মূল দায়িত্বম  ভূমিকা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেছি। আপনি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পাঠ করে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করুন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ 📌 ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ড কিভাবে কাজ করে

✅  ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ড কিভাবে কাজ করে
🕌 ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ড কী, শরিয়াহ বোর্ডের সংজ্ঞা ও মৌলিক ধারণা
📌 ইসলামী ব্যাংকিংএ  শরিয়াহ বোর্ডের গুরুত্ব
🧠ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডের গঠন ও সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি
📋 ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডের মূল দায়িত্বসমূহ
📈 ইসলামী ব্যাংকিংয়ে শরিয়াহ বোর্ডের গুরুত্ব – পরিসংখ্যান ও বাস্তবতা
💼ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ড কিভাবে কাজ করে – ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ
🏛️ বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় শরিয়াহ বোর্ড (CSBIB) ও তার ভূমিকা
📚 ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডের চ্যালেঞ্জসমূহ
🧭 ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডঃ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সুপারিশসমূহ
📝
 লেখকের শেষ মতামতঃ শরিয়াহ বোর্ড ছাড়া ইসলামী ব্যাংক কল্পনাই করা যায় না 

✅  ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ড কিভাবে কাজ করে

🟢 ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ড কীভাবে কাজ করে, তার গঠন, দায়িত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া এবং ইসলামী ব্যাংকিংয়ে এর গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।  ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ড কিভাবে কাজ করে – বিস্তারিত বিশ্লেষণ। 

🔍 ইসলামী ব্যাংকিং একটি শরিয়াহ ভিত্তিক আর্থিক ব্যবস্থা, যেখানে সুদ (রিবা) পরিহার করে শরিয়াহ সম্মত পদ্ধতিতে লেনদেন করা হয়। এই ব্যবস্থার অন্যতম নিয়ামক শক্তি হলো শরিয়াহ বোর্ড। এই বোর্ডের মূল দায়িত্ব হলো ব্যাংকের সব ধরনের কার্যক্রম শরিয়াহর গাইডলাইনের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা নিরীক্ষণ ও নির্দেশনা প্রদান করা।

আরো পড়ুনঃ 

১. ✅ ব্যাংকিং পণ্য ও চুক্তির অনুমোদনঃ নতুন কোনো ব্যাংকিং পণ্য (যেমন: মুরাবাহা, ইজারা, মোদারাবা, মুশারাকা) চালুর আগে শরিয়াহ বোর্ড সেই পণ্যটির শরিয়াহ ভিত্তিক বৈধতা পরীক্ষা করে। পণ্যের চুক্তিপত্র, শর্তাবলি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি বিশ্লেষণ করে ফতোয়া প্রদান করে।

২. ✅ শরিয়াহ অডিট ও পর্যালোচনাঃ ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় সময়ে সময়ে শরিয়াহ অডিট পরিচালনা করা হয়। অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে বোর্ড সদস্যরা কোনো ধরনের শরিয়াহ বিরোধী কার্যক্রম শনাক্ত করলে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সংশোধন করতে বলেন।

৩. ✅ পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা প্রদানঃ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য বিভাগসমূহকে শরিয়াহ সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান করেন। বিশেষভাবে জটিল আর্থিক বা বিনিয়োগ ইস্যুতে শরিয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধান দেন। 

৪. ✅ গবেষণা ও উন্নয়নঃ আন্তর্জাতিক শরিয়াহ স্ট্যান্ডার্ড (যেমন: AAOIFI) অনুযায়ী নতুন আর্থিক পণ্য ও চুক্তি উদ্ভাবনে গবেষণা করেন। ইসলামী ফিকহ ও সমসাময়িক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে চর্চা বৃদ্ধি করে। 

৫. ✅ বার্ষিক শরিয়াহ রিপোর্ট প্রদানঃ  শরিয়াহ বোর্ড প্রতি বছর ব্যাংকের কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে "বার্ষিক শরিয়াহ রিভিউ রিপোর্ট" প্রকাশ করে। এই রিপোর্টে বলা হয় ব্যাংকের কর্মকাণ্ড শরিয়াহর আলোকে কতটুকু সঠিকভাবে পরিচালিত হয়েছে।

🕌 ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ড কী, শরিয়াহ বোর্ডের সংজ্ঞা ও মৌলিক ধারণা

শরিয়াহ বোর্ড হলো ইসলামী অর্থনীতিবিদ, ফিকহ (ইসলামী আইন) বিশেষজ্ঞ এবং বিশেষজ্ঞ আলেমদের সমন্বয়ে গঠিত একটি পরামর্শদাতা ও তদারকি কমিটি, যারা ব্যাংকের প্রতিটি আর্থিক পণ্য ও সেবা ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী নিরীক্ষা ও মূল্যায়ন করেন।

শরিয়াহ বোর্ড হলো একদল ইসলামী বিশেষজ্ঞ আলেম ও ফিকহ বিশারদদের সমন্বয়ে গঠিত একটি পরামর্শক পরিষদ। এই বোর্ডের কাজ হলোঃ

ব্যাংকের সব ধরনের আর্থিক পণ্য, চুক্তি ও বিনিয়োগ শরিয়াহ মোতাবেক হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করা।শরিয়াহ্ সম্পর্কিত ফতওয়া প্রদান। নতুন আর্থিক পণ্য ডিজাইনের ক্ষেত্রে শরিয়াহ নির্দেশনা প্রদান।

📌 ইসলামী ব্যাংকিংএ  শরিয়াহ বোর্ডের গুরুত্ব

ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে শরিয়াহ্ বা ইসলামী আইনের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এই ব্যবস্থাকে নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি ইসলামী ব্যাংকে একটি নিরপেক্ষ ও প্রজ্ঞাবান শরিয়াহ বোর্ড গঠন করা হয়, যা ব্যাংকের প্রতিটি আর্থিক কার্যক্রম শরিয়াহসম্মত কিনা, তা পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ করে। আধুনিক বিশ্বে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে শরিয়াহ বোর্ডের দায়িত্ব ও কার্যক্রমও দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

🧠 ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডের গঠন ও সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি

✅ সদস্য সংখ্যা ও যোগ্যতাঃ  সাধারণত ৩ থেকে ৭ জন ইসলামি অর্থনীতি, উসূলুল ফিকহ, তাফসীর ও হাদীসে পারদর্শী আলেম এই বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত হন। অনেক সময় শরিয়াহ্ বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি অর্থনীতিবিদ বা ব্যাংকিং পেশাদারও অন্তর্ভুক্ত থাকেন।

✅ নিয়োগ প্রক্রিয়াঃ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংক অব বাংলাদেশ (CSBIB)-এর অনুমোদনের মাধ্যমে সদস্য মনোনয়ন করে। সদস্যদের নিয়োগ কেবলমাত্র ইসলামী যোগ্যতা নয়, বরং তাদের বাস্তব ব্যাংকিং জ্ঞানের ভিত্তিতেও নির্ধারিত হয়। 

📚 শরিয়াহ বোর্ডের সদস্যগণ কারা হনঃ একজন বা একাধিক ফিকহ বিশেষজ্ঞ (Mufti বা Shariah Scholar)

অর্থনীতি ও ইসলামী ব্যাংকিংয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিপ্রয়োজনে অ্যাকাউন্টিং, আইন বা কর্পোরেট বিষয়ে পারদর্শী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশে শরিয়াহ বোর্ড গঠনের নিয়ম বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিকা অনুসারে করা হয়। 

📋 ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডের মূল দায়িত্বসমূহ

      দায়িত্ব ব্যাখ্যা

🔹 নীতি নির্ধারণ ব্যাংকের আর্থিক কার্যক্রমের জন্য শরিয়াহ ভিত্তিক গাইডলাইন নির্ধারণ।

🔹 চুক্তি যাচাই মুরাবাহা, ইজারা, মুশারাকা, মোদারাবা চুক্তি ইত্যাদির শরিয়াহ্ সম্মততা নিশ্চিত করা।

🔹 মাসিক/ত্রৈমাসিক বৈঠক         নতুন পণ্য, বিনিয়োগ বা সেবা নিয়ে আলোচনা ও অনুমোদন।

🔹 অডিট ও পর্যবেক্ষণ শরিয়াহ্ নিরীক্ষক বা শরিয়াহ্ অডিটরদের রিপোর্ট পর্যালোচনা করা।

🔹 গ্রাহক ও ব্যাংকের মধ্যে দ্বন্দ্বে ফতওয়া প্রদান কোনো বিতর্ক বা প্রশ্ন উঠলে শরিয়াহ ভিত্তিক সিদ্ধান্ত প্রদান। 

📈 ইসলামী ব্যাংকিংয়ে শরিয়াহ বোর্ডের গুরুত্ব – পরিসংখ্যান ও বাস্তবতা

বাংলাদেশ ব্যাংক                    (২০২৪ সালের তথ্যানুসারে) জানিয়েছে

দেশে বর্তমানে ১০টিরও বেশি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক এবং ১৯টি কনভেনশনাল ব্যাংকের ইসলামি উইং চালু রয়েছে।  প্রতিটি ইসলামী ব্যাংকে গড়ে ৫ জন সদস্যবিশিষ্ট শরিয়াহ বোর্ড সক্রিয়।  ২০২3 সালের তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকগুলোর প্রায় ৯৪% লেনদেন শরিয়াহ্ বোর্ডের অনুমোদিত কাঠামোর মধ্যেই পরিচালিত হয়েছে।  

💼 ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ড কিভাবে কাজ করে – ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ

✅ ধাপ ১: নতুন পণ্যের খসড়া পর্যালোচনাঃ  ব্যাংকের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ যখন নতুন কোনো আর্থিক পণ্য তৈরি করে, তা প্রথমে শরিয়াহ বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়। 

✅ ধাপ ২: শরিয়াহ সম্মততা যাচাইঃ বোর্ড খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করে দেখে পণ্যে কোনো সুদ বা গায়র শরয়ি উপাদান আছে কিনা। 

✅ ধাপ ৩: পরামর্শ প্রদানঃ যদি শরিয়াহর পরিপন্থী কিছু থাকে, তাহলে তারা সংশোধনের জন্য নির্দেশ দেন। 

✅ ধাপ ৪: অনুমোদনঃ সবকিছু শরিয়াহ মোতাবেক হলে তারা লিখিত অনুমোদন প্রদান করেন। 

✅ ধাপ ৫: নিয়মিত অডিট ও রিপোর্টঃ ব্যাংকের নিরীক্ষণ টিম থেকে রিপোর্ট পেলে তা যাচাই করেন এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ দেন। 

🏛️ বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় শরিয়াহ বোর্ড (CSBIB) ও তার ভূমিকা

সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংক অব বাংলাদেশ (CSBIB) হচ্ছে বাংলাদেশের সকল ইসলামী ব্যাংকের জন্য কেন্দ্রীয় শরিয়াহ্ তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠান।  এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত। সকল শরিয়াহ বোর্ড সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও মান উন্নয়নের দায়িত্ব পালন করে। নিয়মিত শরিয়াহ সম্মেলন, কর্মশালা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় শরিয়াহ বোর্ড ও তার ভূমিকা  সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোঃ 

বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে শরিয়াহ্ অনুযায়ী পরিচালনার জন্য ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় "কেন্দ্রীয় শরিয়াহ্ বোর্ড ফর ইসলামী ব্যাংকস অব বাংলাদেশ" (Central Shariah Board for Islamic Banks of Bangladesh - CSBIB)। এটি একটি স্বতন্ত্র ও অ-লাভজনক সংস্থা, যা দেশের সকল ইসলামী ব্যাংক ও ইসলামি উইন্ডো চালিত ব্যাংকের শরিয়াহ্ কার্যক্রম তদারকি ও সমন্বয় করে।

১। . শরিয়াহ্ গাইডলাইন প্রদান: ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম শরিয়াহ্ সম্মত রাখতে নির্দেশনা দেয়। ২।  তত্ত্বাবধান ও নিরীক্ষা: শরিয়াহ্ অডিট ও পর্যালোচনার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম সঠিকভাবে হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করে। ৩। ফতোয়া ও মতামত প্রদান: আর্থিক লেনদেনে শরিয়াহ্ বিষয়ে জটিলতা থাকলে ফতোয়া দিয়ে সমাধান প্রদান করে।

 ৪। গবেষণা ও প্রশিক্ষণ: ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা এবং শরিয়াহ্ প্রশিক্ষণ প্রদান করে। ৫। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সমন্বয়: বিভিন্ন ব্যাংকের শরিয়াহ্ বোর্ডের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করে।  এই বোর্ড ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুশাসন ও শরিয়াহ্ ভিত্তিক মান নিশ্চিত করে বাংলাদেশের ইসলামী অর্থনীতি শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

📚 ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডের চ্যালেঞ্জসমূহ

     চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা

🔸 আধুনিক ব্যাংকিং পণ্যের জটিলতা ক্রমাগত পরিবর্তনশীল ব্যাংকিং পণ্যের শরিয়াহ বিশ্লেষণ কঠিন।

🔸 প্রশিক্ষিত শরিয়াহ বিশেষজ্ঞের অভাব বাংলাদেশে ইসলামিক অর্থনীতি নিয়ে উচ্চশিক্ষিত জনবল সীমিত।

🔸 গ্রাহকের মধ্যে জ্ঞানের ঘাটতি গ্রাহকেরা অনেক সময় শরিয়াহর মূলনীতি না বুঝেই অভিযোগ করেন।

🔸 আন্তর্জাতিক শরিয়াহ মানদণ্ডে সামঞ্জস্য AAOIFI ও IFSB-এর মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা প্রয়োজন।

🌐 আন্তর্জাতিকভাবে শরিয়াহ বোর্ডের গঠন ও পরিচালনা

বিশ্বব্যাপী ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় শরিয়াহ বোর্ডের গঠন একইরকম। যেমনঃ মালয়েশিয়ায় ব্যাংক নিগম আইন অনুসারে শরিয়াহ কমিটি বাধ্যতামূলক। দুবাই ইসলামিক ব্যাংকে শরিয়াহ বোর্ডের সদস্যরা আন্তর্জাতিক ফোরামে অংশ নেন। বাহরাইন ভিত্তিক AAOIFI (Accounting and Auditing Organization for Islamic Financial Institutions) শরিয়াহ মান নির্ধারণ করে। 

আরো পড়ুনঃ 

বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় শরিয়াহ বোর্ড ও তার ভূমিকা (সংক্ষেপে)ঃ  বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে শরিয়াহ্ অনুযায়ী পরিচালনার জন্য ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় "কেন্দ্রীয় শরিয়াহ্ বোর্ড ফর ইসলামী ব্যাংকস অব বাংলাদেশ" (Central Shariah Board for Islamic Banks of Bangladesh - CSBIB)। এটি একটি স্বতন্ত্র ও অ-লাভজনক সংস্থা, যা দেশের সকল ইসলামী ব্যাংক ও ইসলামি উইন্ডো চালিত ব্যাংকের শরিয়াহ্ কার্যক্রম তদারকি ও সমন্বয় করে।

১। শরিয়াহ্ গাইডলাইন প্রদান: ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম শরিয়াহ্ সম্মত রাখতে নির্দেশনা দেয়। ২।  তত্ত্বাবধান ও নিরীক্ষা: শরিয়াহ্ অডিট ও পর্যালোচনার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম সঠিকভাবে হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করে। ৩। ফতোয়া ও মতামত প্রদান: আর্থিক লেনদেনে শরিয়াহ্ বিষয়ে জটিলতা থাকলে ফতোয়া দিয়ে সমাধান প্রদান করে। 

৪।  গবেষণা ও প্রশিক্ষণ: ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা এবং শরিয়াহ্ প্রশিক্ষণ প্রদান করে। ৫। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সমন্বয়: বিভিন্ন ব্যাংকের শরিয়াহ্ বোর্ডের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করে।এই বোর্ড ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুশাসন ও শরিয়াহ্ ভিত্তিক মান নিশ্চিত করে বাংলাদেশের ইসলামী অর্থনীতি শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

🧭 ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডঃ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সুপারিশসমূহ

✅ শরিয়াহ বোর্ডের সদস্যদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও আপডেটেড কোর্স চালু করা

✅ ইসলামী ফিনান্স ও শরিয়াহ ফিকহ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা বিস্তার

✅ কাস্টমার অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রামের মাধ্যমে গ্রাহকদের শিক্ষিত করা

✅ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শরিয়াহ নিরীক্ষা মান উন্নয়ন

📝 লেখকের শেষ মতামতঃ শরিয়াহ বোর্ড ছাড়া ইসলামী ব্যাংক কল্পনাই করা যায় না 

ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার পবিত্রতা ও গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে শরিয়াহ বোর্ডের দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার ওপর। এই বোর্ড শুধু একটি আনুষ্ঠানিক কাঠামো নয়, বরং এটি ইসলামী নীতিমালার বাস্তবায়নের অভিভাবক। সঠিক পরিচালনা, নিয়মিত মূল্যায়ন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই বোর্ড ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আধুনিক দুনিয়ার জন্য উপযোগী করে তুলতে পারে।

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ড হলো ব্যাংকিং কার্যক্রমের শরিয়াহ ভিত্তিক অভিভাবক। এটি শুধু একটি ফতোয়া প্রদানকারী কমিটি নয়, বরং একটি সুসংগঠিত তত্ত্বাবধায়ক কাঠামো যা নিশ্চিত করে যে ব্যাংকের প্রতিটি লেনদেন, বিনিয়োগ এবং কার্যক্রম ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শরিয়াহ বোর্ডের কার্যক্রম দিন দিন আরও সুসংহত, স্বচ্ছ ও আধুনিক হচ্ছে, যা ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রতি মানুষের আস্থা আরও বাড়িয়ে তুলছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url