ডিজিটাল মার্কেটিং কি, ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার ও কি কি
ডিজিটাল মার্কেটিং কি, ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার ও কি কি
আপনি কি ডিজিটাল মার্কেটিং সম্বন্ধে জানতে চান,ডিজিটাল মার্কেটিং কি, ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার ও কি কি, এত গুরুত্বপূর্ণ কেন । এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের এই আর্টিকেলে পাবেন।
তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই কনটেন্টটি মনোযোগ দিয়ে পাঠ করবেন তাহলে অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে। চলুন দেরি না করে আমরা শুরু করি।
পেজ সূচিপত্রঃ ডিজিটাল মার্কেটিং কি, ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার ও কি কিডিজিটাল মার্কেটিং কি, ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার ও কি কিডিজিটাল মার্কেটিং এত গুরুত্বপূর্ণ কেনডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রধান উপাদানসমূহডিজিটাল মার্কেটিং এর উপকারিতাডিজিটাল মার্কেটিং এ ক্যারিয়ার গঠন করবেন কিভাবেডিজিটাল মার্কেটিং সম্বন্ধে জানা-অজানা কিছু তথ্যডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে শিখবেনডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে শিখবেনবাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদাবাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিং-এর ভবিষ্যৎডিজিটাল মার্কেটিং এর চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়লেখকের মন্তব্য
ডিজিটাল মার্কেটিং কি, ডিজিটাল মার্কেটিং কত ও প্রকার ও কি কি
বর্তমান যুগে প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের ধারা বদলে গেছে। আগের দিনে যেখানে প্রচারণা মানেই ছিল টিভি, রেডিও কিংবা পত্রিকা বিজ্ঞাপন, সেখানে আজকের দিনে অনলাইনই হয়ে উঠেছে ব্যবসার মূল প্ল্যাটফর্ম। এই অনলাইনের জগতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত বিষয় হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং মানে কি শুধু ফেসবুক বা ইউটিউব বিজ্ঞাপন? এর বাইরেও রয়েছে অনেক জানা-অজানা দিক, যেগুলো না জানলে পূর্ণ সুবিধা পাওয়া কঠিন।
আরো পড়ুনঃ
ডিজিটাল মার্কেটিং মূলত বিভিন্ন ধরনের অনলাইন মাধ্যমে পণ্য বা সেবা প্রচার এবং বিক্রির একটি কৌশল। এটি কয়েক প্রকারে বিভক্ত, প্রতিটির লক্ষ্য, মাধ্যম ও কৌশল আলাদা। নিচে ডিজিটাল মার্কেটিং-এর প্রধান ১৪ প্রকার বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলোঃ
১. সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO)ঃ SEO হল একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে (যেমন Google) ভালো র্যাংকে আনা হয়। এতে কিওয়ার্ড রিসার্চ, অন-পেজ SEO, অফ-পেজ SEO এবং টেকনিক্যাল SEO অন্তর্ভুক্ত।
উদাহরণ: আপনি যদি "সেরা চা পাতা" লিখে Google-এ সার্চ করেন, প্রথম পেজে যে ওয়েবসাইটগুলো আসে, তারা SEO ভালো করেছে।
২. সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM)ঃ এটি হল পেইড সার্চ বিজ্ঞাপন যেখানে Google Ads-এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিওয়ার্ডে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। এতে খরচ হয় প্রতি ক্লিকের ভিত্তিতে (PPC – Pay Per Click)। উদাহরণ: Google-এ "ট্রাভেল প্যাকেজ" লিখে সার্চ করলে উপরের দিকে স্পনসরড বিজ্ঞাপন দেখা যায়।
৩. কনটেন্ট মার্কেটিংঃ এটি হল মানসম্মত এবং দরকারি কনটেন্ট তৈরি করে তা অনলাইনে প্রচার করা। কনটেন্ট হতে পারে ব্লগ, ভিডিও, ইনফোগ্রাফিক, ইবুক, গাইড ইত্যাদি। উদাহরণ: একটি হেলথ ব্লগে "ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ১০টি উপায়" – এই ধরনের কনটেন্ট।
৪. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (SMM)ঃ Facebook, Instagram, Twitter, LinkedIn, Pinterest ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়াতে পণ্য বা সেবা প্রচার করার প্রক্রিয়া। এটি অর্গানিক এবং পেইড দুইভাবেই হতে পারে।উদাহরণ: Facebook-এ Boost করে একটি কোম্পানির অফার প্রচার করা।
৫. ইমেইল মার্কেটিংঃ সরাসরি ইমেইলের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে পণ্য, অফার, নিউজলেটার বা প্রমোশন পাঠানো হয়। এটি অনেক সময় অটোমেশন টুল ব্যবহার করেও করা হয়। উদাহরণ: একটি ই-কমার্স সাইট থেকে "আজকের ডিসকাউন্ট অফার" ইমেইল পাওয়া।
৬. এফিলিয়েট মার্কেটিং ঃ কোনো কোম্পানির পণ্য বিক্রি করে কমিশন অর্জনের পদ্ধতি। ব্লগ, ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়া বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রেফার করা হয়। উদাহরণ: ইউটিউবার পণ্যের রিভিউ দিয়ে লিংক দেয়, আপনি কিনলে সে কমিশন পায়।
৭. ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংঃ সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা প্রচার। তারা তাদের ফলোয়ারদের কাছে পণ্যের পরামর্শ দেন। উদাহরণ: Instagram-এ কোনো বিউটি ব্লগার কোনো স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড প্রমোট করছেন।
৯. মোবাইল মার্কেটিংঃ মোবাইল অ্যাপ, SMS, মোবাইল অ্যাড এবং পুশ নোটিফিকেশন এর মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো। উদাহরণ: কোনো অ্যাপে ডিসকাউন্টের পুশ নোটিফিকেশন পাওয়া।
১০. ভিডিও মার্কেটিংঃ ভিডিও কনটেন্ট ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা প্রচার। YouTube, Facebook, TikTok ও Instagram Reels জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম। উদাহরণ: ইউটিউবে একটি ফোনের আনবক্সিং ভিডিও।
১১. ডিসপ্লে অ্যাডভারটাইজিংঃ ওয়েবসাইট বা অ্যাপে ব্যানার, ইমেজ, জিআইএফ বা ভিডিও আকারে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। সাধারণত Google Display Network ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: আপনি একটি ওয়েবসাইটে ঢুকলে পাশে কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখা।
১২. রিমার্কেটিং / রিটার্গেটিংঃ যারা আগেই আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করেছে, তাদের পুনরায় বিজ্ঞাপন দেখানো হয় যাতে তারা ফিরে আসে এবং ক্রয় করে। উদাহরণ: আপনি একবার কোনো জুতা দেখেছেন, পরে Facebook বা Google-এ তার বিজ্ঞাপন দেখেন।
১৩. ই-কমার্স মার্কেটিংঃ ই-কমার্স সাইটের পণ্য বিক্রি বাড়ানোর জন্য বিশেষ কৌশল ব্যবহার করা হয়। SEO, SEM, Email, SMM সবই এখানে প্রয়োগ হয়। উদাহরণ: Daraz বা Amazon-এ ফ্ল্যাশ সেল প্রমোশন।
১৪. লোকাল ডিজিটাল মার্কেটিংঃ লোকাল বা নির্দিষ্ট এলাকার মানুষকে টার্গেট করে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার করা হয়। Google My Business, লোকেশন ভিত্তিক বিজ্ঞাপন ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ: আপনি ঢাকায় থাকলে Google-এ "চশমার দোকান" লিখলে আশেপাশের দোকানগুলো দেখাবে।
ডিজিটাল মার্কেটিং-এর এই প্রতিটি শাখা আলাদা উদ্দেশ্য, কৌশল এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে। একটি সফল ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশল তৈরি করতে হলে এই প্রতিটি পদ্ধতির সঠিক ব্যবহার জানা জরুরি।
ডিজিটাল মার্কেটিং এত গুরুত্বপূর্ণ কেন
ডিজিটাল মার্কেটিং হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল চ্যানেল ব্যবহার করে পণ্য বা সেবার প্রচার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেইল, সার্চ ইঞ্জিন, অ্যাপ, এবং আরও অনেক কিছু।
আরো পড়ুনঃ
১. বিপুল সংখ্যক মানুষ অনলাইনে সময় কাটায়ঃ আজকের দিনে মানুষ মোবাইল, কম্পিউটার বা ট্যাবলেটের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে হাজার হাজার কোটি মানুষ সক্রিয়। এই প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে নির্দিষ্ট টার্গেটেড গ্রাহকের কাছে সহজেই পৌঁছানো সম্ভব।
২. কম খরচে কার্যকর প্রচারঃ টিভি, পত্রিকা বা বিলবোর্ডের মতো প্রচলিত মার্কেটিং মাধ্যমের তুলনায় ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক সস্তা। একইসাথে এটি ROI (Return on Investment) বা বিনিয়োগের লাভ বেশি দেয়।
৩. টার্গেট অডিয়েন্সকে নির্দিষ্টভাবে পৌঁছানো যায়ঃ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনি নির্দিষ্ট বয়স, এলাকা, লিঙ্গ, পছন্দ-অপছন্দ, আগ্রহ ইত্যাদি অনুযায়ী গ্রাহক নির্বাচন করে বিজ্ঞাপন দেখাতে পারেন। এতে ফলাফল অনেক বেশি কার্যকর হয়।
৪. রিয়েল টাইম রেজাল্ট পাওয়া যায়ঃ আপনার বিজ্ঞাপন, ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট কতজন দেখেছে, কতজন ক্লিক করেছে, কতজন পণ্য কিনেছে – সব তথ্য আপনি তাৎক্ষণিকভাবে দেখতে পারবেন।
৫. বিশ্বব্যাপী ব্যবসা বাড়ানো সহজঃ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনি শুধুমাত্র স্থানীয় নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আপনার পণ্য বা সেবার প্রচার করতে পারবেন। এতে ব্যবসার পরিসর অনেক বেড়ে যায়।
৬. ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি পায়ঃ সঠিক কনটেন্ট, ভিডিও, গ্রাফিক্স, বিজ্ঞাপন ইত্যাদির মাধ্যমে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে মানুষের মাঝে আগ্রহ তৈরি করা যায়।
৭. প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভবঃ বর্তমানে প্রতিটি কোম্পানি অনলাইনে নিজেদের উপস্থিতি শক্তিশালী করছে। আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং না করেন, তাহলে প্রতিযোগীরা এগিয়ে যাবে, আর আপনি পিছিয়ে পড়বেন।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রধান উপাদানসমূহ
১. সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) ঃ SEO এর মাধ্যমে ওয়েবসাইটকে গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনে উপরের দিকে আনা হয়। এটি অর্গানিক বা ফ্রি ট্রাফিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
২. কনটেন্ট মার্কেটিংঃ লেখা, ভিডিও, ইনফোগ্রাফিক ইত্যাদি কনটেন্টের মাধ্যমে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা হয়। ভালো কনটেন্টই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রাণ।
৩. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (SMM)ঃ ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, লিঙ্কডইন, টুইটার ইত্যাদিতে পণ্যের প্রচার করা হয়। এতে ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস বাড়ে।
৪. ইমেইল মার্কেটিংঃ গ্রাহকদের ইমেইলের মাধ্যমে তথ্য বা অফার পাঠিয়ে বিক্রি বাড়ানো হয়।
৫. পেইড অ্যাডভারটাইজিং (PPC)ঃ Google Ads, Facebook Ads ইত্যাদির মাধ্যমে নির্দিষ্ট টার্গেট গ্রুপে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়।
৬. ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংঃ সেলিব্রিটি বা সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারের মাধ্যমে পণ্য বা সেবার প্রচার।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপকারিতা
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অনেক উপকারিতা রয়েছে, যা আধুনিক ব্যবসা এবং উদ্যোক্তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কিছু প্রধান উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
১. খরচ সাশ্রয়ী (Cost-Effective): প্রচলিত বিজ্ঞাপনের (যেমন টিভি, পত্রিকা, বিলবোর্ড) তুলনায় ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক কম খরচে বেশি মানুষকে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
২. লক্ষ্যভিত্তিক প্রচার (Targeted Advertising): ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট বয়স, এলাকা, আগ্রহ, আচরণ ইত্যাদি অনুযায়ী লক্ষ্যযুক্ত গ্রাহকদের কাছে সহজে পৌঁছানো যায়।
৩. ফলাফল পরিমাপযোগ্য (Measurable Results): Google Analytics, Facebook Insights ইত্যাদি টুল ব্যবহার করে আপনি সহজেই জানতে পারবেন আপনার প্রচারণা কতটা সফল হয়েছে।
৪. ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি (Brand Awareness): সোশ্যাল মিডিয়া, SEO, ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে সহজেই ব্র্যান্ডের পরিচিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানো যায়।
৫. বিশ্বব্যাপী দর্শক পর্যন্ত পৌঁছানো (Global Reach): ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও আপনার পণ্য বা সেবা প্রচার করতে পারেন।
৬. ২৪/৭ প্রচার (24/7 Marketing): ইন্টারনেট কখনো বন্ধ হয় না, তাই আপনার বিজ্ঞাপন এবং কনটেন্ট সারাক্ষণই দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে।
৭. গ্রাহকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ (Direct Customer Engagement): সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকের প্রশ্ন, মতামত বা সমস্যার উত্তর দিয়ে সম্পর্ক উন্নত করা যায়।
৮. দ্রুত রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট (ROI): সঠিক কৌশল ব্যবহার করলে ডিজিটাল মার্কেটিং খুব দ্রুতই বিনিয়োগের বিপরীতে ভালো রিটার্ন দেয়।
কম খরচে প্রচারণা: প্রথাগত মিডিয়ার তুলনায় অনেক কম খরচে প্রচার করা যায়। টার্গেট অডিয়েন্স নির্ধারণ: বয়স, অবস্থান, পছন্দ-অপছন্দ অনুযায়ী টার্গেট করা যায়। রেজাল্ট পরিমাপযোগ্য: বিজ্ঞাপনের ফলাফল রিয়েল-টাইমে দেখা যায়।২৪ ঘণ্টা মার্কেটিং: যেকোনো সময়, যেকোনো স্থান থেকে প্রচার সম্ভব।
ডিজিটাল মার্কেটিং এ ক্যারিয়ার গঠন করবেন কিভাবে
ডিজিটাল মার্কেটিং বর্তমানে ক্যারিয়ার গঠনের জন্য একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং-এ ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাহলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেনঃ
১. ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিনঃ প্রথমে জানতে হবে ডিজিটাল মার্কেটিং কী, এর শাখাগুলো কী কী। যেমন: SEO (Search Engine Optimization), SEM (Search Engine Marketing), SMM (Social Media Marketing), Content Marketing, Email Marketing, Affiliate Marketing, Web Analytics ইত্যাদি।
২. একটি নির্ভরযোগ্য কোর্স করুনঃ অনলাইনে অনেক ফ্রি এবং পেইড কোর্স আছে: Google Digital Garage (ফ্রি), HubSpot Academy, Coursera, Udemy, LinkedIn Learning, দেশীয় প্ল্যাটফর্মে যেমন Bohubrihi, 10 Minute School, CodersTrust ইত্যাদির কোর্স করতে পারেন।
৩. প্র্যাকটিক্যাল স্কিল ডেভেলপ করুনঃ শুধু থিওরি না, হাতে-কলমে কাজ শিখুন। নিজের একটা ব্লগ বা সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ খুলে প্র্যাকটিস করুন।
৪. সার্টিফিকেট সংগ্রহ করুনঃ Google, HubSpot, Facebook Blueprint এর মতো প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেট নিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়।
৫. ইন্টার্নশিপ বা ফ্রিল্যান্সিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করুনঃ অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইন মার্কেটিং ইন্টার্ন খোঁজে। পাশাপাশি Fiverr, Upwork, Freelancer.com-এ কাজ শুরু করতে পারেন।
৬. নিজেকে আপডেট রাখুনঃ ডিজিটাল মার্কেটিং প্রতিনিয়ত বদলায়, তাই নতুন টুলস, অ্যালগরিদম আপডেট, ট্রেন্ড সম্পর্কে জানতে থাকুন।
৭. নেটওয়ার্ক তৈরি করুনঃ LinkedIn-এ প্রোফাইল তৈরি করে প্রফেশনালদের সঙ্গে কানেক্ট করুন। ডিজিটাল মার্কেটিং গ্রুপে যুক্ত হন।
৮. বিশেষায়িত হন (Specialize)ঃ শুরুতে সবকিছু শিখলেও পরে এক বা দুইটি বিষয়ে এক্সপার্ট হওয়ার চেষ্টা করুন – যেমন কনটেন্ট মার্কেটিং বা SEO।
বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ক্যারিয়ার অপশন। নিচে কিছু চাহিদাসম্পন্ন পজিশনের নাম দেওয়া হলোঃ ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ, SEO স্পেশালিস্ট, কনটেন্ট মার্কেটার, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, ইমেইল মার্কেটিং এক্সপার্ট, গুগল অ্যাডস এক্সপার্ট।
ডিজিটাল মার্কেটিং সম্বন্ধে জানা-অজানা কিছু তথ্য
১. AI ও অটোমেশন ব্যবহারঃ বর্তমানে অনেক ডিজিটাল মার্কেটিং টুলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও অটোমেশন ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন: চ্যাটবট, অটোমেটিক ইমেইল রেসপন্স, কনটেন্ট জেনারেশন ইত্যাদি।
২. নেগেটিভ SEOঃ কিছু প্রতিদ্বন্দ্বী আপনার ওয়েবসাইটে ক্ষতি করার জন্য ভুল ব্যাকলিঙ্ক তৈরি করতে পারে। এটি নেগেটিভ SEO নামে পরিচিত।
৩. ভয়েস সার্চঃ “OK Google” বা “Alexa” দিয়ে সার্চের ব্যবহার বাড়ছে। তাই ভয়েস সার্চ ফ্রেন্ডলি কনটেন্ট তৈরি করাও গুরুত্বপূর্ণ।
৪. লোকাল SEOঃ লোকাল ব্যবসার জন্য গুগল মাই বিজনেস ও লোকেশন ভিত্তিক অপ্টিমাইজেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে শিখবেন
অনলাইন কোর্স: Udemy, Coursera, Google Digital Garage, Meta Blueprint ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে ভালো কোর্স আছে।
ইউটিউব ভিডিও: বাংলায় এবং ইংরেজিতে অসংখ্য ফ্রি টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়।
ইন্টার্নশিপ/প্র্যাকটিস: হাতে-কলমে শিখতে চাইলে কোনো ডিজিটাল এজেন্সিতে কাজ শুরু করা ভালো।
বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা
বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা বর্তমানে দ্রুতগতিতে বাড়ছে। প্রযুক্তির অগ্রগতি, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি, স্মার্টফোনের সহজলভ্যতা এবং অনলাইন ভিত্তিক কেনাকাটার প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ডিজিটাল মার্কেটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে পরিণত হয়েছে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা বৃদ্ধির কয়েকটি প্রধান কারণ: ১। ই-কমার্সের উত্থান: দারাজ, খাদ্যদিবো, চালডাল, শপআপ সহ বহু অনলাইন মার্কেটপ্লেস ও রিটেইলারদের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং অপরিহার্য।
২। ফেসবুক মার্কেটিং এর জনপ্রিয়তা: ফেসবুকে পণ্য বিক্রি ও ব্র্যান্ডিং করার ট্রেন্ড তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়েছে।
৩। ফ্রিল্যান্সিং ও গ্লোবাল মার্কেটপ্লেস: ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ ফাইভার, আপওয়ার্ক-এর মতো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মেও প্রচুর, যা বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের আগ্রহ বাড়াচ্ছে।
৪। বড় কোম্পানিগুলোর বাজেট স্থানান্তর: আগের মতো প্রিন্ট মিডিয়াতে না গিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের বিজ্ঞাপন বাজেট ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্যয় করছে।
৫। উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপ সংস্কৃতি: ছোট ব্যবসা ও স্টার্টআপরা কম খরচে টার্গেটেড কাস্টমারের কাছে পৌঁছাতে ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবহার করছে।
চাহিদা বাড়ার প্রেক্ষাপটে যেসব স্কিলের চাহিদা বেশি:সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO), গুগল অ্যাডস / ফেসবুক অ্যাডস, কনটেন্ট মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং, গ্রাফিক ডিজাইন ও ভিডিও এডিটিং (মার্কেটিং উপকরণ তৈরির জন্য)। বাংলাদেশে ই-কমার্স ও ফ্রিল্যান্সিংয়ের জনপ্রিয়তার কারণে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। অনেকে ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ করে মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন।
বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিং-এর ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিং-এর ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময়। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ও স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে, যার ফলে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা ও বিপণনের সুযোগ ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে।
নিচে বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:
১। ই-কমার্সের ব্যাপক প্রসারঃ দারাজ, আজকের ডিল, চালডাল, ফুডপান্ডা ইত্যাদি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো ডিজিটাল মার্কেটিং-এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত গ্রাহক আকৃষ্ট করছে। এই খাত দ্রুত বাড়ছে এবং এর সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল মার্কেটারদের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ
২। এসএমই ও স্টার্টআপদের ডিজিটাল রূপান্তরঃ ছোট ও মাঝারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো (SMEs) ধীরে ধীরে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আসছে। ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচার চালানোয় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে।
৩। ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং সুযোগঃ ডিজিটাল মার্কেটিং বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের অন্যতম একটি জনপ্রিয় স্কিল হয়ে উঠেছে। SEO, SMM, SEM, Email Marketing, Content Marketing ইত্যাদি কাজ করে অনেকেই বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন।
৪। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বৃদ্ধিঃ সরকারের LICT প্রকল্প, আইসিটি ডিভিশন, এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ সেন্টার ডিজিটাল মার্কেটিং শেখাতে উদ্যোগী হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎকে আরও শক্ত ভিত্তি দিচ্ছে।
৫। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও ৫জি ইন্টারনেটঃ ৫জি ইন্টারনেট চালু হলে আরও দ্রুতগতিতে ভিডিও মার্কেটিং, লাইভ স্ট্রিমিং, এবং ইন্টারঅ্যাকটিভ বিজ্ঞাপনের চাহিদা বাড়বে, যা ডিজিটাল মার্কেটিংকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটিং-এর ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি, ইন্টারনেট প্রবৃদ্ধি ও ব্যবসার ডিজিটাল রূপান্তরের উপর নির্ভর করে প্রতিনিয়ত বিকাশমান। তরুণদের জন্য এটি একটি বড় ক্যারিয়ার অপশন হতে পারে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়
প্রতিযোগিতা বাড়ছে: প্রতিদিন শত শত মানুষ এই পেশায় যোগ দিচ্ছে।
অপেশাদারিত্ব: অনেকেই পর্যাপ্ত জ্ঞান ছাড়া মার্কেটিং শুরু করে, যা ক্লায়েন্টের জন্য ক্ষতির কারণ হয়।
আপডেট থাকা: ডিজিটাল মার্কেটিং একটি দ্রুত পরিবর্তনশীল ক্ষেত্র, তাই আপডেট থাকা জরুরি।
সমাধান: নিয়মিত লার্নিং, প্র্যাকটিস ও সঠিক গাইডলাইন অনুসরণ করলেই সফলতা সম্ভব।
লেখকের মন্তব্য
ডিজিটাল মার্কেটিং বর্তমানে শুধু একটি মার্কেটিং কৌশল নয়, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্প। যারা এই ক্ষেত্রটিতে সঠিকভাবে দক্ষতা অর্জন করে, তারা শুধু চাকরি নয় বরং নিজের ব্যবসাও বড় করতে পারেন। তবে এর জানা-অজানা অনেক দিক সম্পর্কে সচেতন না থাকলে সফলতা পাওয়া কঠিন। তাই শিখুন, জানুন এবং কাজে লাগান ডিজিটাল মার্কেটিংকে নিজের জীবনের একটি সফল অস্ত্র বানিয়ে তুলুন।
আপনি এতক্ষন আমাদের এই ওয়েবসাইটের সাথে থেকে আমাদেরকে ধন্য করেছেন। আশা করি ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিভিন্ন বিষয় বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আরো যদি জানতে চান এই আর্টিকেলটি বারবার অধ্যায়ন করুন। আমরা নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ের উপর আর্টিকেল লিখে এই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করি। আপনি সেগুলি জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url