পোকামাকড় দূর করার ১০টি ঘরোয়া ঔষধ

 পোকামাকড় দূর করার ১০ টি ঘরোয়া ঔষধ

পোস্ট সূচিপত্রঃ পোকামাকড় দূর করার ১০টি ঘরোয়া ঔষধ

পোকামাকড় দূর করার ১০টি ঘরোয়া ঔষধ 

 ঘরের নিরাপত্তা এখন আপনার হাতের মুঠোয়। আমাদের ঘরে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় দেখা যায়, তেলাপোকা, মাছি, মশা, পিঁপড়া, ঘুনপোকা, ইঁদুরের মতো বিরক্তিকর প্রাণী। এরা শুধু বিরক্তির কারণ নয়, বরং নানা রোগ ছড়ানোর একটি প্রধান উৎসও। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির স্প্রে বা কীটনাশক পাওয়া গেলেও এগুলোতে রাসায়নিকের ব্যবহার বেশি থাকে, যা আমাদের ফুসফুস, ত্বক, এমনকি খাবারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

আরো পড়ুনঃ

তাই এখন অনেকেই ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করে পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের দিকে ঝুঁকছেন। ঘরোয়া পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে—এগুলো নিরাপদ, সস্তা এবং পরিবেশবান্ধব। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো পোকামাকড় দূর করার ১০টি ঘরোয়া সবচেয়ে কার্যকর ঔষধ, তাদের ব্যবহারবিধি, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, সতর্কতা এবং দীর্ঘমেয়াদী সমাধান।

 পোকামাকড় দূর করার জন্য তেজপাতা

তেজপাতা ঘরের অন্যতম জনপ্রিয় ঘরোয়া প্রতিকার। এর বিশেষ গন্ধ তেলাপোকা ও পিঁপড়া একেবারেই সহ্য করতে পারে না। যেভাবে কাজ করেঃ তেজপাতার গন্ধে থাকা ইউজেনল (Eugenol) উপাদান পোকামাকড়কে দূরে রাখে। ব্যবহারবিধিঃ কিছু শুকনা তেজপাতা কিচেনের ড্রয়ার, আলমারি, চাল-ডাল রাখার পাত্রে রেখে দিন। চাইলে তেজপাতা গুঁড়া করে কর্নার ও ড্রেনে ছিটিয়ে রাখতে পারেন। কার্যকর পোকা। তেলাপোকা, পিঁপড়া, মথ।

পোকামাকড় দূর করার জন্য লেবু ও লবঙ্গ

লেবুর তীব্র সাইট্রাস গন্ধ এবং লবঙ্গের তীক্ষ্ণ সুগন্ধ পোকামাকড় তাড়াতে খুবই কার্যকর। ব্যবহারবিধি, একটি লেবু কেটে নিন।  প্রতিটি টুকরোয় ৩-৪টি লবঙ্গ গেঁথে রান্নাঘরের কোনায় বা খাবারের টেবিলে রাখুন। চাইলে লেবুর রস পানিতে মিশিয়ে মোপ করার পানিতে ব্যবহার করতে পারেন। কার্যকর পোকা, মশা, মাছি, তেলাপোকা।

 পোকামাকড় দূর করার জন্য নিমপাতা

নিমের পোকামাকড় নাশক ক্ষমতা অনেক পুরনো এবং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। ব্যবহারবিধি, নিমপাতা পানিতে ফুটিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে ঘরের কোনায় ছিটিয়ে দিন। আলমারি ও কাপড় রাখার জায়গায় শুকনা নিমপাতা রাখলে ঘুনপোকা আর আসে না। কার্যকর পোকা, মশা, মাছি, ছারপোকা, ঘুনপোকা।

পোকামাকড় দূর করার জন্য বেকিং সোডা ও চিনি

এটি বিশেষত তেলাপোকা দূর করতে খুব কার্যকর।  ভাবে কাজ করে তেলাপোকা মিষ্টি খাবার পছন্দ করে। বেকিং সোডা তাদের শরীরে গিয়ে গ্যাস তৈরি করে এবং দ্রুত তাদের নিধন করে। ব্যবহারবিধিঃ বেকিং সোডা ও চিনি ১:১ অনুপাতে মিশিয়ে নিন। রান্নাঘরের ড্রেন, সিঙ্কের নিচে, চুলোর পাশে ছিটিয়ে রাখুন। কার্যকর পোকা, তেলাপোকা।

 পোকামাকড় দূর করার জন্য ভিনেগার (সাদা সিরকা)

ভিনেগার একটি অ্যান্টিসেপ্টিক, জীবাণুনাশক এবং পোকামাকড় প্রতিরোধক দ্রব্য। ব্যবহারবিধি, স্প্রে বোতলে ভিনেগার ও পানি সমান পরিমাণে মিশিয়ে নিন। 

পিঁপড়া বা মাছি যেদিকে বেশি আসে সেখানে স্প্রে করুন। মেঝে মোছার পানিতে ভিনেগার মিশালে পোকামাকড় কমে যায়। কার্যকর পোকা, পিঁপড়া, মাছি, মশা।

 পোকামাকড় দূর করার জন্য লবণ

লবণ অনেক ক্ষেত্রে খাবার সংরক্ষণে ব্যবহৃত হলেও পোকামাকড় দূর করার ক্ষেত্রেও এটি অত্যন্ত কার্যকর। ব্যবহারবিধি, পিঁপড়ার লাইন বরাবর লবণ ছিটিয়ে দিন। আলমারিতে যেখান থেকে ঘুনপোকা আসে সেখানে লবণের স্তর তৈরি করে রাখলে উপকার পাবেন। কার্যকর পোকা, পিঁপড়া, ঘুনপোকা।

পোকামাকড় দূর করার জন্য রসুন

রসুনের তীব্র গন্ধ অনেক ধরনের পোকামাকড়কে দূরে রাখে। ব্যবহারবিধি, কিছু রসুন কোয়া পিষে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং সেই পানি স্প্রে করুন। চাইলে শুকনো রসুন কোয়া ঘরের কোনায় রেখে দিতে পারেন। কার্যকর পোকা, মশা, মাছি, পিঁপড়া।

 পোকামাকড় দূর করার জন্য পুদিনা পাতা বা পেপারমিন্ট অয়েল

পুদিনার প্রাকৃতিক উপাদান মেন্থল পোকামাকড় প্রতিরোধে অসাধারণ। ব্যবহারবিধি পেপারমিন্ট অয়েল কয়েক ফোঁটা পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন। আলমারি বা বিছানার নিচে পুদিনা পাতা রেখে দিন। কার্যকর পোকা, তেলাপোকা, মশা, মাকড়সা, পিঁপড়া।

 পোকামাকড় দূর করার জন্য কর্পূর

কর্পূরের গন্ধ মশা ও তেলাপোকা দ্রুত তাড়াতে পারে। ব্যবহারবিধি, কর্পূর একটি ছোট বাটিতে রেখে জ্বালিয়ে দিন এবং ঘর বন্ধ করে রাখুন ১০ মিনিট। কর্পূর গুঁড়া আলমারিতে ছিটিয়ে দিতে পারেন। কার্যকর পোকা, মশা, তেলাপোকা, ছারপোকা।

পোকামাকড় দূর করার জন্য ডিশওয়াশ লিকুইড ও পানি

এটি একটি সহজ কিন্তু শক্তিশালী ঘরোয়া প্রতিকার, বিশেষত ছারপোকা ও মাছি মারতে। ব্যবহারবিধি, একটি স্প্রে বোতলে পানি ও ১ চামচ ডিশওয়াশ লিকুইড মিশিয়ে নিন। পোকামাকড় দেখলেই সরাসরি স্প্রে করুন। কার্যকর পোকা, ছারপোকা, মাছি, তেলাপোকা। পোকামাকড় দূর করার অতিরিক্ত ৫টি ঘরোয়া টিপস। 

আরো পড়ুনঃ

১. ঘর পরিষ্কার ও শুকনা রাখাঃ পোকামাকড় আর্দ্রতা পছন্দ করে। তাই রান্নাঘর, বাথরুম, সিঙ্ক ইত্যাদি শুকনা রাখুন। ২. খাবার খোলা না রাখাঃ তেলাপোকা, পিঁপড়া ও মাছি খাবারের গন্ধে দ্রুত আসে। ৩. ড্রেন ও সিঙ্ক পরিষ্কার রাখাঃ সাবান ময়লা জমে পোকামাকড় জন্মায়। ৪. নিয়মিত আবর্জনা ফেলাঃ আবর্জনার গন্ধ পোকামাকড় আকর্ষণ করে। ৫. ঘরমোছা ও বেডশিট পরিবর্তনঃ ছারপোকা দূর করতে সপ্তাহে অন্তত ২ বার বিছানাপত্র বদলাতে হবে।

পোকামাকড় দূর করার ঘরোয়া উপায় কেন কাজ করে? (বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা)

অনেকেই প্রশ্ন করেন, ঘরোয়া সমাধান কি সত্যিই কার্যকর? উত্তর, হ্যাঁ। কারণঃ তেজপাতা, লবঙ্গ, পুদিনার মতো ভেষজে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-পেস্ট কম্পাউন্ড থাকে। রসুন, লেবু, ভিনেগারের গন্ধ পোকামাকড়ের সেন্সরি সিস্টেম বিঘ্নিত করে। বেকিং সোডা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তেলাপোকাকে দ্রুত নিধন করে। কর্পূরের অ্যান্টিসেপটিক ধোঁয়া পোকামাকড়ের নিউরাল সিস্টেম পক্ষাঘাত করে। ফলে এগুলো রাসায়নিক স্প্রে ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে পোকা কমিয়ে দেয়।

আমাদের শেষ কথাঃ পোকামাকড় দূর করার ১০টি ঘরোয়া ঔষধ

পোকামাকড় দূর করার জন্য সবসময়ই শক্তিশালী রাসায়নিক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। প্রকৃতিতেই এমন কিছু উপাদান আছে, তেজপাতা, লবঙ্গ, ভিনেগার, নিম, রসুন, পুদিনা, যেগুলো সহজলভ্য, সস্তা এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ।

 নিয়মিত কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে চললে আপনার ঘর থাকবে পরিষ্কার, রোগ-জীবাণুমুক্ত এবং পোকামাকড়হীন। পোকামাকড় নিয়ে দুশ্চিন্তা নয়, আজ থেকেই ঘরোয়া উপায় ব্যবহার শুরু করুন।