উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া উপায়
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া উপায়
আপনাদের জন্য নিচে “উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া উপায়” নিয়ে একটি বিস্তারিত বাংলা আর্টিকেল দেওয়া হলোঃ ওয়েবসাইট বা ব্লগে প্রকাশের উপযোগীভাবে সাজানো। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে প্রতিদিন লবণ কম খাওয়া ও পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি।
নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, হাঁটা ও ওজন নিয়ন্ত্রণ রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। ফল, শাকসবজি, রসুন ও টকদই খাদ্যতালিকায় রাখলে উপকার পাওয়া যায়। মানসিক চাপ কমানো, পর্যাপ্ত ঘুম ও ধূমপান এড়ানো উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া উপায়
বর্তমান ব্যস্ত জীবনযাপন, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার (Hypertension) এখন একটি সাধারণ কিন্তু ভয়ংকর স্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে লাখো মানুষ এই সমস্যায় ভুগছেন, অনেকেই জানেন না যে তারা উচ্চ রক্তচাপের রোগী।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি সমস্যা ও চোখের ক্ষতির মতো মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে সুখবর হলো, ওষুধের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায় অনুসরণ করলে রক্তচাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এই আর্টিকেলে আমরা জানবোঃ উচ্চ রক্তচাপ কী ও কেন হয়, এর লক্ষণ ও ঝুঁকি, এবং ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে নিরাপদে রক্তচাপ কমানো যায়
উচ্চ রক্তচাপ কী, উচ্চ রক্তচাপের কারণ
রক্ত যখন ধমনীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন ধমনীর দেয়ালে যে চাপ পড়ে তাকে রক্তচাপ বলা হয়। সাধারণত এটি দুইটি সংখ্যায় মাপা হয়ঃ সিস্টোলিক চাপ (উপরের সংখ্যা): হৃদপিণ্ড সংকুচিত হলে চাপডায়াস্টোলিক চাপ (নিচের সংখ্যা): হৃদপিণ্ড বিশ্রামে থাকলে চাপ। স্বাভাবিক রক্তচাপ: 120/80 mmHg। উচ্চ রক্তচাপ: 140/90 mmHg বা তার বেশি।
উচ্চ রক্তচাপের পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে, যেমনঃ অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, স্থূলতা বা ওজন বেশি হওয়া, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা, ধূমপান ও তামাক সেবন, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, বংশগত কারণ, ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগ।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ
অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপে তেমন কোনো লক্ষণই থাকে না, তাই একে বলা হয় “নীরব ঘাতক”। তবে কিছু ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারেঃ মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট, চোখে ঝাপসা দেখা, ক্লান্তি। তাই নিয়মিত রক্তচাপ মাপা খুব জরুরি।
ঘরোয়া উপায়ে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর পদ্ধতি
এখন আসুন জেনে নিই এমন কিছু প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়, যেগুলো নিয়মিত অনুসরণ করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
১. লবণ কম খাওয়া
উচ্চ রক্তচাপের প্রধান শত্রু হলো অতিরিক্ত লবণ। লবণে থাকা সোডিয়াম শরীরে পানি ধরে রাখে, ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়।
করণীয়ঃ দিনে ৫ গ্রামের কম লবণ খাওয়া, কাঁচা লবণ, আচার, চিপস, ফাস্টফুড এড়িয়ে চলা। রান্নায় কম লবণ ব্যবহার।
২. পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার
পটাশিয়াম শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম বের করে দিতে সাহায্য করে, ফলে রক্তচাপ কমে। পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবারঃ কলা, কমলা, নারকেল পানি, পালং শাক, টমেটো, আলু। প্রতিদিন এসব খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন।
৩. পর্যাপ্ত পানি পান
শরীরে পানির ঘাটতি হলে রক্ত ঘন হয়ে যায়, যা রক্তচাপ বাড়াতে পারে। প্রতিদিন অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন।
৪. নিয়মিত ব্যায়াম
শারীরিক পরিশ্রম হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। উপকারী ব্যায়ামঃ প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা। হালকা দৌড়, সাইক্লিং, সাঁতার, যোগব্যায়াম। সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত ওজন রক্তচাপ বৃদ্ধির বড় কারণ। করণীয়ঃ স্বাস্থ্যকর খাবার, ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ। মাত্র ৫–১০% ওজন কমলেও রক্তচাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে পারে।
৬. মানসিক চাপ কমানো
দুশ্চিন্তা ও স্ট্রেস রক্তচাপ বাড়ায়। চাপ কমাতেঃ গভীর শ্বাস নেওয়া, ধ্যান, নামাজ/প্রার্থনা, প্রিয় কাজ করা, পর্যাপ্ত ঘুম (৭–৮ ঘণ্টা)।
৭. রসুনের ব্যবহার
রসুন প্রাকৃতিকভাবে রক্তনালী প্রসারিত করে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ব্যবহারঃ প্রতিদিন সকালে ১–২ কোয়া কাঁচা রসুন অথবা রান্নায় বেশি ব্যবহার।
৮. লেবু ও লেবুর পানি
লেবুতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তনালী সুস্থ রাখে। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে সকালে পান করতে পারেন।
৯. গ্রিন টি ও হারবাল চা
গ্রিন টি হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। দিনে ১–২ কাপ গ্রিন টি পান করা যেতে পারে।
১০. কম চর্বিযুক্ত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
ক্যালসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। কম ফ্যাটযুক্ত দুধ, দই খাদ্যতালিকায় রাখুন।
১১. ধূমপান ও তামাক পরিহার
ধূমপান রক্তনালী সংকুচিত করে রক্তচাপ বাড়ায়। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ধূমপান সম্পূর্ণ বন্ধ করা জরুরি।
১২. ফাস্টফুড ও ভাজাপোড়া এড়ানো
এই খাবারগুলোতে লবণ ও ক্ষতিকর চর্বি বেশি থাকে। ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিন।
১৩. DASH ডায়েট অনুসরণ
DASH (Dietary Approaches to Stop Hypertension) ডায়েট বিশেষভাবে উচ্চ রক্তচাপের জন্য তৈরি। এতে থাকেঃ ফল ও সবজি, গোটা শস্য, কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন, কম লবণ ও চিনি।
১৪. নিয়মিত ঘুম
ঘুমের অভাব হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে রক্তচাপ বাড়াতে পারে। প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম নিশ্চিত করুন।
১৫. নিয়মিত রক্তচাপ মাপা
নিজের অবস্থা জানার জন্য ঘরে BP মেশিন দিয়ে সপ্তাহে কয়েকদিন রক্তচাপ মাপুন। ফল লিখে রাখুন এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের সঙ্গে শেয়ার করুন।
গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা
ঘরোয়া উপায় ওষুধের বিকল্প নয়, বরং সহায়ক। ডাক্তার যে ওষুধ দিয়েছেন, নিজে নিজে বন্ধ করবেন না।রক্তচাপ খুব বেশি হলে বা নিয়ন্ত্রণে না এলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। গর্ভবতী নারী, কিডনি বা হৃদরোগীরা নতুন কিছু শুরু করার আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
কখন ঘরোয়া উপায়ে কাজ নাও করতে পারে
যদি, BP বারবার 160/100 এর বেশি থাকে। মাথা ঘোরা, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট হয়। হঠাৎ দৃষ্টি ঝাপসা বা কথা জড়িয়ে যায়। দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে যান।
আমাদের শেষ কথাঃ উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া উপায়
উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব কিন্তু মারাত্মক রোগ। তবে সচেতন জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ঘরোয়া উপায়ে এটিকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাস, কম লবণ খাওয়া, বেশি সবজি-ফল খাওয়া, হাঁটা, মানসিক চাপ কমান,এইসবই আপনার হৃদয়কে রাখবে সুস্থ ও আপনাকে দেবে দীর্ঘ ও সুন্দর জীবন। মনে রাখবেন: “প্রতিরোধই সর্বোত্তম চিকিৎসা।”



অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url