সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করার নিয়ম
সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করার নিয়ম
আমরা আপনাদের জন্য নিচে “সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করার নিয়ম” বিষয়ে একটি বাংলা আর্টিকেল দেওয়া হলো, যাতে শিরোনাম, উপশিরোনাম, বিশ্লেষণ, পরামর্শ ও উপসংহারসহ সবকিছু সুন্দরভাবে সাজানো আছে।
সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করতে চাইলে প্রথমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি নিতে হয়। নিজের নামে নয়, পরিবারের কারও নামে ব্যবসা চালানো যেতে পারে আইন মেনে। সরকারি স্বার্থবিরোধী বা অফিসের কাজে প্রভাব ফেলে এমন কোনো ব্যবসা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
পোস্ট সূচিপত্রঃ সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করার নিয়ম
সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করার বৈধতা
সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করা আইনি দিক
কোন ধরনের ব্যবসা সরকারি চাকরিজীবী করতে পারেন
সরকারি চাকরির পাশাপাশি বৈধ আয়ের বিকল্প উপায়
সরকারি চাকরির পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী ও পরামর্শমূলক কাজ
সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসার বিষয়ে সাধারণ প্রশ্নোত্তর
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১০টি বাস্তব পরামর্শ
আমাদের মতামতঃ সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করার নিয়ম
সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করার নিয়ম |
বাংলাদেশে সরকারি চাকরি দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীল আয়ের উৎস ও সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তবে, বর্তমান যুগে শুধুমাত্র বেতনের ওপর নির্ভর করা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক সরকারি কর্মচারীই তাই চান, চাকরির পাশাপাশি কোনো ছোটখাটো ব্যবসা বা অতিরিক্ত আয়ের উৎস তৈরি করতে।
আরো পড়ুনঃ
কিন্তু প্রশ্ন হলোঃ সরকারি চাকরি করার পাশাপাশি ব্যবসা করা কি আইনত বৈধ? এর নিয়ম, সীমাবদ্ধতা ও ব্যতিক্রমগুলো কী? আজকের এই বিস্তারিত আর্টিকেলে আমরা জানব সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করার পূর্ণাঙ্গ নিয়ম, আইন, অনুমতি প্রক্রিয়া এবং বাস্তবিক দিক।
সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করার বৈধতা
বাংলাদেশে সরকারি চাকরির নিয়ম নির্ধারণ করা হয়েছে “Government Servants (Conduct) Rules, 1979” অনুযায়ী। এই নিয়ম অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে সরকারী অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করা আইনি দিক
Rule 15(1): কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারী অনুমতি ছাড়া কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, অংশগ্রহণ বা পরোক্ষভাবে লাভের অংশীদার হতে পারবেন না। (Rule 15, Conduct Rules 1979) অর্থাৎ, সরকারি চাকরিজীবী সরাসরি ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন না, তবে কিছু নির্দিষ্ট ব্যতিক্রম ও অনুমোদিত ক্ষেত্র রয়েছে।
কোন ধরনের ব্যবসা সরকারি চাকরিজীবী করতে পারেন
যদিও সরাসরি ব্যবসা পরিচালনা নিষিদ্ধ, কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে সরকার অনুমতি দিলে বা নীতিগতভাবে অনুমোদন থাকলে ব্যবসায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব। নিচে সেগুলো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:
১. পারিবারিক ব্যবসা (Family Business): যদি কোনো সরকারি কর্মচারীর পরিবারে পুরনো ব্যবসা থাকে, যেমন – দোকান, খামার, অথবা ছোট প্রতিষ্ঠান, তবে তিনি শুধু বিনিয়োগকারী বা উত্তরাধিকারী হিসেবে থাকতে পারেন। তবে, দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনায় অংশগ্রহণ করা যাবে না।
২. বিনিয়োগমূলক ব্যবসা: সরকারি কর্মচারী চাইলে নিম্নোক্ত খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন। ব্যাংকের ডিপোজিট স্কিম। শেয়ার মার্কেট (স্টক এক্সচেঞ্জে অনুমোদিত কোম্পানি)। মিউচুয়াল ফান্ড বা বন্ড। রিয়েল এস্টেট (ভাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে জমি বা ফ্ল্যাট কেনা)। তবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (ACC) ও কর কর্তৃপক্ষকে জানানো বাধ্যতামূলক।
৩. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রমঃ যদি কোনো সরকারি কর্মচারী নিজের জ্ঞান বা দক্ষতা ব্যবহার করে টিউশন, প্রশিক্ষণ, অনলাইন কোর্স, লেখালেখি বা গবেষণা করেন, তবে সেটি সাধারণত নিষিদ্ধ নয়, তবে প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া ভালো।
৪. ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা কৃষি খামারঃ সরকারি কর্মচারীরা অনেক সময় কৃষি, পশুপালন, বা মৎস্য চাষে জড়িত থাকেন। এই কাজ যদি পরিবার বা আত্মীয়স্বজন পরিচালনা করে এবং কর্মচারী কেবল বিনিয়োগকারী হিসেবে থাকেন, তবে তা সাধারণত অনুমোদিত।
সরকারি চাকরির পাশাপাশি কোন ব্যবসা করা নিষিদ্ধ
নিচের যেকোনো ব্যবসায় সরকারি চাকরিজীবীর সরাসরি অংশগ্রহণ আইনত দণ্ডনীয়ঃ নিজের নামে বা অন্যের নামে দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালানো। ঠিকাদারি বা সরবরাহ ব্যবসা করা। সরকারি টেন্ডারে অংশ নেওয়া। অন্যের নামে ব্যবসা পরিচালনা করে গোপনে লাভ গ্রহণ করা। সরকারি পদ ব্যবহার করে ব্যবসায়িক সুবিধা নেওয়া। এসব কার্যকলাপ প্রমাণিত হলে শৃঙ্খলাভঙ্গ মামলা, চাকরিচ্যুতি বা জেল-জরিমানার শাস্তি হতে পারে।
সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করার অনুমতি নেওয়ার নিয়ম
যদি কোনো সরকারি কর্মচারী বৈধভাবে কোনো বিনিয়োগ বা ব্যবসায় অংশ নিতে চান, তবে তাঁকে নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে। ১: লিখিত আবেদনঃ নিজের কর্মস্থলের কর্তৃপক্ষের (Head of Office) কাছে লিখিতভাবে আবেদন করতে হবে, যেখানে উল্লেখ থাকবে, ব্যবসার ধরণ, সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ, কাজের ধরন, কেন এতে অংশ নিতে চান।
২: উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনঃ উক্ত আবেদনটি বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় যদি দেখে যে ব্যবসাটি স্বার্থের সংঘাত তৈরি করছে না, তাহলে শর্তসাপেক্ষ অনুমতি দিতে পারে।
৩: বার্ষিক সম্পদ বিবরণীতে তথ্য প্রদানঃ যে ব্যবসা বা বিনিয়োগে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা প্রতি বছর সম্পদ বিবরণীতে (Annual Property Return) উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক।
সরকারি চাকরির পাশাপাশি বৈধ আয়ের বিকল্প উপায়
ব্যবসা না করেও সরকারি কর্মচারীরা বিভিন্নভাবে বৈধভাবে অতিরিক্ত আয় করতে পারেন। যেমনঃ বই লেখা বা গবেষণামূলক কাজ। অনলাইন শিক্ষা বা কোর্স পরিচালনা (পরোক্ষভাবে)। ইউটিউব বা ব্লগিং (শিক্ষামূলক কন্টেন্ট)। রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ। কৃষি বা খামারে পারিবারিক অংশীদারিত্ব।
সরকারি চাকরির পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী ও পরামর্শমূলক কাজ
এসব ক্ষেত্রে সাধারণত সরকার আপত্তি করে না, যদি তা দায়িত্ব পালনে বাধা না দেয়। আইন ভঙ্গের পরিণতিঃ সরকারি চাকরিজীবী যদি অনুমতি ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সম্ভাব্য শাস্তি হতে পারেঃ অপরাধ, সম্ভাব্য শাস্তি, অনুমতি ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা। চাকরিচ্যুতি বা বাধ্যতামূলক অবসর। সরকারি টেন্ডারে অংশগ্রহণ। চাকরি স্থগিত, তদন্ত ও শাস্তি। অন্যের নামে ব্যবসা করা। বিভাগীয় মামলা, ফৌজদারি ব্যবস্থা। সরকারি সম্পদ ব্যবহার করে লাভ করা। দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা।
বাস্তব উদাহরণঃ উদাহরণ ১ঃ একজন উপজেলা প্রকৌশলী পরিবারিক খামারে বিনিয়োগ করেছিলেন কিন্তু দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনায় জড়িত ছিলেন না। প্রশাসন অনুমতি দেওয়ায় এটি বৈধ হিসেবে গণ্য হয়েছিল। উদাহরণ ২ঃ একজন সরকারি শিক্ষক ইউটিউবে শিক্ষা বিষয়ক ভিডিও বানিয়ে আয় করছিলেন। তিনি বিদ্যালয়ের অনুমতি নিয়েছিলেন, তাই কোনো সমস্যা হয়নি। উদাহরণ ৩ঃ একজন কর্মকর্তা নিজের স্ত্রীর নামে ব্যবসা চালাতেন এবং তাতে পরোক্ষভাবে লাভবান হন। তদন্তে প্রমাণিত হলে চাকরি হারান।
সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসার বিষয়ে সাধারণ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ সরকারি চাকরিজীবী কি অনলাইন ব্যবসা করতে পারেন?
উত্তরঃ সরাসরি নয়। তবে অনুমতি নিয়ে বা পরিবারের নামে পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করা যেতে পারে।
প্রশ্নঃ ইউটিউব থেকে আয় করা কি অপরাধ?
উত্তরঃ না, যদি কন্টেন্ট শিক্ষামূলক হয় এবং চাকরির দায়িত্বে ব্যাঘাত না ঘটে।
আরো পড়ুনঃ
প্রশ্নঃ স্ত্রীর নামে ব্যবসা করলে কি সমস্যা হবে?
উত্তরঃ যদি কর্মচারী সরাসরি তাতে জড়িত থাকেন বা লাভভাগ পান, তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
প্রশ্নঃ কৃষি বা গবাদি পশুর খামার করা যাবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, পারিবারিকভাবে করলে সাধারণত অনুমোদিত।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১০টি বাস্তব পরামর্শ
সবসময় লিখিত অনুমতি নিন। ব্যবসা নয়, বিনিয়োগে গুরুত্ব দিন। পরিবারিক বা কৃষিভিত্তিক কাজেই সীমাবদ্ধ থাকুন। সরকারি পদ ব্যবহার করে কোনো সুবিধা নেবেন না। কর ও সম্পদ বিবরণী সঠিকভাবে দিন।

চাকরির দায়িত্বে যেন কোনো প্রভাব না পড়ে। আয় ও ব্যয়ের উৎস পরিষ্কার রাখুন। অফিস সময়ে কোনো ব্যবসায়িক যোগাযোগ এড়িয়ে চলুন। অনলাইনে আয় করলে অফিসকে জানান।নৈতিকতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখুন।
আমাদের মতামতঃ সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করার নিয়ম
সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করার বিষয়টি অনেকটাই আইনি সীমার মধ্যে নির্ভরশীল। বাংলাদেশের “Government Servants Conduct Rules” অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারী অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যবসা বা বাণিজ্যে সরাসরি অংশ নিতে পারবেন না। তবে, বিনিয়োগ, পারিবারিক ব্যবসা বা শিক্ষামূলক কাজের ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে।
সুতরাং, আপনি যদি সরকারি চাকরির পাশাপাশি আয়ের আরেকটি উৎস তৈরি করতে চান, তাহলে সর্বপ্রথম লিখিত অনুমতি নিন, আইন জানুন, এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখুন। তাহলেই চাকরি ও ব্যবসা—দুটোই সমানভাবে সাফল্যের পথে এগিয়ে যাবে।


অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url